বদির ভাইদের ইয়াবা কারবারলব্ধ বিপুল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি
টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির আপন দুই ভাই আমিনুর রহমান ও আবদুর শুক্কুরের ইয়াবা কারবারের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেই সঙ্গে এই কারবারের মাধ্যমে অর্জিত তাঁদের বিপুল অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে অবৈধ টাকায় দুই ভাইয়ের কেনা ৬ দশমিক ৯ একর জমির সন্ধান মিলেছে। এসব সম্পদ জব্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে মাদকের মূল হোতাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য দেন সিআইডির প্রধান।
অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে মাদকের মামলা রয়েছে। এসব মামলার তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা পাব, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে যে-ই হোক না কেন। তাঁর (বদি) ভাই এবং তাঁদের অনুসারীদের সম্পৃক্ততা আমরা পেয়েছি। এই দুই ভাইকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। সেখানে যদি তাঁর (বদি) নাম আসে, তাঁকেও গ্রেপ্তার করব। মাদকের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
টেকনাফ ও কক্সবাজারে মাদক কারবারে বদির দুই ভাই কী ধরনের ভূমিকা রাখেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির প্রধান বলেন, ‘আমিনুর রহমান ও আবদুর শুক্কুর বিভিন্নভাবে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনেন। এরপর তাদের নিয়োজিত সহযোগীরা বিভিন্ন স্থানে সেসব পৌঁছে দেয়। এসব করে তারা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছে। এরই মধ্যে বদির ভাইদের ৬ দশমিক ৯ একর জমি শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ১ কোটি টাকা মূল্যের ৪০ শতাংশ জমির তথ্য পাওয়া গেছে। জমির তথ্য এখনো ডিজিটালাইজড হয়নি। ফলে মাঠপর্যায়ে নানাভাবে এই তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এ বিষয়ে আমরা পরবর্তীকালে আরও বিস্তারিত জানাতে পারব।’
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুর রহমান বদির ভাই আমিনুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের নামে যদি এত সম্পদ থাকে, আর তারা যদি আদালতে সেটা প্রমাণ করতে পারে তাহলে ব্যবস্থা আদালতই নেবে।’ অপর অভিযুক্ত আবদুর শুক্কুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
প্রাথমিকভাবে সিআইডি মাদকের ৩৫টি মামলা তদন্ত করে মাদকের মূল হোতা তথা গডফাদারদের ব্যাংকে রাখা নগদ অর্থ, কেনা জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির সন্ধান পায়। এসব মামলায় অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৭৮ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা। এসব বিষয়ে সিআইডির প্রধান বলেন, সিআইডি এরই মধ্যে উল্লিখিত মামলাগুলোর মধ্যে তিনটি মামলায় গডফাদারদের ৯ দশমিক ১৪ একর জমি, ২টি বাড়ি যার মূল্য ৮ দশমিক ১১ কোটি টাকা জব্দ এবং মাদকসংক্রান্ত মানি লন্ডারিং বিভিন্ন মামলায় ব্যাংকে রাখা ১ কোটি ১ লাখ ২৩ হাজার ৪২৫ টাকা ফ্রিজ করেছে। আরও ৩৫ দশমিক ১৭৩ একর জমি, ১২টি বাড়ি ও ১টি গাড়ি যার মূল্য ৩৬ দশমিক ৮২ কোটি টাকা জব্দের প্রক্রিয়া চলমান।
মাদকের মূল হোতাদের গ্রেপ্তার ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে সিআইডির প্রধান বলেন, ‘আপনারা জানেন, দেশে প্রতিবছর অন্তত ৮০ হাজার মাদক উদ্ধারসংক্রান্ত মামলা হয়ে থাকে। তবে যারা গ্রেপ্তার হয়, তাদের বেশির ভাগই মাদক বহনকারী ও সেবনকারী। অনেক সময় তদন্তকারী কর্মকর্তারা এই দুই শ্রেণির মধ্যেই তাঁদের তদন্ত শেষ করেন। ফলে আড়ালে থেকে যায় মাদকের গডফাদাররা।’
No comments