Adsterra

হুমায়ূন আহমেদের ঘেটুপুত্র কমলা সিনেমার সেই ঐতিহাসিক বাড়িটি

হুমায়ূন আহমেদের ঘেটুপুত্র কমলা সিনেমার সেই ঐতিহাসিক বাড়িটি ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news, Slider,ইতিহাস,বাংলাদেশ, জমিদার বাড়ি,

হুমায়ূন আহমেদের ঘেটুপুত্র কমলা সিনেমার সেই ঐতিহাসিক বাড়িটি। নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া।

একপাশে হাওর অন্যপাশে মানুষের বসবাস তার ঠিক মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে পিচ ঢালা রাস্তা।যদিও রাস্তার অবস্থা খুবই বাজে তারউপর দুপুরের রোদ সাথে চোখে ঘুমঘুম একটা ভাব।সিএনজি থেকে হরিপুর জমিদার বাড়ির কাছেই নামলাম।পিচঢালা রাস্তা থেকে নেমে একটু সামনে তাকালেই তিতাস নদী।শতবর্ষী এক পুরাতন ভবনের পাশ দিয়ে আমি হেটে যাচ্ছি তিতাস নদীর পাড়ের দিকে।মিনিট খানেক হাটার পরই চোখের সামনে দেখা মিললো ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক বাহক তিতাস নদীর পাড়ের গড়ে উঠা হরিপুর জমিদার বাড়ি।হরিপুর জমিদার বাড়ির দু পাশে দুটি মঠ এবং সামনের তিতাস নদীর পাড়ে বিশাল সানবাধানো ঘাট। এই ঘাটেই একসময় জমিদার বাড়ির সাম্পান এসে থামতো।তিতাস নদীর বিশালতা দিয়ে আকড়ে রেখেছে জমিদার বাড়ির ঘাটটিকে।
বাহিরে থেকে বুঝা যাবে না এই জমিদার বাড়ির ভিতর আসলে কতটা সৌন্দর্য্য আমার জন্য অপেক্ষা করছে।বিশাল এক বারান্দা পেরিয়ে আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম।ভিতরে প্রবেশ করেই আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম চারদিকে। এই শতবর্ষী জমিদার বাড়িটি কয়েকটি অংশে বিভক্ত।
নান্দনিক স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত বাড়িটি, বাড়ির বাইরের অবয়বটি অবিকল রয়ে গেছে। কারুকাজ খচিত দেয়াল,স্তম্ভ ও কার্নিশ। তিনটি ভাগে ভাগ ছিলো এই জমিদার বাড়িটি।


ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় প্রায় ১৭৫ বছর পূর্বে জমিদার গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী বাড়িটি নিমার্ণ করেন। বৃটিশ আমলে নির্মিত বাড়িটির নির্মাণ শৈলী বড়ই মনোরম। ১৩৪৩ বাংলার ১২ চৈত্র (দোল পূর্নিমা) তারিখে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর মূত্যুর পর পর্যায়ক্রমে বাড়িটির উত্তরাধিকার হন হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী। তাদের কাছ থেকে বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি আসে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী। কালক্রমে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওযার পর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হরে তারা বাড়িটি ফেলে কলকাতায় চলে যায়। জমিদাররা বাড়িটি ফেরে যাওয়ার সময় পুরোহিতদের রেখে যায়। এখনও জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িতে পুরোহিতদের বংশধরেরা বসবাস করছে। বাড়িটির দেয়ালের অধিকাংশ পলেস্তারা খসে পড়ছে, আর সেখানে জমেছে শেওলার আবরণ। দৃষ্টি নন্দন কারুকাজের খুব অল্পকিছু অংশই বিলীন হতে বাকি আছে। জনশ্রুতি আছে, মেঘনা তথা তিতাসের পূর্বপ্রান্তে এত বড় বাড়ি আর কোথাও নেই। প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা জমিদার বাড়িটিতে প্রায় ৬০টি কক্ষ, রং মহল, দরবার হল, ধানের গোলা, গোয়ালঘর, রান্নার ঘর, নাচ ঘর, মল পুকুর,খেলার মাঠ, মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে। বিশাল আয়তনের বাড়িটির পুরো ভবনের কোথাও কোন রডের গাঁথুনি নেই। লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দুপাশে দুটি সুউচ্চ গম্বুজ সগর্বে মাথা তুলে দাড়িঁয়ে ঘোষনা করছে, জমিদার বংশের ঐতিহ্যের কথা। দু’তলায় উঠার ৬ দিকে ৬টি সিড়িঁ ও তিন তলায় উঠার ২ দিকে ২টি সিড়িঁ রয়েছে। বাড়তি পশ্চিম-উত্তর কোণে ৬টি বেড রুম এবং মল পুকুরের পূর্বপাড়ে ৪টি ও পশ্চিম পাড়ে ৪টি বেড রুম রয়েছে। বাড়ির পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর পাড়ে পাকা ঘাটলার উত্তর দিকে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ও দক্ষিণ দিকে গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর সমাধি মঠ রয়েছে।
হরিপুরের জমিদারগণ ত্রিপুরার প্রভাবশালী জমিদারগণের উত্তরসুরি ছিলেন। প্রবীণদের নিকট থেকে জনশ্রুতি আছে সুনামগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার এবং আজমিরীগঞ্জের জনপদ কর প্রদান করতো। নাসিরনগর উপজেলাস্থ গুণীয়াউকের জমিদারগণের সহিত তাদের সুসম্পর্ক ছিল। দেশবিভাজনের পর ১৯৪৭ সালে প্রাসাদ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। ঐতিহাসিক নৌকা বাইচ মুলতঃ এখান থেকেই শুরু হয়। প্রাসাদের অনেক স্থানে ক্ষয় হয়ে গেলেও দ্বিতলের পাশা খেলার ঘরটি আজও রয়ে গেছে যাতে জমিদার সখ্যগণের সাথে খেলতেন। বাইজীরা প্রতি রাতেই জমিদারগনের আমোদ-প্রমোদের উদ্দেশ্যে নৃত্য পরিবেশন করতো।
বাড়িটিতে এখন অনেক গুলো পরিবার বসবাস করেন ,যাদের একটি অংশ হলো জমিদারদের রেখে যাওয়া পুরোহিতদের পরিবারবর্গ।অন্য অংশটি হলো বিভিন্ন ছিন্নমূল মানুষ যারা এখানের পরিবেশকে খুবই বাজে অবস্থায় নিয়ে গেছে।জমিদার বাড়ির একদম সামনের অংশে এদের বসবাস।জমিদার বাড়ির মন্দির সহ বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে এরা মলমূত্র ত্যাগ করে জায়গা গুলোরে খুবই বাজে হালাত করে রাখছে। গরু ছাগলের খামার হিসেবেও একে এরা ব্যবহার করে থাকে। স্থানীয় থানার দারোগা এসে বাড়ির একটি রুম থেকে ছাগল সরাতে বলতে ছিন্নমূল মানুষজন তার উপর খুব চড়াও হয়।একটা সরকারী নিরাপত্তায় থাকা ভবন কিভাবে বাজে মানুষের কবলে পরলো তা নিয়ে আমি এখনো ভাবতেছি।যদিও বাড়ির মুল ভবনের একটিতে সংস্কারের ছোয়া লেগেছে ।দেয়াল,পলেস্তারা খসে পরছে অনেক জায়গায়। কারুকার্য করা দেয়াল গুলো বিচ্ছিরি ভাবে নষ্ট করে ফেলছে বসবাস করা লোকজন তবে পুরোহিতদের বসবাসরত জায়গা গুলোর পরিবেশ এখনো সুন্দর রয়েছে।
এই বাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছিলো অনেকগুলো বাংলা চলচ্চিত্র মধুমালতি, নাইওরী,দ্য লাস্ট ঠাকুরেরমত চলচ্চিত্র।

এই জমিদার বাড়ির বিশালতার চেয়ে এর সৌন্দর্য্য মানুষকে আকৃষ্ট করবে যে কোন ভাবে।আমার এখানে কয়েকশো কোটি বছর কাটাতে মন চায়।

No comments

Powered by Blogger.