Adsterra

ধর্মীয় শিক্ষার অপরিহার্যতা

ধর্মীয় শিক্ষার অপরিহার্যতা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত করেছেন, Today Trending News, Today Viral News

মহান আল্লাহ মানব জাতিকে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি। (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭০) সুরা তীনে বলেছেন- আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠন-আকৃতিতে। (সুরা: তিন: ৪)


আল্লাহতায়ালা প্রতিটি প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন নিম্নমুখী করে। কেবল মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলম্বিত দেহ সোজা করে; যে নিজ হাতে আহার্য গ্রহণ করতে পারে। তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যথোপযোগী বানিয়েছেন। তাতে পশুর মতো বেমানান ও অসামঞ্জস্য নেই। নেই কোনো ব্যবধানও। বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা, বোধশক্তি, ধী-শক্তি, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। মানুষ আসলে মহান আল্লাহর কুদরতের প্রকাশস্থল এবং তাঁর শক্তিমত্তার প্রতিবিম্ব।


কিন্তু মানুষ আপন রবের প্রতি নিতান্তই অকৃতজ্ঞ। আমাদের জাগতিক জীবনের সমস্ত আয়োজন যিনি করে দিয়েছেন, তাঁর পরিচয় লাভ করার কোনো আগ্রহই আমাদের সৃষ্টি হয় না। জীবনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যায় জাগতিক জ্ঞান, সংসার, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরিতে। ধর্মীয় শিক্ষার্জনের প্রতি অনীহা বা অবহেলা কিংবা অনুকূল পরিবেশ না পাওয়া ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কারণে আমাদের এই নাজুক অবস্থা।


মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য: পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণিজগত থেকে মানবজাতির স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে; যা মানুষকে মহিমান্বিত করে তুলেছে এবং অন্যদের মাঝে বিশেষ মর্যাদা দান করেছে। অন্যান্য প্রাণী শুধু তাদের জীবন ও প্রাণ রক্ষার তাগিদে নিজের সমস্ত চেষ্টা ও শ্রম ব্যয় করে। জীবন ধারণের এ সহজাত বোধ ও প্রবণতাকে কেন্দ্র করে তাদের রাত-দিনের সমস্ত ব্যস্ততা। তাদের জীবন থাকে নির্দিষ্ট স্বভাবের গণ্ডিতে বাঁধা, যার বৃত্ত থেকে কখনো তারা বের হতে পারে না। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু মানুষ এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, সম্পূর্ণ আলাদা। তারা কেবল প্রাণরক্ষা ও জীবন ধারণের তাগিদে বেঁচে থাকে না। বরং তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো এক আল্লাহর ইবাদত। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে একমাত্র তার দাসত্বের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।


ইরশাদ হয়েছে- ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।’ (সুরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৬)


উপরিউক্ত আয়াতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর হুকুম কায়েম করার লক্ষ্যেই মানব জাতির সৃষ্টি হয়েছে। অতএব মুমিন বান্দার মূল দায়িত্ব হলো তাঁর দাসত্বে নিজেকে আত্মনিয়োগ করা। কেননা আল্লাহ তায়ালার হুকুম মানব জীবনের সমস্ত অঙ্গনজুড়ে পরিব্যাপ্ত। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন- সবকিছুতেই রয়েছে আল্লাহ তায়ালার হুকুম। একজন প্রকৃত মুমিন জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই আল্লাহর হুকুম লঙ্ঘন করতে পারে না। বরং কোন ক্ষেত্রে আল্লাহর কী আদেশ ও কী নিষেধ তা জানা একজন মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। আর এ কর্তব্য পালনার্থেই প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা। প্রয়োজনীয় দ্বীনি ইলম অর্জন করাও ইমানের একটি শাখা।


