Adsterra

বাইডেন বনাম ট্রাম্প: কে কতটা এগিয়ে


বাইডেন বনাম ট্রাম্প: কে কতটা এগিয়ে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, এবারের ভোটে ট্রাম্পকে অনেকে এগিয়ে রাখতে চাইছেন, Today Trending News, Today Viral News

চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন হিসাবনিকাশ কষে কেউ এগিয়ে রাখছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে, কেউ-বা রিপাবলিকান দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। উভয় প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন চূড়ান্ত ফলাফলের মুখ দেখবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনও বলা হচ্ছে, ট্রাম্পকে খুব সহজেই ধরাশায়ী করা যাবে না! আসন্ন নির্বাচন কেন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে চলেছে, এই লেখায় তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে।


শুরুতেই বলে রাখা দরকার, এবারের নির্বাচন এক অর্থে চমক জাগানিয়া হতে চলেছে। শেষ পর্যন্ত যদি জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পই নিজ নিজ দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়ে ভোটের মাঠে অবতীর্ণ হন, তাহলে তা হবে ইতিহাস! এর কারণ, দুই প্রেসিডেন্টের এভাবে মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা সবশেষ ঘটেছিল ১৯৫৬ সালে। শুধু তা-ই নয়, ১৮৯২ সালের পর আবারও বর্তমান ও সাবেক প্রেসিডেন্টকে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে দেখা যাবে।


এবারের ভোটে ট্রাম্পকে অনেকে এগিয়ে রাখতে চাইছেন। এর পেছনে যুক্তিযুক্ত কারণও আছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে যে ভোটযুদ্ধ হয়, তাতে নির্বাচনের আগে ট্রাম্পকে নিয়ে এতটা ভাবতে হয়নি বাইডেনকে। তবে হিসাব যেন এবার কিছুটা হলেও উলটো কথা বলছে! অনেকে মনে করছেন, নির্বাচনে বিজয় লাভ করার প্রশ্নে বেশ কঠিন রাস্তাই পার হতে হবে বাইডেনকে।


যদি বাস্তবচিত্রের ভিত্তিতে কথা বলতে হয়, তাহলেও উভয় প্রার্থীকেই এগিয়ে রাখতে হয়! বিভিন্ন জরিপ বা পরিসংখ্যানের খবর অনুযায়ী, বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা ‘ফিফটি ফিফটি’। একইভাবে ট্রাম্পও আটকে আছেন পথের মাঝবরাবর। বরং কোনো কোনো বিশ্লেষক দাবি করছেন, বাইডেনের ভক্ত-সমর্থকদের মাথায় রাখতে হবে, ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফেরার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।


ট্রাম্পের আবারও হোয়াইট হাউজে ফেরার সম্ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই বইকি। অতি সম্প্রতি প্রকাশিত নির্বাচনি জরিপের দিকে দৃষ্টি দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিবিএস নিউজ, ফক্স নিউজ কিংবা দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল যেসব সমীক্ষা চালিয়েছে, তাতে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এসব সমীক্ষায় অন্তত দুই থেকে চার পয়েন্টের ব্যবধানে বাইডেনকে পেছনে ফেলেছেন ট্রাম্প। কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন বাইডেনও। তবে জয়ের পাল্লা ঝুলে আছে ট্রাম্পের দিকেই।


বিভিন্ন মাধ্যমে চালানো জরিপ-সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই যে চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারিত হবে, তেমনটা নয় স্বাভাবিকভাবেই। সমীক্ষায় সত্যিকার অর্থে নানা ধরনের ত্রুটিবিচ্যুতি থেকেই যায়। তবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এবারই সম্ভবত বাজে অবস্থায় রয়েছেন বাইডেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ২০২০ সালের নির্বাচনে জরিপে ইলেক্টোরাল ভোটে এগিয়ে থাকা বেশ কিছু রাজ্য এবার বাইডেনের হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


কিছু রাজ্যে বাইডেনের ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। অথচ চার বছর আগের ভোটে এসব রাজ্যে ট্রাম্পকে খুব সহজেই টপকে গিয়েছিলেন তিনি। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া ও নেভাডা রাজ্যের কথা এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়। এ রাজ্যগুলোতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রাইমারি ভোটে পাঁচ পয়েন্ট কিংবা তারও বেশি পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন বাইডেন।


লক্ষ করার বিষয়, নেভাদা রাজ্য ২০০৪ সাল থেকেই ডেমোক্রেটিক দলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে অভিহিত হয়ে আসছে। কোনো ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকেই নেভাদায় পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়নি। অথচ এবার বাইডেন এই রাজ্যে হেরেছেন।


বাইডেনের জন্য আরেক সমস্যা হলো মিশিগান রাজ্য। এখানেও পিছিয়ে আছেন তিনি। সিএনএনের চালানো জরিপের ফলাফলে ট্রাম্পের চেয়ে চার পয়েন্টে পিছিয়ে রয়েছেন তিনি।


