Adsterra

মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈতৃক বাড়ি/মধুপল্লী।

 
মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈতৃক বাড়ি/মধুপল্লী, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, রাজনারায়ন দত্ত ছিলেন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা, Today Trending News

মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈতৃক বাড়ি/মধুপল্লী।

সাগরদাঁড়ী,কেশবপুর,যশোর।
কপোতাক্ষ নদের তীরের যে স্থানটিতে কবি শেষবার এসেছিলেন সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতি ফলক। এই ফলকে খুদিত রয়েছে মহাকবির রচিত ‘কপোতাক্ষ নদ’ কবিতাটি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলকাতা থেকে স্ত্রী হেনরিয়েটা, সন্তান মেঘনাদ মিল্টন ও শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। কিন্তু জমিদার বাবা তাকে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেননি। অনেকেই বলেন, ১৮৬২ সালে কবি শেষবারের মতো সপরিবারে বজরায় চেপে সাগরদাঁড়িতে এসেছিলেন। খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার কারণে তিনি বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেন নি। শেষে এই কাঠবাদাম গাছতলায় তাঁবু খাটিয়ে চৌদ্দ দিন থেকে অবশেষে বিদায় নিয়েছিলেন। তাই এই ঘাটটির নাম হয়েছে বিদায় ঘাট। এরপর তিনি এখনো এই বাড়িতে আর আসেননি
আজ যেখানে এসেছি তা প্রথম লেখা দেখে অনেকেই অনুমান করতে পেরেছেন,টিকেট কেটে গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম।বাংলা সনেটের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈতৃক ভিটায় এখন আমি দাড়িয়ে।বিশাল সুনসান নিরব এক জমিদার বাড়ি এই জমিদার বাড়িতেই ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি জন্মেছিলেন মধুসূদন দত্ত।শৈশব কেটেছিলো এই জৌলুশ পরিপূর্ণ জমিদার বাড়িতেই।বনেদি পরিবারের সন্তান মধুসূদন তখনও মাইকেল শব্দ যোগ হয়নি তার নামের সাথে।মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যান কলকাতার খিদিরপুরে সেখানে গিয়ে গিয়ে খিদিরপুরে স্কুলে ভর্তি হন এরপর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন।সেখানেই তিনি বাংলা সংস্কৃত এবং ফারসি ভাষা রপ্ত করেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের পূর্ব পুরুষ ছিলো জমিদার ,এই যে জমিদার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছি প্রথমেই চোখে পরবে বিশাল পদ্মপুকুর।সেই পুকুরের একপাশে কবির সেই বিখ্যাত কবিতা যেটি বিদেশের মাটিতে বসে তার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে নিয়ে এই কবিতাটি লিখেছিলেন।
সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে’।
এই পদ্ম্পুকুরের পাশেই রয়েছে এই জমিদার বাড়ির কাছারি ঘর,এখানেই জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত তার জমিদারি পরিচালনা করতেন। রাজনারায়ন দত্ত ছিলেন কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা। বর্তমানে এই কাছারি ঘরটি লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে,যদিও সেই লাইব্রেরীতে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই এখন আর নেই।মাইকেল মধুসূদন দত্তের কিছু বই আছে সেখানে শুধু। এছাড়া বাড়ির ভিতরে মানে কাছাড়ি ঘরের পিছন অংশে রয়েছে দূর্গা মন্দির,যেখানে একসময় ঢাক ঢোল এবং শণখের আওয়াজ হত আজ সেখানে নিরাবতা বিরাজ করছে।
মন্দিরের পাচিল ভেদ করলেই মূল বাসভবন দ্বিতল এই বাসভবনে মোট ছয়টি কক্ষ রয়েছে।উপর তলায় তিনটি এবং নিচ তলায় তিনটি।নিচ তলায় রয়েছে কবি পরিবারের একটি মন্দির আর মধুসূদন জাদুঘর । মধুসূদন জাদুঘরে আছে কবির ব্যবহার করা খাট, চেয়ার ও আলমারি এর পাশে রয়েছে একটি ছোট পাঠাগার । এই ভবনের একদম উত্তরদিকে আছে ছাদহীন-দেয়াল ঘেরা একটি অসাধারন নির্মাণশৈলীর একটি কক্ষ । এই কক্ষেরই কোণার দিকে রয়েছে তুলসী গাছ । মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাড়ির প্রবেশ পথের সামনে রয়েছে ১৯৮৪ সালের শিল্পী বিমানেশ চন্দ্র বিশ্বাসের নির্মিত কবি মধুসূদন দত্তের একটি ভাস্কর্য ।


এবার একটু কবির ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলাপ করা যাক-
তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও তার প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল। মধুসূদনের যখন তেরো বছর বয়স, সেই সময় থেকেই তাকে কলকাতায় বসবাস করতে হত। খিদিরপুর সার্কুলার গার্ডেন রিচ রোডে (বর্তমানে কার্ল মার্কস সরণী) অঞ্চলে তিনি এক বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন।আমার জানা মতে খিদিরপুরের এই বাড়ি নিয়েও মামলা চলছে।
১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর ওই বছরই ৯ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাকে দীক্ষিত করেছিলেন পাদ্রী ডিলট্রি। তিনিই তার "মাইকেল" নামকরণ করেন। মধুসূদন পরিচিত হন "মাইকেল মধুসূদন দত্ত" নামে। তার এই ধর্মান্তর সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। রাজনারায়ণ দত্ত তার বিধর্মী পুত্রকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর মধুসূদন শিবপুরের বিশপস কলেজে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান।
আজ মূলত মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি নিয়ে লিখতে এসেছি,মাইকেল মধুসূদন দত্ত সম্পর্কে লেখার মত সাহস এবং শক্তি আমার হয়নি।

চাইলে আপনিও হতে পারেন ঢাকা ভয়েজ পরিবারের অংশ। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা মতামত বা সৃৃজনশীল লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের ঠিকানায়। নাম সহ প্রকাশ করতে চাইলে লেখার নিচে নিজের নাম, পরিচয়টাও উল্লেখ করে দিন। ঢাকা ভয়েজে প্রকাশিত হবে আপনার লেখা। মেইল : dhahkavoice.news24@gmail.com 

No comments

Powered by Blogger.