Adsterra

প্রজা বিদ্রোহের নগরে (ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি)

প্রজা বিদ্রোহের নগরে ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news, বাংলাদেশ,

প্রজা বিদ্রোহের নগরে(ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি), ইটাকুমারী, পীরগাছা, রংপুর।

মফস্বল বলতে যেটা বুঝায় আরকি সেরকম ফিল নিয়ে ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি যাচ্ছিলাম। চিকল সরু পাকা রাস্তা তার দুপাশ দিয়ে ধানক্ষেত, রাখাল ছেলেটা গরুকে ঘাস খাওয়াচ্ছে, ছোট পোলাপান লাটিম খেলছে সবকিছু মিলিয়ে অতিরিক্ত সুন্দর এক পরিবেশ।
ইটাকুমারী জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা রঘুনাথ চন্দ্র রায়।১৭৮৩ সালে রংপুরের ঐতিহাসিক প্রজা বিদ্রোহ ইটাকুমারী রাজা শিব চন্দ্রের বাড়ী থেকে সংঘটিত হয়েছিল।১৭৮৩ সালে বৃটিশ বিরোধী শীব চন্দ্র ও দেবী চৌধুরানী প্রজা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়ে দেবী সিংহের অত্যাচার থেকে রংপুরের কৃষক প্রজাদের রক্ষা করেছিলেন।ইটাকুমারী জমিদারবাড়ী ছিলো তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় নবদ্বীপ। শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বাতিঘর হিসেবে ইটাকুমারীর খ্যাতি গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল।সংরক্ষণের অভাবে জমিদার বাড়িটি অনেক আগেই জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে।
১৭৮৩ সাল পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নেওয়া রাজস্ব নীতি অনুযায়ী, বাংলার কৃষকদের থেকে কর আদায়ের জন্য ইজারাদারির লাইসেন্স-ধারক দেবী সিংহের অত্যাচার চরমে ওঠে। লাফিয়ে লাফিয়ে কর বাড়ায় প্রথমে কৃষকরা অর্ধাহার, পরে অভুক্ত অবস্থায় মরতে শুরু করে। শিশুকে খেতে দিতে না পেরে বাপ-মা দূরে কোথাও চলে গিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে প্রাণ বিসর্জন দেন। ইটাকুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায়কে কর বকেয়া থাকার কারণে দেবী সিংহের লেঠেল বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়ে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখে। বহু টাকা মুক্তিপণ দিয়ে শিব চন্দ্র রায় দেবী সিংহের হাত থেকে নিষ্কৃতি পান। মুক্তি পেয়ে শিব চন্দ্র মন্থনার জমিদার দেবী চৌধুরানীর পরামর্শে রংপুরের সব জমিদারকে করের বোঝা ও কর আদায়ে দেবী সিংহের অত্যাচারের বিষয়ে ইটাকুমারী জমিদার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে এক আলোচনা চক্রে যোগদানের জন্য আহ্বান জানান। প্রজা বিদ্রোহের পটভূমিতে প্রজাদের উদ্দেশ্যে ইটাকুমারীর জমিদার শিব চন্দ্র রায় প্রজাদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন।



ওইদিন প্রজাদের দেখে ইটাকুমারীর জমিদারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন মন্থনার জমিদার স্বয়ং জয়দুর্গা দেবী চৌধুরানী। প্রজাদের উদ্দেশ্যে মহীয়সী দেবী চৌধুরানী তাদের সামনের পথচলা ও কর্মের উদ্দেশ্যে হাত তুলে আশীর্বাদ জ্ঞাপন করছেন। দেবী চৌধুরানীর আশীর্বাদ মাথায় পেতে নিয়ে অভুক্ত, প্রজারা হাজারে হাজারে হাতের কাছে যার যা ছিল, কাস্তে, লাঠি, দা, কুড়াল, বল্লম ও ছোরা নিয়ে রংপুরের দিকে দৌঁড় শুরু করে। খবর পেয়ে দেবী সিংহ আগেভাগেই চাদর মুড়ি দিয়ে খিড়কি দরজা দিয়ে পারিষদসহ রংপুর ছেড়ে মুর্শিদাবাদে পালিয়ে যান। কেউ কেউ বলেন, দেবী সিংহ ঢাকায় পালিয়ে বেঁচেছিলেন। আর এদিকে জনশূন্য দেবী সিংহের প্রাসাদ প্রজাদের দখলে চলে আসে। হাজার হাজার প্রজা দেবী সিংহের প্রসাদ ভেঙে গুঁড়িয়ে ইটের স্তূপে পরিণত করে।
প্রজা বিদ্রোহের জেরে দেবী চৌধুরানী ও শিব চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে ইংরেজ কোম্পানির সরকারকে করের পরিমাণ অনেকটাই কমাতে বাধ্য হতে হয়। দেবী সিংহের হাত থেকে ইংরেজ সরকার ইজারাদারের লাইসেন্স কেড়ে নেয়। আর তার সহযোগী আর এক অত্যাচারী কর আদায়কারী হররাম সেনের এক বছরের জেল এবং এই শাস্তি শেষে হররাম সেনকে চিরদিনের জন্য রংপুর ও দিনাজপুর থেকে নির্বাসন দণ্ড দেয় ইংরেজ শাসক। ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে দেবী সিংহের শাস্তি ঘোষিত হয়নি। লর্ড কর্নওয়ালিস কোম্পানির শাসক পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দেবী সিংহকে তার শাস্তি পাঠ করে শোনান। দেবী চৌধুরানী ও শিবচন্দ্র রায়ের যৌথ নেতৃত্বে রংপুরের প্রজা বিদ্রোহের ইতিহাস এলাকার মানুষ আজও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে।


No comments

Powered by Blogger.