মহেরা জমিদার বাড়ি
মহেরা জমিদার বাড়ি। মির্জাপুর ,টাঙ্গাইল।
ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৯০ দশকের পূর্বে জমিদার বাড়ীটির পত্তন ঘটে। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই ভাই কলকাতায় লবণ ও ডালের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা পয়সা রোজগার করে চলে আসেন মহেড়া গ্রামে। মহেড়া গ্রামে তারা ১ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর এ সুবিশাল বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়ি নির্মাণ করার পর তারা মহেড়া গ্রামের গরির মানুষের কাছে টাকা দাদন খাটাতে থাকেন এবং এলাকার প্রভুত উন্নতি করেন। পরে ব্রিটিশ সরকার জমিদার প্রথা চালু করলে কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহার ছেলেরা করটিয়ার ২৪ পরগনার জমিদারদের কাছে থেকে একটি অংশ বিপুল অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয়। শুরু হয় জমিদারি। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ মোহন সাহার উত্তরাধিকারী রাজেন্দ্র রায় চৌধুরী পর্যায়ক্রমে জমিদারি পরিচালনা করেন। এই শাসকরা এলাকায় বিদ্যালয়, রাস্তাঘাট, পানির ব্যবস্থাসহ অনেক জনকল্যাণমূলক কাজও করেন। এখানে আছে বড় বড় ৩টি ভবন আর কাছারি বাড়ী । এই ভবন গুলো এবং কাছারি বাড়ীর নাম মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং কালীচরণ লজ। আরও আছে আত্মীয় স্বজন কর্মচারীদের থাকার বাড়ী এবং প্রার্থনার জন্য মন্দির। বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২টি সুরম্য গেট। বাড়ীর সামনেই আছে বিশাল এক দীঘি নাম বিশাখা সাগর। ভবন গুলোর পিছনে আছে পাসরা পুকুর এবং রানী পুকুর নামে দুইটা পুকুর। ভবন গুলোর সামনে সুন্দর ফুলের বাগান। ভবন গুলো আর বিশাখা সাগর এর মাঝখানে রাস্তার পাশে কয়েকটা উচু গোল কারুকার্যময় স্তম্ভ। কালীচরণ লজ-এর সামনে বেশ বড় একটা খোলা যায়গা বা মাঠ।
জমিদার বাড়ীর পূর্বপুরুষেরা হলেন- বিদু সাহা, বুদ্ধু সাহা, হরেন্দ্র সাহা ও কালীচরণ সাহা। জনশ্রুতি আছে, জমিদার তরফের সবচেয়ে পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন মহারাজ ভবনের গিরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। তিনি ব্রিটিশ আমলে সম্মানিক বিচারক ছিলেন এবং একাধারে নীতিবান ও প্রজাবৎসল ছিলেন। তিনি পশু (বাঘ, হরিণ, ঘোড়া) ও পাখি (ময়ূর, টিয়া, ময়না) সহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি লালন-পালন করতেন। কাছারী বাড়ীতে বাঘের খাঁচা ছিল। বাঘটিকে আদর করে ফুলেশ্বরী বলে ডাকতেন। তাদের খাবার দাবারের খোঁজ খবর নিজে রাখতেন। একদিন হঠাৎ করে বাঘটি খাঁচা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী পাট ক্ষেতে গিয়ে লুকায়। ঘনিষ্ট বন্ধু মাখন লাল চক্রবর্ত্তী ও দেহরক্ষি মদন লালকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সেখানে যান এবং ফুলেশ্বরী বলে ডাকতে শুরু করলে বাঘটি এসে হাজির হয়। তারপর বাঘটিকে এনে খাঁচায় পুরে রাখেন।
মহেড়া জমিদারগণের ছিল বিশাল বিশাল স্থাপনা। নগর ছাওয়ালী ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিল তাদের বানিজ্যিক কর্মকান্ডের বিস্তার। জমিদারদের সুবিশাল কর্মকান্ডের অফিস ব্যবস্থাপনার জন্য গড়ে উঠেছিল নায়েব ভবন, কাছারি ভবন প্রভৃতি স্থাপনা। তিন কক্ষ বিশিষ্ট নায়েব ভবন চমৎকার নির্মাণ শৈলীতে গড়া। তিন কক্ষ বিশিষ্ট কাছারি ভবনের স্থাপত্য শৈলীও প্রাণ জুড়ায়। অপর গোমস্তা ভবনও সুপ্রাচীন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। জমিদার কুলের নায়েব গোমস্তা প্রভৃতি দাপ্তরিক ব্যক্তিবর্গ এসকল ভবনে বসে দাপ্তরিক কর্ম সম্পাদন করতেন। মহেড়া জমিদার বাড়ীটি মূলতঃ চার টি ভবনে বেষ্টিত। যথা- মহারাজ লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং রাণী ভবন(কালীচরণ লজ) নামে পরিচিত
জমিদার তরফের সন্তানেরা শুধুমাত্র বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক ছিলেন না। তাদের ছিল সুবিশাল চিত্ত। এলাকার মানুষের সামগ্রিক কল্যাণের কথা চিন্তা করে তারা বিদ্যালয়, মন্দিরসহ নানাবিধ প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। ১৮৯০ সালে মহেড়া আনন্দ উচ্চ বিদ্যালয়টি জমিদার বাড়ীর আনন্দ কুমার রায় চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। গোপিনাথ জিওর বিগ্রহ মন্দির জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত। উক্ত মন্দিরের সামান্য উত্তরে আদিনিবাস ছিল। জমিদার ভবনের উত্তর পার্শ্বে তাদের প্রতিষ্ঠিত শ্রী শ্রী শ্মঁশাণ কালী মন্দির। জমিদার ভবনের দক্ষিণ পাশে বিশাখা সাগর অবস্থিত। এখান থেকে একসময় এলাকার জনগণ সুপেয় পানি সংগ্রহ করত। জমিদার বাড়ীর পিছনে পাসরা পুকুর এবং রানী পুকুর নামে বিশাল দুইটি দিঘি আছে যা ছিল জমিদারদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য। পানির অভাব মেটানোর জন্য গ্রামে গ্রামে অনেক কূপ খনন করে দেন জমিদারগণ। মহেড়া থেকে এক কিলোমিটার দূরে ছাওয়ালী বাজারে এক সুবিশাল শ্রী শ্রী শ্মঁশাণ কালী মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
যেভাবে যেতে হবে- ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী বাসে নাটিয়াপাড়া বাসষ্ট্যান্ডে নেমে অপেক্ষ্যমান সিএনজি বেবীটেক্সীযোগে (ভাড়া ৭৫ টাকা, শেয়ারে জন প্রতি ১৫ টাকা) ০৩ কিঃমিঃ পূর্ব দিকে মহেড়া জমিদার বাড়ি । মহাসড়কে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, মহেড়া, টাঙ্গাইল নামে দিক নির্দেশনা ফলক (বিশাল সাইনবোর্ড) আছে। আর যারা উত্তরবঙ্গ থেকে আসবেন তারা যে কোন ঢাকাগামী বাসে টাঙ্গাইল পার হয়ে ১৭ কিঃমিঃ পর নাটিয়াপাড়া বাসষ্ট্যান্ডে নেমে একইভাবে যেতে পারেন।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments