দাবদাহে পুড়ছে দেশ : এপ্রিল জুড়েই থাকবে তীব্রতা
তীব্র দাবদাহে পুড়ছে সারা দেশ। বৈশাখের তপ্ত গরমে দেশজুড়ে বিপর্যস্তজনজীবন। গরম ও অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। বাতাসে আগুনের ফুলকি উড়ছে। তীব্র গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে শ্রমজীবী মানুষের। হিট স্ট্রোকে গতকাল ৩জন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার (২০ এপ্রিল) যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকার তাপমাত্রা আরও বেড়ে এ মৌসুমে প্রথমবারের মতো ৪০.৪ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে এপ্রিলজুড়েই তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। দেশজুড়ে এমন খরতাপ পরিস্থিতিতে দেশের সব স্কুল-কলেজ সাত দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ঈদের ছুটি শেষে আজ খোলার কথা থাকলেও তা এখন খুলবে ২৮ এপ্রিল।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বয়ে যাওয়া তীব্র গরম আবহাওয়া সহসাই কমছে না। বরং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা ৪২-৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করতে পারে। অর্থাৎ হিট অ্যালার্ট বহাল থাকবে।
এপ্রিলজুড়েই এ অবস্থা চলবে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময়ে ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এতে তাপমাত্রা কমবে না।
সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা গণমাধ্যমকে বলেন, এপ্রিলে তাপমাত্রা বেশি থাকে। বর্তমানে যে তাপমাত্রা রয়েছে তা আরও বাড়তে পারে। তাপমাত্রা বাড়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে ৪২-৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করার আভাস রয়েছে।
তিনি জানান, চলতি মৌসুমে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দু-এক জায়গায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে তা তাপমাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
এদিকে গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। সেখানে তাপমাত্রা ছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঈশ্বরদীতে ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য থাকায় মানুষের শরীরে অস্বস্তি বেশি ছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল সন্ধ্যা ৬টার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৪৪টি পর্যবেক্ষণাগারের মধ্যে ১২টিতেই ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা ছিল। তাপমাত্রা ৪০-৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই তা তীব্র তাপপ্রবাহ হিসাবে গণ্য করা হয়। আর ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠলে তা অতি তীব্র দাবদাহ বলা হয়। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এপ্রিলে সাধারণত তাপমাত্রা বেশিই থাকে। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়; আগের ৯ বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল।
এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে বছরের ১৬ এপ্রিল আগের ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় দেওয়া আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা বিভাগে রয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর, ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের কিছু অংশে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে। উলেখ্যযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
এদিকে দেশের তাপমাত্রার বাড়ার সাথে সাথে সারাদেশে বাড়ছে রোগবালাই। বিশেষ করে শিশুরা ঠান্ডা কাশি জ্বর ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালসহ সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মহাখালির আইসিডিডিআরবিতে ডায়রিয়া আ্ক্রান্ত রোগীর ভিড় দেখা গেছে।
No comments