ইসলামের বৈশিষ্ট্য কোমলতা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, إن الله يحب الرفق في الأمر كله “আল্লাহ প্রতিটি কাজে কোমলতা পছন্দ করেন” (বুখারী, হাদীস নং ৬০২৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন-
إن الله رفيق يحب الرفق، ويعطي على الرفق ما لا يعطي على العنف، وما لا يعطي على ما سواه
“আল্লাহর তা’আলা নিজে কোমলময়, তিনি কোমলতাকে পছন্দ করেন। তিনি কোমলতার উপর যে প্রতিদান দেন, জোর বা কঠোরতার উপর তা দেন না, অনুরূপ অন্য কিছুর উপরও এত বেশি প্রতিদান দেন না” (মুসলিম, হাদীস নং ২৫৯৩)
মূলত: কোমলতা যাবতীয় কল্যাণের কারণ। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من يحرم الرفق يحرم الخير»
“যে ব্যক্তি কোমলতা থেকে বঞ্চিত হয়, সে যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয়”(মুসলিম, হাদীস নং ২৫৯২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন- «إن الله رفيق» ‘আল্লাহ কোমল’ এ কথার অর্থ হল, আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র, তিনি তাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠোরতা করতে চান না। আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষকে তাদের সাধ্যের বাহিরে কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না। আল্লাহ্ তা‘আলা ‘কোমলতা অবলম্বনের উপর প্রদান করার’ অর্থ তিনি সেটার উপর যে সাওয়াব দেন, অন্য কোন আমলের উপর এত বেশি সাওয়াব দেন না। কোমল ব্যবহারের উপর আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়াতে সুন্দর প্রশংসা কুড়ানোর তাওফিক দেন, উদ্দেশ্য সাধনে সফলতা দেন, এবং লক্ষ্য অর্জন করা সহজ করে দেন। আর আখিরাতে তার জন্য রয়েছে অধিক সাওয়াব, যা কঠোরতা করার কারণে অর্জন করা সম্ভব হয় না, আর যা অন্য কোনো আমলের কারণে লাভ করা যায় না।
বস্তুত: নমনীয়তা ও নরম ব্যবহার উত্তম চরিত্রেরই ফল এবং তারই অংশ।
বলা হয়ে থাকে যে, সবচেয়ে প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজ হচ্ছে, প্রতিটি বস্তুকে যথাস্থানে প্রয়োগ করা। কঠোরতার জায়গায় কঠোরতা এবং কোমলতার স্থানে কোমলতা, যেখানে তলোয়ার উত্তোলন করা দরকার সেখানে তলোয়ার উঠানো, আর যেখানে লাঠি উঠানো দরকার সেখানে লাঠি উঠানো। সুতরাং যাবতীয় চরিত্রে যেমন মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উত্তম, তেমনি কঠোরতা ও কোমলতা উভয়টির মধ্যেও মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উত্তম। কিন্তু যেহেতু মানব স্বভাব কঠোরতার প্রতিই বেশি ধাবিত হয় তাই মানুষকে কোমলতা অবলম্বন করার প্রতি বেশি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আর এ জন্যই কঠোরতার চেয়ে কোমলতা অবলম্বনের অধিক প্রশংসা করা হয়েছে।
সত্যিকার পূর্ণ তো সে-ই, যে ব্যক্তি কোথায় কঠোরতা করতে হবে এবং কোথায় কোমলতা অবলম্বন করতে হবে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। ফলে যেখানে যা করা দরকার সেখানে সে তাই করে। যদি কোন ব্যক্তির দূরদর্শিতা কম হয়, অথবা কোন ঘটনার পিছনে কি হিকমত আছে, তা না জানে, তাহলে তার জন্য কোমলতা অবলম্বন করা উত্তম। কারণ, অধিকাংশ সময় কোমলতার মধ্যেই সফলতা নিহিত থাকে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن الرفق لا يكون في شيء إلا زانه، ولا ينزع من شيء إلا شانه».
“যে কোনো কিছুতে কোমলতা অবলম্বন করা সেটার সৌন্দর্যকে নিশ্চিত করে। আর কোন কিছু থেকে কোমলতা তুলে নেয়া সেটাকে কলঙ্কিতই করে থাকে” (মুসলিম, হাদীস নং ২৫৯৪)
রাব্বুল আলামিন আমাদের জীবন ও চরিত্রে কোমলতাকে ধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
No comments