রোজা সম্পর্কে মানুষের ছয়টি পরিচিত ভুল ধারণা
·
অনেকে ভাবেন পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়, কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন এ ধারণা ভুল
·
রোজার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আকাঙ্ক্ষাকে সংযত করা, সে কারণে খাবার, পানীয় বা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বন্ধ রাখতে হবে
মুসলমানদের জন্য অতি পবিত্র রমজান মাস। যারা রোজা রাখেন, তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কিছুই মুখে দেননা।
মুসলিমরা বিশ্বাস করেন- স্বেচ্ছা নিয়ন্ত্রণ আর বেশি সময় ধরে প্রার্থনার ভেতর দিয়ে মুসলমানরা এ মাসে নতুন করে আত্মশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করেন।
আপাতদৃষ্টিতে রোজা সহজ সরল একটি ধর্মীয় আচরণের বিষয়, কিন্তু এটি নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা বিদ্যমান যেগুলো নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
রোজা নিয়ে সেরকম ছয়টি খুব সাধারণ ভুল ধারণার বিস্তারিত জানিয়েছে বিবিসি বাংলা যা তুলে ধরা হলো এখানে।
দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়
অনেক মানুষ মনে করেন পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু ইসলামি চিন্তাবিদরা বলেন, দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভাঙ্গে না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অল্প পরিমাণ পেস্ট নিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। এছাড়া মিন্টের গন্ধ কম এরকম পেস্ট ব্যবহার করুন। বেশি চিন্তা হলে গাছের সরু ডাল থেকে তৈরি মিসওয়াক বা দাঁতন ব্যবহারের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুখের লালা পেটে ঢুকলে রোজা থাকে না- এই বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই। তাদের মতে, নিজের লালা গলাধঃকরণ করা খুব স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া, এতে অবশ্যই রোজা ভাঙ্গে না। তবে, অন্যের মুখের লালা নিজের মুখে ঢুকলে রোজা থাকবে না। যার কারণে রোজা পালনের সময় আপনি আপনার সঙ্গীকে চুম খেতে পারবেন না বা অন্তরঙ্গ হওয়া যাবেনা। রোজার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আপনার আকাঙ্ক্ষাকে সংযত করা। সে কারণেই খাবার, পানীয় বা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বন্ধ রাখতে হবে।
শুধু খাবার অথবা পানি না খেলেই রোজা কবুল হয়ে যাবে
শুধুমাত্র খাবার মুখে দিলে বা পানি পান করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে তাই নয়। আরো কিছু আচরণে রোজা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আপনি যদি দুর্নাম রটান, গুজবে অংশ নেন বা কাউকে গালিগালাজ করেন, তাহলে রোজা কবুল নাও হতে পারে।
অসাবধানতা-বশত কিছু খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যায়
ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি যদি সত্যিই একদম ভুলে কিছু খেয়ে ফেলেন, তাহলেও আপনার রোজা বৈধ থাকবে, যদিনা আপনি বোঝার সাথে সাথে খাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু নামাজের আগে ওজুর সময় যদি আপনি অনিচ্ছাকৃত-ভাবে পানি খেয়ে ফেলেন তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ এই ভুল এড়ানো সম্ভব। এ কারণে রোজা রেখে অজু করার সময় গারগল না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। অজুর সময় আপনি শুধু কুলি করাই শ্রেয়।
ওষুধ খাওয়া যাবে না
মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) আন্তর্জাতিক গ্লুকোমা সমিতির সাথে যৌথ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে- রোজা রেখেও কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। যেমন, চোখের ড্রপ। এমসিবি বলেছে, চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ বা ইনজেকশনে রোজা ভাঙবে না। তবে যেসব ওষুধ মুখে দিয়ে খেতে হয়, সেগুলো নিষিদ্ধ । সেহেরির আগে এবং ইফতারির পর তা খেতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি অসুস্থ থাকেন, তাহলে ভাবেতে হবে আপনি রোজা আদৌ রাখবেন কিনা? কোরানে পরিস্কার বলা আছে, আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলুন।
যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবে
ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক (সাধারণত ১৫ বছর) এবং সুস্থ ব্যক্তির রোজা ফরজ বা আবশ্যিক করা হয়েছে। এমসিবি বলছে - শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা আবশ্যিক নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি স্বল্প সময়ের জন্য কেউ অসুস্থ হন, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর অন্য সময়ে তিনি ভাঙ্গা রোজাগুলো পূরণ করে দিতে পারেন
No comments