সমীক্ষায় বা প্রাইমারি ভোটে বাইডেন বিভিন্ন রাজ্যে পিছিয়ে রয়েছেন বা পড়ছেন বটে, তবে বাস্তবতা হলো, নির্বাচনের এখনো লম্বা সময় বাকি। আজ বা কাল ভোট হয়ে যাচ্ছে, এমন নয়। সহজ করে বললে, আগামী আট মাসে সমীকরণ ওলটপালট হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।


সত্যি বলতে, বাইডেনের জায়গায় যদি আমি থাকতাম, তাহলে জরিপ-সমীক্ষা বা পরিসংখ্যান থোড়াই কেয়ার করতাম! এর কারণ, ঘোড়দৌড় রেসের মতো টানটান উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত এখনো আসেনি। খেলা এখনো বহু বাকি! বেশির ভাগ আমেরিকান মনে করেন, অর্থনীতি এবং অভিবাসন—আগামী আট মাস এই দুই ইস্যু ভালোভাবে সামলাতে পারলেই বাইডেন শিবির পুরোদমে চাঙ্গা হয়ে উঠবে। কোনো সন্দেহ নেই, এই দুই বিষয়ের উত্তরণে ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেনই বেশি পারদর্শী। অর্থাত্, এসব ক্ষেত্রে বাইডেন যদি আরো জুতসই সমাধানের রেখা টানতে পারেন, তাহলে ট্রাম্প পড়ে যাবেন বহু পেছনে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ে আগে থেকে নিশ্চিত করে বলাটা কঠিনই।


বাইডেনের দুশ্চিন্তার আরো কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যারা নতুন মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের সঙ্গে তুলনা করলেও বাইডেন পেছনে পড়ে যাচ্ছেন। এই মুহূর্তে তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদনের রেটিং ৪০ শতাংশের ঘরেই ওঠানামা করছে। এর আগে এ ধরনের তুলনামূলক কম রেটিং যাদের ছিল, তারা ভোটে পরাজিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প হেরেছেন কম রেটিং নিয়ে। একইভাবে পরাজিত হন জর্জ এইচডব্লিউ বুশ।


ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা যুক্তি দিতে চাইবেন, আমি কেবল বাইডেনের রেটিং নিয়েই পড়ে আছি কেন? তারা প্রশ্ন তুলবেন, বাইডেনের মূল প্রতিপক্ষ ট্রাম্পও তো ভালো রেটিংয়ে নেই। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তাও তো তলানিতে ঠেকেছে। সত্যি বলতে, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বটে। তবে যেমনটা বলা হয়েছে ওপরে—ফক্স নিউজ, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক জরিপে ট্রাম্পের রেটিং বাইডেনের চেয়ে কয়েক পয়েন্ট হলেও বেশি।


নির্বাচনি প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার রেটিং বাড়া-কমাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে আগামী আট মাসে বাইডেনের রেটিং বেড়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। অবশ্য সেক্ষেত্রে তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।


মজার ব্যাপার হলো, এই নির্বাচনে উভয় দলের প্রার্থীকে নিয়েই নানা ধরনের কথা হচ্ছে। এই অর্থে বলা যায়, ২০২০ সালে আমরা যা দেখেছি, তার থেকে ’২৪-এর নির্বাচন আলাদা হতে চলেছে। ৫ শতাংশ ভোটার বাইডেন বা ট্রাম্প—কাউকেই সমর্থন করেন না বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। এর চেয়ে বড় কথা, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেসব মামলা চলছে, তাতে দোষী সাব্যস্ত হলে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন কমে যাওয়ার জোর আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি নির্বাচনে ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বিতার যোগ্য থাকবেন কি না, তা নিয়েও চূড়ান্ত কথা শোনা যায়নি। ফলে নির্বাচনে এখনো অনেক কিছু ঘটা বাকি আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, বেশির ভাগ সম্ভাব্য ভোটার (৫৩ শতাংশ) মনে করেন, ট্রাম্প গুরুতর ফেডারেল অপরাধ করেছেন। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এই ভোটাররাই প্রাইমারি ভোটে ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন। এ ধরনের পরিসংখ্যান বাইডেন-সমর্থকদের হতাশ করবে স্বভাবতই। অনেক ভোটার মনে করেন, ট্রাম্প গুরুতর ফেডারেল অপরাধ করেছেন বটে, কিন্তু তাকে ভোট না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।


কোটি টাকার প্রশ্ন হলো, বাইডেন এ ধরনের মনোভাবসম্পন্ন ভোটারের মন জিতবেন কী করে? বাইডেন সমস্যায় পড়েছেন আরেক ক্ষেত্রে। এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ৭২ শতাংশ ভোটার মনে করেন, বাইডেন বেশি বয়স্ক। কার্যকর প্রেসিডেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে তিনি একটু বেশিই বয়স্ক হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে, ৫৩ শতাংশ ভোটারের মত, ট্রাম্প গুরুতর ফেডারেল অপরাধ করলেও তাকে ভোট দেওয়া উচিত।


এই যে ব্যবধান গড়ে দিচ্ছেন ভোটররা, এতে করে বাইডেনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্পই। তবে শেষ হাসি কে হাসবেন, তা জানতে এখনো অপেক্ষা করতে হবে আট মাস।

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com 

No comments

Powered by Blogger.