কাশিমপুর জমিদার বাড়ি
কাশিমপুর জমিদার বাড়ি। কাশিমপুর, রাণীনগর,নওগা।
বান্দাইখাড়া থেকে এবার চলে এলাম বেতগাড়ি হাট।বেতগাড়ি থেকে এবার আমার গন্তব্য কাশিমপুর জমিদার বাড়ি।ছোট যমুনা নদীর তীরে এই জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।ছোট যমুনা নদী আত্রাইয়ের একটি শাখা নদী।কাশিমপুর জমিদার বাড়ির সামনে গিয়ে শুধুই হতাশা প্রকাশ করলাম।দুটি ভবন ভাবে আর কিছুই টিকে নাই ,যে ভবনদুটি টিকে আছে তার অবস্থাও ভয়াবহ।কিছু বছর আগেও নাকি এখানে বিশাল ভবন ছিলো কিন্তু ধানের কল এবং মাঠ তৈরি করতে নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব ভবন ভেঙ্গে ফেলেছে। যে ভবন দুটি টিকে আছে তার একটিতে গোবর দিয়ে লেপটে রেখেছে অন্য ভবনটিতে মানুষ বসবাস করে।
এই বাড়িটিকে অনেকে রাজবাড়ি হিসেবেও চিনে কিন্তু এটা আসলে একটি জমিদার বাড়ি ছিলো।এই জমিদার বাড়ির আছে ঐতিহাসিক ইতিহাস। রাজবাড়িটি কাশিমপুরের পাগলা রাজা নির্মাণ করেছিলেন। তিনি নাটোরের রাজার উত্তরসূরি ছিলেন। নওগাঁ এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকার শাসনকাজ পরিচালনা করার জন্যই এই রাজবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল ও রাজার শাসনকাল শুরু হয়। তবে এই অঞ্চলে রাজার শাসনকাল কবে থেকে শুরু হয় সঠিকভাবে সেটা জানা যায়নি। অন্নদা প্রসন্ন লাহিড়ী বাহাদুর এই অঞ্চলের শেষ রাজা ছিলেন। তার চারজন ছেলে ও একজন মেয়ে ছিল।
আরো পড়ুন কর্মচারী থেকে জমিদার হয়ে উঠার গল্প
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কিছুকাল পরে, রাজবংশের প্রায় সবাই দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তবে ছোট রাজা শক্তি প্রসন্ন লাহিড়ী ও তার পরিবার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই রাজবাড়িতে বসবাস করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য তারাও রাজত্ব এবং রাজবাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে যান।
রাজবাড়িটি প্রায় ২ একর ১৯ শতক এলাকা জুড়ে অবস্থিত। রাজবাড়ির মূল ভবনের মাঝখানে চারটি গম্বুজ বিশিষ্ট একটি দুর্গা মন্দির ছিল। রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে শিব, রাধাকৃষ্ণ ও গোপাল মন্দির ছিল। চুন, সুড়কি ও পোড়ামাটির ইট দিয়ে মন্দিরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। রাধাকৃষ্ণ মন্দিরটি অন্যান্য মন্দিরগুলোর চেয়ে বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট ছিল। দুর্গা মন্দিরের একপাশে রাজার বৈঠকখানা ছিল। মূল ভবনের পাশে একটি হাওয়াখানা ছিল। পুকুরপাড় ও নদীর ধারে কাঁচের ঘরের তৈরি একটি বালিকা বিদ্যালয় ছিল।
No comments