কোরআন ও হাদিসে ইসলামী শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে জোরালো তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম শিক্ষা গ্রহণের অপরিহার্যতার বিষয়টি সুস্পষ্ট করে গেছেন। একজন মুসলিম ব্যক্তির জন্য ইসলামী জ্ঞান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ গিফট এবং তাঁর একান্ত রহমতও বটে। এর মাধ্যমে মানুষ জাগতিক কল্যাণ হাসিল করে। পাশাপাশি মূর্খতা থেকে বাঁচতে পারে। আলোর সন্ধান খুঁজে পায়। ইসলাম শিক্ষা মানুষকে পথভ্রষ্টতা উদ্ধার করে সিরাতে মুস্তাকিমের পথে পরিচালিত করে। একমাত্র ইসলাম শিক্ষাই মানব সভ্যতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সম্পর্কের মূল উপাদান হলো এই ইসলামী শিক্ষা। কিন্তু অত্যন্ত আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো, বর্তমান যুগে মানুষের মাঝে ইসলামী শিক্ষার প্রতি বিতৃষ্ণা ও অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে, যার ফলে অনেকে মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা ও নামাজ-রোজার মতো মৌলিক ইবাদত-বন্দেগির ব্যাপারে বিলকুল অজ্ঞ। ইসলামী স্কলাররা এ জন্য দায়ী করেন আধুনিক যুগের মানুষের জীবনাচার ও মাতা-পিতার ইসলামী শিক্ষার ব্যাপারে উদাসীনতাকে। কারণ তারা ইসলামী শিক্ষা উপেক্ষা করে পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে নিজেদের লাইফস্টাইল হিসেবে গ্রহণ করে, ফলে তাদের কোমলমতি শিশুরা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।


মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহ আমাদের ইসলামী শিক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের প্রায় ৭৮ হাজার শব্দের মধ্য হতে সর্বপ্রথম যে শব্দটি নবিজি (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে, তা ছিল ‘ইকরা’ অর্থ পড়ো। আর পবিত্র কোরআনের ৬২৩৬টি আয়াতের মধ্য হতে সর্বপ্রথম ৫টি আয়াতের মাঝে কলম ও ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য প্রতিভাত হয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, স্বয়ং মহান আল্লাহ নবী করিম (সা.)-এর উম্মাহর ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষের রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো, তোমার মহা সম্মানিত, যিনি শিখিয়েছেন কলমের মাধ্যমে। তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন, যা তারা জানত না। (সুরা আলাক: ১-৫)


সুরা আলাকের এই প্রাথমিক পাঁচটি আয়াতের মাধ্যমে পবিত্র কোরআনের অবতরণ শুরু হয়েছে। মহান আল্লাহ ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের প্রতি তাগিদ দিয়ে এ পাচঁটি আয়াতের মাঝে দু’বার বলেছেন- ‘পড়ো’, প্রথমত তিনি দ্বীনি ইলম অর্জনের নির্দেশ প্রদানের পাশাপাশি নিজের সৃষ্টিক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। এতে প্রতীয়মান হয় যে, একজন মুসলিম ব্যক্তির অভীষ্ট লক্ষ্যই ধর্মীয় জ্ঞানার্জন। দ্বিতীয়ত, তিনি ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের কথা উল্লেখ করেছেন। যাতে প্রতীয়মান হয়, কোনো মুসলিম যদি ইহকালীন ও পরকালীন সম্মান, কল্যাণ এবং সমৃদ্ধি কামনা করে, তবে সে যেন ধর্মীয় জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগ করে।


ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমরা আল-ফারুক (রা.) বলেন- ‘নেতৃত্ব লাভের পূর্বে দ্বীনের বুৎপত্তি অর্জন করো।’ ইমাম বুখারি (রা.) এ প্রেক্ষিতে বলেন- তোমরা নেতৃত্ব প্রাপ্তির পরও দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করো। কেননা মহানবী মুহাম্মদ (সা.) সাহাবিরা বৃদ্ধ হয়েও দ্বীনের জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগ করেছেন। (সহিহ বুখারি: ১/১২৯)


সুতরাং এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আল্লাহর প্রথম নির্দেশনা। প্রকৃতপক্ষে ধর্মীয় জ্ঞান মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। পাশাপাশি সম্মান ও মর্যাদার এক শক্তিশালী বুনিয়াদ। এর দ্বারা প্রকৃত অর্থে একজন মুসলিম দুনিয়ার কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব লাভের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।


ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের অপরিহার্যতা: ইসলামী শরিয়তে ধর্মীয় শিক্ষাকে ঐচ্ছিক নয়; বরং অপরিহার্য বলে অভিহিত করা হয়েছে। রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন- ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর ফরজ। (সহিহুল জামে, হাদিস নং: ৩৯১৪)


