করটিয়া জমিদার বাড়ি
করটিয়া জমিদার বাড়ি। করটিয়া, টাঙ্গাইল সদর, টাঙ্গাইল।
গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পরলো মোগল ও চৈনিক স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত মূল জমিদার বাড়িটি।প্রথমবারই দ্বিতল এই ভবনটির প্রেমে পরে যাবে যে কেউ।দ্বিতল এই ভবনটি মূলত মোঘল এবং চৈনিক স্থাপত্য শৈলীর মিশেলে নির্মাণ করেছিলেন করটিয়ার জমিদারগণ।
সবকিছু দারুণ হলেও আমার মন খারাপ কারণ এই জমিদার বাড়ির অভ্যন্তরে প্রবশ নিষেধ, শুধু চারিদিকের সৌন্দর্য্য উপভোগ করার অনুমতি আছে।নানা রঙ্গের ফুল ফুটে আছে জমিদার বাড়ি জুড়ে,দোলনচাপা ফুলের গন্ধে আমাদের নাক ভারি হয়ে আসছে।মুল জমিদার বাড়ি পাশ দিয়ে হেটে সামনে এগোচ্ছি-
আফগান অধিপতি সোলায়মান খান পন্নী কররানির ছেলে বায়েজিদ খান পন্নী ভারতে আগমন করেন।তার সন্তানের নাম ছিলো সাইদ খান পন্নী তিনি এই আটিয়ায় তার বসতি স্থাপন করেন।আতিয়া মসজিদের নাম শুনেছিস?? সেই আতিয়া মসজিদ এই পন্নী পরিবারেরই করা। সেই আতিয়া কারো মতে আটিয়া থেকে সাইদ খান পন্নীর এগার তম প্রুষ সাদত আলী খান পন্নী এই করটিয়ায় এসে পন্নী করটিয়া জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন।
হাটা শুরু করলাম একটু সামনে আগাতেই আগাছায় জরাজীর্ণ একটি ভবন চোখে পরলো। রোকেয়া মহলের সামনে গিয়ে থামলাম-যাকে বলা হত রাণীর মহল।করটিয়ার সবচেয়ে জরাজীর্ণ বাড়ি এটি।সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে পরে আছে ঐতিহাসিক এই রোকেয়া মহল।একসময়ের প্রাচুর্য্যে ভরপুর রোকেয়া মহল আজ কতটা অবহেলায় তার দিন পার করছে।
লাল জবা ফুটে আছে বাড়ির আশপাশ জুড়ে কিন্তু রোকেয়া মহলের কোন সাড়া নেই একদম নিস্তব্ধ।
এই জমিদার বাড়ির জমিদারি নিয়ে একটা সময় মামলা হয়েছিলো-উনিশ শতকের প্রথম দিকের ঘটনা।সাদত আলী খান পন্নী সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে নানান মামলায় জর্জরিত হয়ে পরেন ঘটনা এখানেই শেষ না এই ঘটনা রুপ নেয় নানাবিধ সমস্যার মামলায় জর্জরিত সাদত আলী খান পন্নী পৈত্রিক সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য সাহায্য চান ঢাকার জমিদার খাজা আলীমুল্লাহর,খাজা আলীমুল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন এবং তার সম্পত্তি উদ্ধার করে দেন। কিন্তু সেই খাজা আলীমুল্লাহর সাথেই সাদত আলী খান পন্নীর সমস্যা শুরু হলো।খাজা আলীমুল্লাহ যে শর্ত দেন তা সাদত সাহেব ভঙ্গ করেন তাই খাজা আলীমুল্লাহ তার নামে মামলা ঢুকে দেন এবং খাজা আলিমুল্লাহ ভোগ স্বত্বের ডিক্রি লাভ করেন।তখন সাদত আলী খান সম্পত্তি রক্ষার জন্য স্ত্রী জমরুদুন্নেসা খানমের নামে তা দানপত্র করে দেন। যদিও পরে তা উভয় মধ্যে মীমাংসা হয়ে যায়।ইতিহাস থেকে যা জানা যায় তা হলো সাদত আলী খান সম্পত্তির ৭ আনা অংশ খাজা আলিমুল্লাহকে ছেড়ে দেন।
আরো পড়ুন কর্মচারী থেকে জমিদার হয়ে উঠার গল্প
রোকেয়া মহলের পিছনেই বিশাল রানী পুকুর,একসময়ের জৌলুশে পরিপূর্ণ এই পুকুর আজ নিরব নিস্তব্ধ।পুরো জমিদার বাড়িটা সবুজের সমারোহে আবদ্ধ,নানাবিধ গাছাপালায় পরিপূর্ণ এই বাড়িটা।
পন্নী পরিবারের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ তাদের মামলা মোকদ্দমার ইতিহাসও দীর্ঘ-অতঃপর বাংলা ১২২৭ সনের ৯ পৌষ সাদত আলী খান এবং তাঁর স্ত্রী জমরুদুন্নেসা খানম যৌথভাবে একটি দলিল করেন। এতে সমস্ত সম্পত্তি দুটি ভাগে বিভক্ত করে এক ভাগ পরিবারের ব্যয় ও অন্য ভাগ ওয়াকফ্ করে ধর্মীয় ও দাতব্য কাজে ব্যয় করার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়। ওয়াকফ্ সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য মুতাওয়াল্লী নিয়োগের বিধান রাখা হয়। সাদত আলী খান পন্নীর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র হাফেজ মাহমুদ আলী খান পন্নী মুতাওয়াল্লী ছিলেন। মাহমুদ আলী খান পন্নীর মৃত্যুর (১৮৯৬) পর মুতাওয়াল্লী কে হবেন এ নিয়ে তাঁর পুত্র ওয়াজেদ আলী খান পন্নী (চাঁদ মিয়া) এবং পিতামহী জমরুদুন্নেসা খানমের মধ্যে বিবাদ ও মামলা মোকদ্দমা সংঘটিত হয়। পরিশেষে ওয়াজেদ আলী খান পন্নী জয়ী হন এবং দক্ষতার সঙ্গে জমিদারি পরিচালনা করেন।
।তবে এই জমিদার বাড়ির অনেক জনকল্যানমূলক কাজও করে গেছেন যা টাঙ্গাইলের মানুষ এখনো মন ভরে স্বরন করে।ওয়াজে আলী খান পন্নী যিনি মামলায় জয়ী হয়েছিলেন তিনি টাঙ্গাইলের বিখ্যাত সাদত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন (১৯২৬) পূর্ব বাংলায় মুসলমান কতৃক এটা ছিলো এক অনন্য সৃষ্টি। এছাড়া ১৯০১ সালে করটিয়াতে হাফেজ মাহমুদ আলী ইনস্টিটিউশনটি স্থাপন করেন এই ওয়াজেদ আলী খান পন্নী।
No comments