বলিহার রাজবাড়ি
বলিহার রাজবাড়ি, কুড়মইল, বলিহার, নওগা।
রাজা নেই। রাজ্যর প্রজাও নেই। কিন্ত কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নওগাঁর বলিহার রাজবাড়ীর ধ্বংসাবেশ।
এ রাজবাড়ীতে রয়েছে একটা দেবালয়। সেখানে এখন আর নিয়মিত পূজা-অর্চনা হয় না। দেবদাসীদের নৃত্যাঞ্জলি, শঙ্খধ্বনি, পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, ধূপের ধোঁয়া আর খোল করতালের শব্দ থেমে গেছে বহু আগে। উত্তরবঙ্গের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা বরেন্দ্র অঞ্চল নওগাঁ জেলা। এখানে ঐতিহ্যে ভরা ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনা রয়েছে অনেক। তার একটি বলিহার রাজবাড়ী। রাজার শাসনামলের স্মৃতি মাথায় নিয়ে তা দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটি নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নে অবস্থিত। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই রাজবাড়ীটি জৌলুস হারাতে বসেছে।
আরো পড়ুন কর্মচারী থেকে জমিদার হয়ে উঠার গল্প
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের এক সনদ বলে নওগাঁর বলিহারের এক জমিদার জায়গির লাভ করেন। জমিদারদের মধ্যে জমিদার রাজেন্দ্রনাথ ১৮২৩ সালে রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মন্দিরে রাজেশ্বরী দেবীর অপরূপা পিতলের মূর্তি স্থাপন করেন। বলিহারের নয় চাকার রথ এ অঞ্চলে খুব প্রসিদ্ধ ছিল। প্রাসাদের কিছুটা দূরেই ছিল বিশাল বাগান। এখনো রাজার শাসনামলে লাগানো কিছু গাছ রয়েছে। বাগান বাড়িটির সামনের পুকুর ঘাটের একটি ছাদ এখনো টিকে আছে। এখানে বসত নিয়মিত জলসা।
বলিহারের রাজাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। রাজা কৃষ্ণেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর একজন লেখক ছিলেন। তার লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে কৃষ্ণেন্দ্র গ্রন্থাবলি ১ম ও ২য় খণ্ড অন্যতম। ১৯৪৭ সালের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে অন্য সব রাজার মতো বলিহারের রাজার উত্তরাধিকারী বিমলেন্দু রায় ভারতে চলে যান। এরপর প্রাসাদটি রাজপরিবারের অন্যান্য কর্মচারীরা দেখভাল করতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে লুট হয়ে যায় রাজবাড়ীর বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ও মূল্যবান নিদর্শন। তাছাড়া, আসবাবপত্র, দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন সামগ্রীও লুট হয়। দর্শনীয় প্রাসাদটির কয়েকটি ভবন এখন কোনো রকমে দাঁড়িয়ে আছে।
No comments