Adsterra

পর্যটন সম্ভাবনাময় রয়েছে আলীকদম উপজেলা

 

পর্যটন সম্ভাবনাময় রয়েছে আলীকদম উপজেলা,  ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news,

বান্দরবানের পার্বত্য আলীকদম উপজেলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের শ্যামল আঙ্গিনায় পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পুরো উপজেলাকে সবুজ পর্বতরাজি, পাহাড়ী ঝর্ণা ও নানা নান্দনিক দৃশ্য ঘিরে রেখেছে। এখানে রয়েছে পর্যটন সম্ভাবনাময় ঐতিহাসিক আলীর সুড়ঙ্গ, রূপমুহুরী ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, মারাংইংতং জেদী ও তামাংঝিরি জলপ্রপাত।


রূপমুহুরী ঝর্ণা : আলীকদম উপজেলার ‘রূপমুহুরী ঝর্ণা’। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরে পোয়ামুহুরী এলাকায় মাতামুহুরী নদীর কুলঘেঁষে রূপমুহুরী ঝর্ণার অবস্থান। এ প্রাকৃতিক এ ঝর্ণাটি দেখতে হলে পোয়ামুহুরী বাজার থেকে ৫ মিনিটের পথ হাঁটতে হয়। পোয়ামুহুরীতে ২টি ঝর্ণা রয়েছে। সাধারণত পোয়ামুহুরী বাজার সংলগ্ন ঝর্ণাটিকে ‘রূপমুহুরী’ এবং পোয়ামুহুরী ঝিরিমুখ সামনের ঝর্ণা ‘পোয়ামুহুরী ঝর্ণা’ নামে পরিচিতি। পোয়ামুহুরী ঝর্ণা ও রূপমুহুরী ঝর্ণার দুরত্ব এক-দেড়কিলোমিটার। তবে রূপমুহুরী র্ঝণার সৌন্দর্য বেশী। ঝম্ ঝম্ কল্ কল্ রবে প্রায় দুইশ’ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে ছুটে পড়ছে ‘রূপমুহুরী ঝর্ণা’র স্বচ্ছ পানির ধারা। আর প্রায় দেড়শ’ ফুট উঁচু থেকে ফেনা তুলে নাচতে নাচতে উপছে পড়ছে ‘পোয়ামুহুরী ঝর্ণা’র কুলুকুলু রবে বয়ে ছলা খরস্রোতা মাতামুহুরীর সিগ্ধতা গভীর  স্রোত।



সরেজমিন দেখা যায়, ‘রূপমুহুরী ঝর্ণার” পানি সবুজের আস্তর কেটে গড়িয়ে পড়ছে পাথুরে ভূমিতে। সুউচ্চ পাহাড় থেকে ঝরে পড়া পানি পাথরের আঘাতে কুন্ডলী পাকিয়ে প্রতিনিয়ত এক মনোমুগ্ধকর শৈল্পিক জলবিন্দু সৃষ্টি করে থাকে। বৃত্তকারে পাথরে ঘেরা পাহাড়ের বুকে এক ঝর্ণাদেবী যেন চঞ্চল প্রবাহে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করছে অহর্নিশ। সৃষ্টি করছে চারিপাশে জলের ধোঁয়াশা। সূর্যের কিরণ যখন ঝর্ণার বাষ্পীয় জলে পড়ে তখন তৈরী হয় রংধনু। এ যেন দুর্দান্ত এক অমলনি দৃশ্য। নিজের চোখে না দেখলে যা বিশ্বাস করা যায় না। এক পাহাড়ি রাণী যেন অবিরাম কেঁদে স্বচ্ছ নীরে ভাসছে অনন্ত কোন বিরহ বেদনায়! রূপমুহুরীর ঝর্ণার বিরহের জলে গোসল করে পর্যটকরা আনন্দ লাভ করে থাকে। দুর্গম পাহাড়ি জনপদে অবস্থিত এ ঝর্ণা দর্শনই একটা বিরাট এডভেঞ্চার। সবুজ পাহাড়ের কোলে লোকচক্ষুর আড়ালে এ ঝর্ণাটি পর্যটকদের কাছে এখনো অপরিচিতই থেকে গেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু কিছু পর্যটক ছুটে আসছেন এই প্রাকৃতিক ঝর্ণার অপরূপ শোভা দেখতে।


যেভাবে যেতে হবে : আলীকদম বাস স্টেশন থেকে রিক্সা কিংবা টমটম গাড়িতে চেপে মাতামুহুরী ব্রিজে আসতে হবে। ইঞ্জিন বোট এবং স্পীড বোটে চেপে মাতামুহুরী নদীপথে পোয়ামুহুরী বাজার ঘাটে নামতে হবে। বর্ষায় ইঞ্জিন বোট ভাড়া জনপ্রতি দু’শ টাকা ও শুষ্ক মৌসুমে স্পীড বোট ভাড়া ৪/৫ শ’ টাকা। রিজার্ভ ইঞ্জিন বোট কিংবা স্পীড বোটে ভাড়া ৫/৬ হাজার টাকা পড়বে।


