যে জমিদার বাড়ির সাথে ইস্ট বেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের সম্পর্ক
যে জমিদার বাড়ির সাথে ইস্ট বেঙ্গল ফুটবল ক্লাবের সম্পর্ক।
ধাককোড়া গ্রাম,সাটুরিয়া,মানিকগঞ্জ।
মানিকগঞ্জ শহরে চলে এলাম,মানিকগঞ্জ শহরে এসে হালকা নাস্তা করে শহরের বাসস্ট্যান্ডে আসলাম।বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠে বারোবাড়িয়া বাজারে নামলাম।বারোবাড়িয়া বাজারের একটু আগে বারোবাড়িয়া ব্রীজ সেই ব্রীজের পাশ দিয়ে একটি কাঁচা রাস্তা চলে গিয়েছে ধানকোড়া জমিদার বাড়ির দিকে।রাস্তা ভালো না হওয়ায় কোন যানবাহন সেদিকে যেতে চাচ্ছিলো না আর যারা যেতে যাচ্ছে তারাঅতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছিলো তাই ম্যাপের সাহায্য নিয়ে হাটা শুরু করলাম। আধঘন্টা হাটার পর গন্তব্যে এসে পৌছালাম।জমিদার বাড়ির গেটে আসার পর একজনের সাথে আমার পরিচয় হয় যিনি এই জমিদার বাড়িটি ঘুরে ঘুরে আমাকে দেখাতে থাকলেন।
বিশাল সিংহ তোরণ দিয়ে আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম,প্রবেশ মুখেই দু পাশে দুটি নওবতখানা রয়েছে। অনেকের এখন প্রশ্ন হতে পারে নওবতখানা কি ?
তখনকার সময় জমিদারগণ ছিলেন সংগীত প্রিয় তারা যন্ত্রসঙ্গীতের জন্য থাকত আলাদা কক্ষ যা পরিচিত ছিল ‘নহবতখানা’, ‘নওবতখানা’ বা ‘নক্করখানা’ নামে। নহবতখানা বা নক্করখানা বলতে ‘ঢাক বা ডঙ্কা ভবন’ বা ‘বাদ্যঘর’ বা ‘যন্ত্রসঙ্গীত ভবন’ বোঝাত।
নহবতখানায় ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রগুলি ছিল ‘নাক্কারা’ বা ‘ডঙ্কা’, ‘কুয়ার্গা’ বা ‘দামামা’, ‘দুহুল’ বা দুমুখো ঢোল। ‘কর্না’ যা দেখতে সানাইয়ের মতো হলেও এটি সানাইয়ের থেকে বড় আকৃতির একটি বাদ্যযন্ত্র যা সোনা, চাঁদি, পিতল-সহ আরও নানা ধাতু দিয়ে নির্মিত হত। ‘সুরনা’ দেখতে এবং আকারে সানাইয়ের মতো হলেও এর আওয়াজ সানাইয়ের থেকে কিছুটা পৃথক।
এরা আসলে কতটা দারুণ ছিলো এবং এদের আভিজ্যত্য তো অনেক ছিলো।তবে এসব নহবতখানা গুলো ব্যবহার করা হত বিভিন্ন ঢাক এবং বাদ্য বাজানোর জন্য, এই জমিদার বাড়ি থেকে কোন ফরমান জারি হলে এখান থেকে ঢাক বা ঢোলের মাধ্যমে এই দুতলা নহবতখানা থেকে তা বাজানো হত যাতে দূর থেকে তা শোনা যায়।
আরো পড়ুন কর্মচারী থেকে জমিদার হয়ে উঠার গল্প
জমিদার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম,জরাজীর্ণ এল আকৃতির একটি ভবন টিকে আছে সেই ভবনের কোথাও পলেস্তারা খসে পরেছে আবার কোথাও পরগাছা জন্মেছে কোথাও আবার ময়লার স্তুপ।এসব বাড়ি যতই দেখি ততই আসলে আক্ষেপ জাগে।আক্ষেপের সুরটা আহারে …… দীর্ঘশ্বাসে গিয়ে শেষ হয়। এই জমিদার বংশধররা ভারতের দিল্লি থেকে বর্তমান বাংলাদেশের সাটুরিয়া উপজেলায় এসে বসতি স্থাপন করেন এবং জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার নরসিংহ রায় চৌধুরী।
জমিদার বাড়ির সিংহ দরজা সোজা চলে গিয়েছে জমিদার বাড়ির ভিতর দিয়ে মন্দির পর্যন্ত,মন্দিরটি স্বাধীনতার সময় ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিলো।এই মন্দিরেই পূজা অর্পনা করতো এই জমিদার বাড়ির জমিদারগণ।মন্দিরের পূর্ব পাশে সান বাধানো বিশাল পুকুর সেই পুকুর পারে একসময় আড্ডা বসতো এই জমিদার বাড়ির লোকদের আজ সেখানে হাহাকার।
নরসিংহ রায় চৌধুরী তারপর জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত একেএকে জমিদার বংশধররা এই জমিদারীর দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। জমিদার নরসিংহ রায় চৌধুরীর ছেলে ছিলেন গিরিশগোবিন্দ রায় চৌধুরী। তার ছেলে ছিলেন হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী। তার ছিল তিন ছেলে অমূল্যচন্দ্র রায় চৌধুরী, বীরেনচন্দ্র রায় চৌধুরী এবং নির্মলচন্দ্র রায় চৌধুরী।
এই জমিদার বাড়ির লোকজন শিক্ষানুরাগী এবং ক্রিয়াপ্রেমী ছিলো ইতিহাস তাই বলে।চল উঠি বাড়িটা আরেকবার দেখি,জমিদার বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম,ঘুটঘুটে অন্ধকার চুনসুরকির ব্যবহার দেখা যায় দেয়াল জুড়ে মাঝেমধ্যে ছাদে লোহার ব্যবহারও চোখে পরছে।দরজার জানালা গুলো এখনো মজবুত ঐ যে শাল কাঠের দরজার জানালা যার ক্ষয় নাই ।
জমিদার বাড়ির পাশেই জমিদাররা একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টি জমিদার হেমচন্দ্র তার বাবা জমিদার গিরিগোবিন্দের নামে প্রতিষ্ঠা করেন। ইতিহাস থেকে যা জানা যায় তা হলো এই জমিদার বংশের আওতায় মোট ২৪টি কাছারি ছিল। এদের জমিদারি শুধু এই অঞ্চলেই ছিলো না এদের জমিদারি হাওর অঞ্চলেও ছিলো বর্তমান ময়মনসিংহ জেলার জগন্নাথপুর ও খালিয়াজুড়ি নামক এলাকায়ও তাদের জমিদারী ছিল।
জমিদার বাড়ির সামনের মাঠে একদল বাচ্চারা ফুটবল খেলতেছিলো,আমর মন আনচান করতেছিলো ওদের সাথে খেলার জন্য কিন্তু সময় এবং অচেনা জায়গা হওয়ার সেটা আর হলো না,আমি জমিদার বাড়ি দেখতে থাকলাম।এখনো অত্র অঞ্চল হিন্দু অধ্যুষ্যিত।
দেশ ভাগের মধ্য দিয়ে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদার বাড়ির বংশধররা ১৯৫২ সালে ভারতে চলে যান। এই জমিদার বাড়ির সন্তানরা বাংলার স্বনামধন্য ফুটবল ক্লাব ইস্ট বেঙ্গলের সাথে সম্পৃক্ত। এই জমিদাররা এই এলাকার খুবই স্বনামধন্য জমিদার ছিলো।
চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com
No comments