দীর্ঘ পোস্টে আম্মান সিদ্দিকী বললেন - সবাই আমার দিকটাও ভাববেন
গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকা। আত্মহত্যা চেষ্টার পূর্বে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন তিনি।
তবে অবন্তিকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। অবন্তিকার মৃত্যুর পর আম্মান সিদ্দিকী নিজের ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেখানে নিজের অবস্থান সম্পর্কে তুলে ধরেন আম্মান। একইসঙ্গে অবন্তিকার মৃত্যুর সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও দাবি করেন।
দীর্ঘ পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি ফাইরুজ সাদাফ অবন্তীর মর্মান্তিক মৃত্যুতে। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন। এবারে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সকলের কাছে অনুরোধ করবো পুরো ব্যাপারটা একটা ফেসবুক পোস্ট দিয়ে শুধু জাজ না করে ঘটনার আদ্যোপান্তটা জানার জন্য।
ঘটনার সূত্রপাত ০৪.০৮.২০২২ সালে। একটা ফেইক আইডি থেকে আমাদের ১৪ জন শিক্ষার্থীর নামে গুজব ছড়িয়ে কয়েকজন বন্ধুদের কাছে পাঠানো হয়। যেখানে আমার নামেও অনেক মিথ্যা অপবাদ মূলক কথা ছিল। এমনকি অবন্তীর নিজের নামও সেই টেক্সটের মধ্যে ছিল।
যখন এমন ম্যাসেজ সামনে আসলো আমি সবাইকে নিয়ে কোতোয়ালি থানায় যায়। সেখানে অবন্তী নিজেও উপস্থিত ছিলো। পরবর্তী জিডি করা হয়। এবং জিডি করে ফেরার সময় অবন্তী স্বীকার করে যে ওই ফেইক আইডিটা সে নিজে খুলেছে। এবং অন্য একটি মেয়েকে ফাঁসানোর জন্য সে এই কাজটি করেছে।
আরো পড়ুন আম্মান-দ্বীন ইসলাম ছাড়াও যাদের দায়ী করলেন অবন্তিকার মা
পরবর্তী দিন এস আই রুবেলকে, আইও (কোতোয়ালি থানা) আমরা জানাই যে আমাদেরই এক ফ্রেন্ড ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এস আই রুবেল আমাদের থেকে অবন্তীর আম্মুর ফোন নাম্বার নিয়ে কল করেন। কল ধরেন অবন্তীর বাবা। সেখানে এস আই রুবেল ভাই আঙ্কেলকে বলেন আপনার মেয়ের বন্ধুদের মধ্যেই যেহেতু বিষয়টি ঘটেছে সেহেতু নিজেরা বসে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মাধ্যমে সমাধান করে ফেলেন।
আমরা সবাই যেহেতু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেতু প্রক্টর স্যারের কাছেও আমরা ব্যাপারটা অবহিত করি যাতে অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে যেন প্রক্টরিয়াল বডি বিষয়টা সম্পর্কে অবগত থাকেন।
অবন্তী এই ঘটনার আগ পর্যন্ত আমার বা আমাদের বেশ ভালো বন্ধুই ছিল। যাই হোক, প্রক্টর অফিস থেকে ওর পরিবারের কাছে চিঠি যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তীর বাবা মা ক্যাম্পাসে আসেন। প্রক্টরিয়াল তদন্ত কমিটির সামনে পুরো ঘটনার বিস্তারিত স্বীকার করে অবন্তী এবং একটা মুচলেকা দেয়। সেই দিনই অবন্তীর আম্মা আমাদের সবার সাথে বাইরে এসে কথা বলেন এবং বলেন ভালোভাবে বাকী সময়টা যেন আমরা মিলে মিশে পার করি। উনি ওইদিন আমাদের সবাইকে কেকও কিনে খাওয়ান।
তার পরবর্তী সময়ে আমি অবন্তীকার সাথে কোনো কথা বলি নি। আর ফেসবুকে তার সাথে আমার তারপর থেকে কোনো যোগাযোগই হয়নি। এমনকি তার সাথে আমার ওই ঘটনার পরে কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়নি।
এবার আসি আমার জায়গা উপস্থাপনে। যারা পোস্টটি পড়ে একতরফা চিন্তা করছেন তারা একটু ঠান্ডা মাথায় এটা পড়বেন। একজন মারা গেছে তার জন্য দুঃখ পাওয়াটা অবশ্যই যৌক্তিক এবং স্বাভাবিক। আমি নিজেও ব্যথিত এবং মানতে কষ্ট হচ্ছে যে এমন একটা তুচ্ছ ঘটনাকে মাথায় রেখে ২ বছর পরে এসে এমন একটা কাজ অবন্তী করবে।
তবে একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন। এবং আমার কাছে প্রত্যেকটা বিষয়েরই ডকুমেন্টস আছে। সবাই যদি ডকুমেন্টসগুলোও স্পষ্ট করে দেখেন তাহলে হয়ত বুঝতে পারবেন। আর একটা প্রশ্ন কি আপনাদের মাথায় আসছে না যে ‘‘মেয়েটিকে যদি আমি অনলাইনে কোনোভাবে ডিস্টার্ব করতাম তবে সে সেটার স্ক্রিনশট অবশ্যই দিতে পারতো। সে সেটা কেন দিলো না?’’
আসলে ওই ঘটনার পরে ওর সাথে আমার কোনো কথাই হয়নি। না ফেসবুকে না অন্য কোনো মাধ্যমে। ওই ঘটনাতে সে আমার নামে যেসব বাজে কথা বলেছিলো তারপরে আর তার সাথে কথা কোনো কথাই বলতাম না। তাকে কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করার মতো মানসিকতা আমার কখনোই ছিল না। এই ছিলো পুরো ঘটনা। সে আমাকে ব্লক করে রেখেছিলো। তার সাথে আমি আজকে পর্যন্তও ফেসবুকে বা অন্যকোনো মাধ্যমে কথাই বলি নি। এই ছিল আমার সাইডের বাস্তবতা এবং সত্যি বিষয়টি। আমি সবগুলো তথ্যই প্রমাণসহ তুলে ধরছি। বিশ্বাস করা না করাটা একান্তই আপনাদের উপর। তবে আমি যা বলেছি একদম সজ্ঞানে সত্যি বলেছি।
উপরন্তু বলে রাখা ভালো, এই ঘটনার কয়েক মাস পরে অবন্তীকার বাবা মারা যান। হতে পারে অবন্তীকা তার মনে ক্ষোভ বেঁধে রেখেছিলো যে আমাদের কারণেই তার বাবা কষ্ট পেয়ে মারা গেছেন। হতে পারে এই ভাবনা থেকে অবন্তীকার মনে আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তীব্র প্রতিশোধ প্রবণ চেতনা থেকেই হয়ত আজকের এই ঘটনা ঘটানো তার দ্বারা।
আরো বলা উচিত দ্বীন ইসলাম স্যারের সাথে আমার একজন শিক্ষার্থী হিসেবে যতটুকু সালাম বিনিময় যোগ্য সম্পর্ক ততটুকুই ছিল। এর বাইরে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না যে স্যার আমার হয়ে অবন্তীকে কয়েকটা কটু বাক্যও বলতে পারে। স্যারকে আমি ডিফেন্ড করছি ব্যাপারটা এমন না, তবে স্যারকে ক্যাম্পাসের সবাই বেশ সহজ সহরল মানুষ হিসেবেই চেনেন।
পাবলিক সেন্টিমেন্ট অনেক বড় বিষয়। তাই একপাক্ষিক চিন্তা না করে পুরো বিষয়টা চিন্তা করে একটা মতামতে উপনীত হওয়ার জন্য অনুরোধ করবো সকলকেই।
অবন্তীকার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি আমি এবং সবসময় তা করবো ইনশাআল্লাহ। তবে সবাই আমার দিকটাও ভাববেন। ভাববেন আমি ওর সাথে কোনো যোগাযোগ না রেখেও অযথা একটা ভুল বোঝাবুঝির স্বীকার হচ্ছি। আমি আজ পর্যন্তও ওর সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি কোনো মাধ্যমেই। আমি নিজেই মাথায় সার্বিক পরিস্থিতির চাপ মাথায় নিয়েই পুরোটা লিখলাম।’’
No comments