ধর্মীয় জ্ঞানার্জন দুইভাবে ফরজ। একটি ফরজে কিফায়া, অপরটি ফরজে আইন। ইসলামী শরিয়াহ হেফাজতের লক্ষ্যে কোরআন-হাদিস, ইজমা-কিয়াস, ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস ও বিধি-বিধানের বিস্তারিত ইলম-জ্ঞান শিক্ষা করা এবং শিক্ষা দেওয়া উম্মতের মুসলিমাহর ওপর ফরজে কেফায়া। আরও সহজভাবে যদি বলা হয়, এমন কিছু আলেম-ওলামা তৈরি করা, যারা ইসলামী শরিয়াহ হেফাজত করবে এবং ইসলামের বিধিবিধান জনসাধরণের কাছে পৌঁছে দেবেন। হকের মাধ্যমে বাতিলকে প্রতিহত করবেন। সমাজ বা রাষ্ট্রের নির্দিষ্টসংখ্যক ব্যক্তি ফরজে কেফায়ার ইলম অর্জন করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়। যেমনটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের আলেমরা নিরলসভাবে এ মহান দায়িত্ব পালন করে আসছেন।


পক্ষান্তরে ইসলামের অনুসরণ করার জন্য আবশ্যক পরিমাণ ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর ফরজ। এটাই ফরজে আইন। অর্থাৎ ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস ও বিধিবিধানের এ পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করা ফরজ, যে পরিমাণ অর্জন না করলে ইমান, সালাত, জাকাত, রোজাসহ ইসলামের মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস ত্রুটিপূর্ণ থেকে যায়। কারণ ফরজ পরিমাণ ইলম ছাড়া কোনো ফরজ ইবাদত করা সম্ভব নয়।


ইসলাম যে প্রকৃতির জ্ঞানার্জনকে অপরিহার্য সাব্যস্ত করেছে, তা হলো দীনের জ্ঞান, পরকালের জ্ঞান। ইসলাম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি দুনিয়ার শিক্ষায় যত বড় পণ্ডিতই হোক না কেন শরীয়তের দৃষ্টিতে সে একজন মূর্খ। কেননা একমাত্র ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যক্তি তার স্রষ্টা ও রবের সঙ্গে পরিচয় লাভ করে। নিজের মনো-মস্তিষ্কে বিশুদ্ধ আকিদা ও মার্জিত চিন্তা-চেতনার স্ফূরণ ঘটে এই ইসলামী শিক্ষার ফলেই। নিজের কর্মকাণ্ড ও জীবন পরিচালিত হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি মোতাবেক। আমাদের সামগ্রিক কল্যাণ, চিরস্থায়ী মুক্তি এবং মর্যাদা লাভের পথ ও পন্থা হলো সিরাতে মুস্তাকিমের ওপর অবিচল থাকা আর এই সিরাতে মুস্তাকিমের রোডম্যাপ হলো ইসলামী শিক্ষা। কোরআন ও হাদিসের যেসব স্থানে ‘ইলম’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তাফসিরবিদদের মতে, সে সকল জায়গায় দ্বীনের জ্ঞান-উদ্দেশ্য, যার সম্পৃক্ততা কোরআন, হাদিস ও ফিক্হের জ্ঞান সম্পর্কে জানা এবং বোঝার সাথে।


আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন- প্রত্যেক মুমিনের এ পরিমাণ ইলম-জ্ঞান অর্জন করা ফরজ যার মাধ্যমে সে রোজা, সালাত, হারাম-হালাম ও শরয়ী দণ্ডবিধি সম্পর্কে জানতে পারে। (আলফাকিহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ: ১/১৬৮)


ইসহাক ইবনে রাহ্ওয়াই (রা.) বলেন- প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য এ পরিমাণ ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য, যা জানা ব্যতীত বিশুদ্ধভাবে ফরজ ইবাদত পালন করা সম্ভব নয়। যেমন অজু এবং নামাজের মাসআলা-মাসাইল ইত্যাদি। তদ্রূপ যে ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ, হজ ফরজ তার জন্য জাকাত এবং হজের জরুরি মাসআলা জানাও ফরজ।

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.