আলীর সুড়ঙ্গ : ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসেবে ‘আলীর সুড়ঙ্গ’ এখনো এলাকাবাসীর মধ্যে আলোচিত হয়ে আছে। ‘আলীর সুড়ঙ্গ’কে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে নানা রূপকথা, কিংবদন্তি ও কল্প কাহিনী। শুষ্ক মৌসুমে অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমায় এ সুড়ঙ্গে। সুড়ঙ্গের গিরিপথ দুর্গম ও বন্ধুর। ইতোপূর্বে অসংখ্য পর্যটক, সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সুড়ঙ্গ পরিদর্শন করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চীনের পরিভ্রাজক হিওয়েন সাং বলেছেন, ‘নদী নাব্য জলাভূমির এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক নিদর্শনসমুহ অতি অল্প সময়েই হারিয়ে যায়’। চীনের এ পরিভ্রাজকের উক্তিটি আলীর সুড়ঙ্গের বেলায় প্রযোজ্য।



ডিম পাহাড় : আলীকদম উপজেলা সদর থেকে পাকা সড়ক গিয়ে মিশেছে ডিম পাহাড়ের পাদদেশে! অন্তর্বিহিন মৌন নিস্তব্ধ সৌন্দর্য। চারপাশে গ্রন্থিল পাহাড়িকা। আকাশ আর পাহাড় মিলেমিশে একাকার। বর্ষায় মেঘের ভেলা লুকোচুরি খেলা করে ডিম পাহাড়ের চূড়ায়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ২৭০০ ফুট উচ্চতায় ডিম পাহাড়ের ডিম পাহাড়ের অবস্থান। সম্প্রতি সেনা বাহিনী কর্তৃক আলীকদম-থানচি সড়ক নির্মাণের ফলে ‘ডিম পাহাড়’ স্থানীয়দের নজরে আসে। ডিম পাহাড়কে ঘিরে স্থানীয় প্রশাসনের পর্যটন স্পট গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। ডিম পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী নির্মিত রাস্তা থেকে দেখা যায় থানচি উপজেলার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।


মারাংইংতং জাদী : যেখানে পাহাড়ের বুকে হেলান দিয়ে আকাশ ঘুমায় সে ধরণের এক কাব্যিক মনোরম পরিবেশে মারাইংতং জাদীর অবস্থান। আলীকদম-লামা উপজেলার সীমান্তবর্তী প্রায় ২০০০ ফুট উঁচু পাহাড় চুড়ায় মারাইংতং স্থানটির অবস্থান। এ পাহাড় চুড়া থেকে প্রকৃতি আর নীলাকাশের সাথে যে কোন পর্যটক এককার হয়ে যেতে পারে। পাহাড় চুড়া থেকে সোজা পশ্চিমে বিশ্বের বৃহত্তম বেলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অনায়াসে দেখা যায়। তাছাড়া সেখানে দাড়িয়ে প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্যাদি অবলোকনের পাশাপাশি এক কাব্যিক পরিবেশের ছন্দময় প্রতিধ্বনী শোনা যায়।



আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ১৬/১৭ কিলোমিটার দুরে ‘মারাইংতং জাদীর’ অবস্থান। আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের রেপারপাড়ী এলাকা থেকে পাহাড় চুড়ায় যাওয়ার রাস্তা আছে। রেপারপাড়ী থেকে দক্ষিণমূখী ইটের রাস্তা দিয়ে আঁকা বাঁকা পাহাড়ী পথ মাড়িয়ে পাহাড় চুড়ায় উঠার জন্য রয়েছে কাঁচা মাটির রাস্তা। এই পাহাড় চূড়াকে সর্বপ্রথম বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা দৃশ্যপটে নিয়ে আসেন। ১৯৯২ সালে ১০ একর পাহাড়কে “মহইদই বৌদ্ধ ধাম্মা জেদী” নামে একটি কমিটির মাধ্যমে বন্দোবস্তি নেয়া হয়। ১৯৯৩ সালে সেখানে বান্দরবান ৪ হাত আয়তকার একটি বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপনা পার্বত্য জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৬ করা হয়। এ পাহাড় চূড়ায় স্থাপিত বৌদ্ধ জাদীকে ঘিরে প্রতি বছর ‘মারাইংতং মেলা’ নামের একটি উৎসব পালিত হয়ে থাকে। এ উৎসবে পার্শ্ববর্তী দেশ সমুহ থেকেও অসংখ্য বৌদ্ধ ভিক্ষু ও দায়ক/দায়িকার সমাগম ঘটে। প্রতি বছর ৩ দিন ব্যাপী এ সেখানে বৌদ্ধ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।


এছাড়াও, অসংখ্য পাহাড়ী ঝর্ণা-নির্ঝরণী এ উপজেলাকে করেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত। এখানকার তৈন খাল সংলগ্ন ‘তামাং ঝিরি ঝর্ণা’ ও ‘পালংখ্যাং জলপ্রপাত’ এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে করেছে রূপময়। যা দর্শক চিত্তে শিহরণ সৃষ্টি করবে অনায়াসে। শৈল সমারোহে সুষমামন্ডিত পার্বত্য আলীকদমে পর্যটন স্পটের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। মারাংতং পাহাড় চুড়াকে পর্যটনের অপার ক্ষেত্র হিসেবে এর উন্নয়ন ও সড়ক সংস্কার করা হলে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের যাতায়াতের অসুবিধা লাঘব হবে। পাশাপাশি “আলীর সুড়ঙ্গ”-এ যাতায়াতের জন্য তৈনখাল সন্নিহিত এলাকায় একটি ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে স্থানীয়রা জানান।

No comments

Powered by Blogger.