Adsterra

কর্মচারী থেকে জমিদার হয়ে উঠার গল্প

ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news, Slider,ইতিহাস,বাংলাদেশ, জমিদার বাড়ি,

কর্মচারী থেকে জমিদার হয়ে উঠার গল্পমুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। মুড়াপাড়া, রুপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।

ইতিহাস খোঁজ করে জানা যায়, জমিদার বাবু রাম রতন ব্যানার্জী তৎকালীন মুড়াপাড়া জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং জমিদারদের ঊর্ধ্বতন ষষ্ঠ পুরুষ। তিনি ছিলেন নাটোরের রাজার এক বিশ্বস্ত কর্মচারী। তার সততার পুরস্কার হিসেবে তিনি মুড়াপাড়া এলাকায় বেশকিছু জায়গির সম্পত্তি লাভ করেন।
বাবু রাম রতন ব্যানার্জী মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন।বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এই জমিদার বাড়ির কর্তা ব্যক্তিদের সম্পর্কে যা জানা যায়- রাম রতন ব্যানার্জীর পুত্র পিতাম্বর ব্যানার্জী এবং তৎপুত্র প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জী শাহজাদপুরের জমিদারি ক্রয় করে জমিদারি বর্ধন করেন। কথিত আছে, জমিদারি ক্রয় সূত্রে প্রতাপ ব্যানার্জীর সঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল। ১৮৮৯ সালে প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পৈতৃক এজমালি পুরনো বাড়ি ত্যাগ করে আলোচ্য এ প্রাসাদের পেছনের অংশ নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন।
শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন এবং কলেজ বন্ধ থাকায় পিছনের অংশে যাওয়া সম্ভব হয়নি।যদিও এর আগে একবার এখানে এসে সম্পূর্ণ বাড়িটা দেখা হয়েছিল।
প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জীর পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ সালে প্রাসাদের সম্মুখ অংশের একতলা ভবন নির্মাণ ও সেখানে ২টি পুকুর খনন করার পর হৃদরোগে মারা যান।সামনের পুকুরটি বেশ সুন্দর সেখানে চারদিকে চারটি ঘাটলা আছে।ইতিহাস থেকে জানা যায় এই প্রতাপ চন্দ্র ব্যানার্জী ছিলেন এ অঞ্চলের প্রথম গ্র্যাজুয়েট। বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জীর দুই সুযোগ্য পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জী ১৯০৯ সালে প্রাসাদটির দোতলার কাজ সম্পন্ন করেন।
৪০ একর জমিতে ৯৫টি কক্ষ বিশিষ্ট বিশালাকার দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রাচীন জমিদারদের রাজকার্যসহ বিভিন্ন কাজে এসব কক্ষ ব্যবহার করা হতো। আনন্দ উল্লাসের জন্য ছিল নাচঘর, পূজা-অর্চনার জন্য মন্দির, রাজকার্য পরিচালনার জন্য রাজকক্ষ, অতিথিশালা, কাচারি ঘর, বৈঠকখানা ইত্যাদি।
সদর দরজার সামনে দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। সে সময় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল নৌ-পথ। আর এই নৌ পথকে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম রেখেইবাড়িটি নদীর তীর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছিল। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা দুই তলা একটি দালানকে কেন্দ্র করে বিশাল আয়তনের এই বাড়ি।
বাড়ির সম্মুখ ভাগের পুকুরের সামনে বিশাল মাঠ,সেই মাঠের এক কোনায় দুটি মন্দির।একটি মন্দিরে গায়ে নিম্নোক্ত লেখাছি আছে-
নম শিবায়া
বিখ্যাতে বন্দ্যবংশে ভূৎ রামরত্বো দ্বি জাগ্রনীঃ।।
পীতাম্বর সুতন্তস্য তারিণী গর্ভ সম্ভবঃ নবদুর্গেতি তস্যাসীৎ পত্নী ধর্ম পরায়ণা প্রতাপচন্দ্র ন্তত পুন্ত্রস্তেন পিত্রোর্বিমুক্তয়ে।।
নবলক্ষ্যা সমং পত্ন্যা শাকে রুদ্রেন্দ্র সম্মিতো স্থাপিতো নবরত্নেস্মিন নবদুর্গেশ্বরো হরঃ।।
এই মন্দির দ্বয়ের পিছনে বিশাল শতবর্ষী আম বাগান।
এ অঞ্চলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর নাম সমধিক প্রসিদ্ধ। কারণ তিনি দু’বার দিল্লির "কাউন্সিল অব স্টেট"র পূর্ববঙ্গ থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জমিদার জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী প্রজা সাধারণের কল্যাণসাধনের জন্য স্থাপন করেছেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও পুকুর। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন জমিদার জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী সপরিবারে কলকাতায় চলে যান। ফলে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জীর প্রতাপশালী সেই রাজবাড়িটি বিরান হয়ে যায়।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জগদীশ ব্যানার্জী এ দেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান এবং বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন সরকার বাড়িটি দখলে নেন। এখানে হাসপাতাল এবং কিশোরী সংশোধন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে স্কুল এবং কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটির দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
বর্তমানে এটি সরকারি মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামে পরিচিত। কালের বিবর্তনে জমিদার বাড়িটি আজ শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। 

No comments

Powered by Blogger.