সুদখোর মহাজন থেকে জমিদার (ধলা জমিদার বাড়ি)
সুদখোর মহাজন থেকে জমিদার(ধলা জমিদার বাড়ি), ধলা বাজার, তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।
ধলা বাজারে এসে উপস্থিত হলাম তখন বিকাল নেমে গেছে মফস্বল জুড়ে।এলাকার দোকানপাট গুলোতে মানুষের আনাগোনা বাড়তেছে।মূল রাস্তা থেকে একটু ভিতরে ধলা জমিদার বাড়ি,এই ধলা জমিদার বাড়িটি গিরিশ চন্দ্র পাল জমিদার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিত।একজন অত্যাচারী বর্ণবাদী জমিদার হিসেবে তিনি এলাকায় পরিচিত ছিলেন।আমি বাড়ির সামনে গিয়ে হাজির।মূল বাড়িতে ঢুকার পথ বন্ধ চারদিকে দেয়াল করে আটকে দেওয়া হয়েছে, বাড়ির মূল ভবনটি ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো পরবর্তীতে আরেকটি নতুন ভবন জমিদার বাড়ির মাঠে করা হলে এখানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।এখানে মোট তিনটি ভবন টিকে আছে একটি মন্দির এবং বাকিদুটি বাসভবন।
আবর্জনা মলমূত্রে আচ্ছাদিত এখানকার ভবনগুলো এর কারণ হলো পাশেই গুচ্ছগ্রাম।এই জমিদার বাড়িটির সামনে বিশাল দিঘি আছে এবং পিছনে একটি শানবাঁধানো পুকুর সেই পুকুরের পাশেই বিশাল এক মাঠ।দুটো ভবনের মাঝখান দিয়ে পিছনের মাঠ পেরিয়ে পুকুরে যাওয়ার রাস্তা।এই দুভবনের রাস্তায় চোখে পরবে বিশাল সিংহদুয়ার।
আরো পড়ুন কর্মচারী থেকে জমিদার হয়ে উঠার গল্প
আমি ভিতরে কিভাবে ঢুকলাম? আমি ওয়াল টপকিয়ে ঢুকেছি।এবার এ বাড়ির ইতিহাস নিয়ে কিছু কথা।
এই বাড়িরর জমিদার গিরিশ চন্দ্র পাল ছিলেন এলাকার সুদখোর মহাজন এবং তারাইল বাজারের কেরোসিনের ডিলার। বাংলা ১৩৩১ সালে মদনের কাটল বাড়ি জমিদারদের কাছ থেকে তিন আনি জমিদারি ক্রয় করেন গিরিশ চন্দ্র পাল। ৫ টি ভবন এবং দুটি শানবাঁধানো পুকুরের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছিলো এই জমিদার বাড়ি।এই জমিদার বাড়ি উদ্বোধনের সময় নাকি ৪০ মন মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিলো।এই জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে নাকি নিম্ন বর্ণের মানুষজন জুতা পায় এবং মাথায় ছাতা নিয়ে যেতে পারতো না।জমিদারদের স্কুলে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের নাকি ভর্তি করা হতো না।এই জমিদার বাড়িতে বর্তমানে তিনটি ভবন টিকে আছে জীর্নশীর্ন অবস্থায়।
দেশভাগের আগ মুহুর্তে ধর্মীয় দাঙ্গা ছড়িয়ে পরলে,তৎকালীন জমিদার প্রফুল্ল চন্দ্র পালের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আশেপাশের মুসলিম প্রজারা।এলাকার ফকির বাড়ির লোকজন সহযোগিতায় এই জমিদার বাড়িতে আক্রমণ করে সাধারণ জনতা,এরপরই প্রফুল্ল চন্দ্র পাল উক্ত এলাকা ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান।
No comments