Adsterra

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জনগণের ভূমিকা

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জনগণের ভূমিকা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News,

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স এবং জনগণকে কেন্দ্র করেই রাষ্ট্রের সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আবার ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায় জনগণের ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করেই সরকার নানাবিধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। জনগণ একত্রিত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সেটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সরকার সচেষ্ট থাকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে এবং দায়িত্বশীলগণ অনেকেই বলেছেন, সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। রমজান মাস ও ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে পণ্য মজুত করে, পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক লাভের আশায় সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে ফেলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দেখা যায়, উত্সব কিংবা আয়োজনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমান কিংবা পণ্যের দামে ছাড় প্রদান করেন। এটাই ব্যবসায়ের সৌন্দর্য এবং ব্যবসায়ীরা জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে থাকেন। এক কথায়, জনগণের খাদেম হওয়ার চেষ্টা করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সারা বছর যাদেরকে উপজীব্য করে ব্যবসা পরিচালিত হয়ে থাকেন, উত্সবের সময় সবাই যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে উত্সব আয়োজনে শামিল হতে পারেন। সে তাড়না থেকে ব্যবসায়ীরা মূলত পণ্যের দাম কমিয়ে আনার পাশাপাশি বিভিন্ন ইনসেনটিভ ঘোষণা করে থাকেন।


পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ ধরনের তাড়না কখনোই দেখা যায়নি, এমনকি করোনা মহামারিতে যেখানে মানুষ মানুষের জন্য কেঁদেছে, পাশে দাঁড়িয়েছে—সে ক্রান্তিলগ্নে তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে বেশি মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করেছে।

আরো পড়ুন ইফতারে খেজুর খাবেন কেন ?

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং রমজানের উত্সবকে কেন্দ্র করে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা এসেছে। সে জায়গা থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ কতটুকু সফল হয়, সেটি সময়ই বলে দেবে। তথাপি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জনগণের ভূমিকাও অত্যাবশ্যকীয়। কেননা জনগণ যদি কার্যকরভাবে সম্মিলিতভাবে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা চালায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য, তাহলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও বিপাকে পড়বে।


বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য প্রকট থাকায় জনগণ এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস করে না। কিন্তু প্রতিবাদ ছাড়া উপায়ন্তর নেই। ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে এবং দেশের প্রচলিত আইনে ভোক্তাদের অধিকার প্রাপ্তিতে কাজ করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে, ব্যবসায়ীরা তাদের উত্পাদিত পণ্য কিংবা আমদানিকৃত পণ্যের দাম নির্ধারণে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পিছু হটতে বাধ্য হবে।  


অনেকের জানা, একজন ক্রেতা কিংবা ভোক্তার দায়িত্ব হচ্ছে পণ্যের মোড়কে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উত্পাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদি দেখে পণ্য ক্রয় করা। মূল্য রসিদ গ্রহণান্তে মালামাল সংগ্রহ করা। দ্রব্য বা সেবা সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে জেনে দ্রব্য ক্রয় করা। বিজ্ঞাপন না বুঝে দ্রব্য সংগ্রহ থেকে বিরত থাকা। সরকারি-পেশাদারি ট্রেডমার্ক সংবলিত দ্রব্য ক্রয় করা। দ্রব্য বা সেবা সম্পর্কে অন্ধ বিশ্বাস পরিহার করা। দ্রব্য বা সেবা সম্পর্কে অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট লিপিবদ্ধ করা।


ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অধীন সকল অপরাধ জামিনযোগ্য, আমলযোগ্য ও আপসযোগ্য বটে। তবে এই আইনের কিছু ধারা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা আবশ্যক। যেমন, ৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করে তার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সহজে দৃশ্যমান কোন স্থানে পণ্যের মূল্যের তালিকা প্রদর্শন না করে সেই অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।


একইভাবে ৩৯ ধারায় বলা আছে, আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করে তার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সেবার মূল্যের তালিকা সংরক্ষণ না করলে এবং সংশ্লিষ্ট স্থানে বা সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে উক্ত তালিকা প্রদর্শন না করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।


বস্তুত, ভোক্তা অধিকার আইনটি জনগণ যদি প্রকৃত অর্থেই অনুশীলন করে, তাহলে ব্যবসায়ীদের কোনো কারণ ব্যতিরেকে মূল্যবৃদ্ধির চর্চা থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া উপায় থাকবে না।


মফস্সল অঞ্চলে দেখা যায়, দোকানের ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের নিয়মকে অনুসরণ না করেই সাধারণ জনগণকে জিম্মি করে পণ্য বিক্রি করে থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করছে দেদার, প্যাকেটে উল্লিখিত মূল্যের থেকে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।


সর্বোপরি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে যেখানে অনিয়ম দেখা যাবে সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে প্রতারকদের। তাছাড়া যারা পণ্যের মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


সরকার ঘোষণা প্রদান করেছে অনিয়মের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণু নীতির। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি অবৈধ ও প্রতারক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত নীতিমালা কার্যকরভাবে প্রয়োগ ঘটিয়ে সাধারণের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবে। স্থানীয় বাজার ও স্ব স্ব অঞ্চলে প্রতারক ব্যবসায়ীদের প্রতিহত করতে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে জনগণকেই।


লেখক: মো. সাখাওয়াত হোসেন। 

চেয়ারম্যান, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.