Adsterra

সরেজমিন শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি: মুছে গেছে পৈশাচিক ঘটনার স্মৃতিচিহ্ন

সরেজমিন শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি মুছে গেছে পৈশাচিক ঘটনার স্মৃতিচিহ্ন,  ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News,

১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও মিরপুর তখনও ছিল শত্রু কবলিত এক দুর্গ। এর পরের বছর জানুয়ারিতেও চলেছে নৃশংসতা। দেড় মাস অবরুদ্ধ থাকার পর ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি মুক্ত হয় মিরপুর। স্বাধীনতার পর মিরপুরের বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাশ পাওয়া যায় শিয়ালবাড়ি এলাকায়। কিন্তু যুদ্ধপরবর্তী সময়ে সবচেয়ে আলোচিত 'শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি’র কোন দৃষ্টিগ্রাহ্য নিদর্শন বর্তমানে সংরক্ষিত নেই।


সোমবার দুপুরে শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ‘হাজি রোড’ নামে যে সড়কে নৃশংসতা চালিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী সেখানে থাকা কালভার্টটি বিলীন হয়ে বর্তমানে পাকা সড়ক হয়ে গেছে। এর চার পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পৈশাচিক ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি ধরে রাখার কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।


স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১০ বছর বয়সী বিল্লাল মিয়া বিলীন হয়ে যাওয়া কালভার্টটি দেখিয়ে এবং এর নৃশংসতা বর্ণনা করে ঢাকা টাইমসকে বললেন, ‘এইখানে এত্ত উঁচু এক কালভার্ট আছিলো। যুদ্ধের পর এলাকায় আসার পর দেখি খুলি আর কঙ্কাল।’


কালভর্টের অদূরে একটি ছোট জল্লাদখানা ছিলো জানিয়ে বিল্লাল মিয়া বলেন, ‘ওই দিকে ছোটোমতো একটা জল্লাদখানা ছিল। মানুষ জবাই দিতো। কিন্তু এখন আর পাইবেন না। সব হারায়া যাইতাছে। কিচ্ছু বোঝার উপায় নাই এইখানে কী ঘটছিল।'


এখানকার সারি সারি বহুতল ভবনগুলো বধ্যভূমির পৈশাচিকতা ঢেকে দিয়েছে তবুও স্থানীয়রা এখনও অগনিত মৃতের কান্না শুনতে পান।


শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমি ঘুরে কোনো দৃষ্টিগ্রাহ্য নিদর্শন পাওয়া যায়নি। এই বধ্যভূমির মাত্র কয়েক শতাংশ জায়গায় মাতবরবাড়ি পারিবারিক কবরস্থানের দেখা মেলে। স্থানীয়রা জানান, এখানে যুদ্ধচলাকালীন গণকবর দেওয়া হতো। এটিই একমাত্র স্থান হিসেবে টিকে আছে। তবে সরকারিভাবে অধিগ্রহণ না করলে এর ঐতিহাসিক অস্তিত্ব রক্ষা সম্ভব হবে না। ফলে এই কবরস্থানও বহুতল ভবনের চাপা পড়ে একসময় বিলীন হয়ে যেতে পারে।


শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমির ঐতিহাসিক অস্তিত্ব রক্ষা করতে সরকারের বিশেষ নজর প্রয়োজন। ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’র মত আবহ সৃষ্টি করা গেলে এর ঐতিহাসিক অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।


এ বিষয়ে বধ্যভূমিগুলোর স্মৃতিস্তম্ভ সংরক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমিতে শতশত লাশ টুকরো টুকরো করে কাটা হয়েছিল। এগুলো আমার নিজের চোখে দেখা। জহির রায়হানকে খুঁজতে যখন মিরপুরে গেছি তখন মানুষের হাঁড় ছাড়া কিছুই দেখিনি। এখন শুধু শেয়ালবাড়ি নয়, সারাদেশের বধ্যভূমির বেহাল দশা। শিয়ালবাড়িসহ মিরপুরের ১২টা বধ্যভূমি রক্ষা করা প্রয়োজন। এজন্য ২০ বছর আগেই সংরক্ষণের জন্য এর নকশাসহ পুরো বিবরণ সরকারকে দিয়েছি। বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ এবং তা যদি অধিগ্রহণের দরকার হয় সেটি অধিগ্রহণ মূলত মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাজ। এত বছরেও কেন তা হয়নি এটা সুস্পষ্ট উদাসীনতা। এটি খুব দুর্ভাগ্যজনক।'


শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বধ্যভূমি চিহ্নিত করতে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। তখন আমরা সারা দেশের সাড়ে তিন হাজার বধ্যভূমি চিহ্নিত করেছিলাম। কিন্তু এখন এর অর্ধেকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ বেশিরভাগ বধ্যভূমি ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে। তখনই সিদ্ধান্ত ছিলে সরকার অধিগ্রহণ করবে এবং সারাদেশে যত বধ্যভূমি আছে সেগুলো একই নকশায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করবে। এখন মিরপুরের শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমিই হোক আর অন্য বধ্যভূমিই হোক এগুলো চিহ্নিত এবং সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’

No comments

Powered by Blogger.