হরিচরণ রায় জমিদার বাড়ি
হরিচরণ রায় জমিদার বাড়ি।
শ্যামনগর,সাতক্ষীরা।জমিদার হরিচরণ রায় ধনী হওয়ার পেছনে লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে তার মা ঘুমের মধ্য স্বপ্নে বস্তা বস্তা টাকা বা গুপ্তধনের সন্ধান পেতেন।(সঠিক কোন প্রমাণ নেই ) আর এই থেকেই হরিচরণ অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক হন। তখন থেকে সূর্যাস্ত আইনের মাধ্যমে নিলামে উঠা চৌহার্দিগুলো তিনি কিনে নিতেন। যার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে তিনি একজন স্বতন্ত্র জমিদার হয়ে উঠেন। এই কথা গুলো সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঐতিহাসিক নকিপুর জমিদার বাড়ির জমিদার হরিচরণ সম্পর্কে লোককথা।এই জমিদার বাড়িটি কয়েকটি নামে পরিচিতি-
• নকিপুর জমিদার বাড়ি।
• শ্যামনগর জমিদার বাড়ি।
• রায় চরন জমিদার বাড়ি।
• হরিচরণ রায় জমিদার বাড়ি।
একসময়ের জৌলুসে পরিপূর্ণ বাড়িটি এখন ভূতুড়ে বাড়িতে পরিনত হয়েছে।বাড়িটির দেয়ালে জন্ম নিয়েছে আগাছা ছোট বড় অনেক বটবৃক্ষ মনে হচ্ছে হর্টিকালচার।জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরী ১৮৮৮ সালে ৪১ কক্ষের তিনতলাবিশিষ্ট এল প্যার্টানের এই বাড়িটি নির্মাণ করেন।দেড়শত বছর আগে নির্মাণ করা সেই বাড়িটি এখন গবাক্ষের রুপ নিয়েছে।দরজা জানালা সব বেহাত হয়ে গিয়েছে।নোনা ধরেছে পুরো দেয়াল জুড়ে অনেক জায়গায় তো দেয়াল খসে পরেছে কোন কোন জায়গায় ছাদের অস্থিত্বটুকু নাই।
প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমির উপর তিনি এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন।যার বাউন্ডারি ছিল প্রায় দেড় হাত চওড়া প্রাচীর দ্বারা সীমাবদ্ধ। সদর পথে ছিল একটি বড় গেট বা সিংহদ্বার। সম্মুখে ছিল একটি শান বাঁধানো বড় পুকুর। শতাধিককাল পূর্বে খননকৃত এই পুকুরটিতে সারাবছরই পানি থাকে এবং গ্রীষ্মের দিনে প্রচন্ড তাপদাহে তা শুকায় না। পুকুরঘাটের বাম পাশে ছত্রিশ ইঞ্চি সিঁড়ি বিশিষ্ট দ্বিতল নহবত খানা। আটটি স্তম্ভ বিশিষ্ট এই নহবত খানার ধ্বংসাবশেষটি এখনও প্রায় অক্ষত অবস্থায় দন্ডায়মান থেকে কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। ইতিহাস থেকে আরো জানা যায় যে - দক্ষিণবঙ্গের প্রতাপশালী শাসক রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট এলাকায়। রাজা প্রতাপাদিত্যের পরে হরিচরণ রায় চৌধুরী ছিলেন শ্যামনগর অঞ্চলের প্রভাবশালী ও বিত্তশালী জমিদার।
আরো পড়ুন কর্মচারী থেকে জমিদার হয়ে উঠার গল্প
তার এই জমিদার বাড়িটি সম্পর্কে যেই তথ্য পাওয়া গেছে তা হলো-
জমিদার বাড়িটি ছিল সত্তর গজ লম্বা, তিন তলা বিশিষ্ট ভবন। সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই সম্মুখে সিঁড়ির ঘর। নিচের তলায় অফিসাদি ও নানা দেবদেবীর পূজার ঘর, এছাড়া আরও দুইটি গমনাগমন সিঁড়ি পথ। মাঝের তলায় কুল দেবতা গোপাল দেবের মন্দির ও অতিথি শালা। সিঁড়ির দু’পাশে কক্ষ ছিল এবং সিঁড়ি ছিল মধ্যবর্তী স্থানে। নিচের তলায় ১৭টি এবং উপরের তলায় ৫টি কক্ষ ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। ছোট, বড়, মাঝারি সব রকমের কক্ষ ছিল।
প্রথমবার ঢুকলে কোন দিকে বহির্গমন পথ তা বোঝা বেশ কষ্টদায়ক ছিল। চন্দন কাঠের খাট-পালঙ্ক, শাল, সেগুন, লৌহ কাষ্ঠের দরজা-জানালা ও বর্গাদি, লোহার কড়ি, ১০ ইঞ্চি পুরু চুন-সুরকির ছাঁদ, ভিতরে কক্ষে কক্ষে গদি তোষক, কার্পেট বিছানো মেঝে, এক কথায় জমিদার পরিবেশ, যেখানে যেমনটি হওয়া দরকার তার কোন ঘাটতি ছিল না।১৯১৫ সালে জমিদার হরিচরণ মারা গেলে তার জমিদারির ভার পড়ে দুই ছেলের ওপর। ১৯৩৭ ও ১৯৪৯ সালে দুই ছেলে মারা যান। এরপর ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটে। তখন জমিদারের বংশধর তাদের সম্পত্তি রেখে ১৯৫৪ সালে ভারতে পাড়ি জমান।
এই হলো ঐতিহাসিক এক জমিদার বাড়ির গল্প।
১৯৫৪ সালের জমিদার পরিবার এখান থেকে স্ব-পরিবারে ভারতে চলে যায়।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments