‘অমীমাংসিত’ প্রদর্শন উপযোগী নয় : সেন্সর বোর্ড
সিনেমার টিজার দেখে আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিল খুঁজে পান কেউ কেউ; আর সেন্সর বোর্ড বলছে, এ ‘ধরনের কাহিনি বাস্তবে ঘটেছে এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
নৃশংস খুনের বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মিল থাকার অভিযোগ তুলে পরিচালক রায়হান রাফীর 'অমীমাংসিত' সিনেমাটি আটকে দিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সরবোর্ড।
সিনেমার খুঁটিনাটি যাচাই করে বোর্ড বলছে, এতে নৃশংস খুনের দৃশ্য রয়েছে। কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপের বিষয়বস্তুর সঙ্গে বাস্তবতার মিল রয়েছে। যে কারণে তা জনসাধারণের মধ্যে ‘প্রদর্শন উপযোগী নয়’।
বুধবার 'অমীমাংসিত' সিনেমার প্রযোজক শহিদুল আলম সাচ্চুকে দেওয়া সেন্সর বোর্ডের উপপরিচালক মো. মঈনুদ্দীন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সিনেমাটির টিজার সামনে এলে দর্শকদের কেউ কেউ বলছিলেন, সিনেমাটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে বানিয়েছেন রাফী। কেউ আবার আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এর মিল খুঁজে পান। যদিও সিনেমা সংশ্লিষ্ট কেউ কিংবা সেন্সর বোর্ডও সরাসরি সাগর-রুনির নাম বলেননি।
সেন্সর বোর্ড থেকে সিনেমাটিকে ‘প্রদর্শনের অযোগ্য’ বলার কারণ হিসেবে যুক্তি দেওয়া হয়, “এতে নৃশংস খুনের দৃশ্য রয়েছে। কাল্পনিক কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপের বিষয়বস্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল রয়েছে। এ ধরনের কাহিনি বাস্তবে ঘটেছে এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। চলচ্চিত্রটির কাহিনী/বিষয়বস্তু বিচারাধীন মামলার সঙ্গে মিল থাকায় ভুল বার্তা দিতে পারে এবং তদন্তের বিঘ্ন ঘটাতে পারে।”
এর আগে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেন্সর বোর্ডের এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ সিনেমার গল্পের সঙ্গে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মিল রয়েছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড এখন আদালতে বিচারাধীন। এজন্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আপত্তি করা হয়েছে।”
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় খুন হন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং তার স্ত্রী এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আজও সেই হত্যা রহস্যের মীমাংসা করতে পারেনি।
সেন্সর বোর্ডের চিঠিতে বলা হয়, গত ৩ মার্চ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিনেমাটি পরদিন ৪ মার্চ সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা পরীক্ষা করেন। এরপর সেটি অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ২২ এপ্রিল বোর্ড সদস্যরা পুনরায় পরীক্ষা করেন। পুনরায় যাচাই শেষে বোর্ড সভায় চলচ্চিত্রটির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
“ওই সভায় সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা মত দেন, ‘দি কোড ফর সেন্সরশিপ অব ফিল্মস ইন বাংলাদেশ, ১৯৮৫ এর ১ এর প্রথম, পঞ্চম ও সপ্তম দফায় বর্ণিত উপাদানসমূহ বিদ্যমান থাকায় ‘অমীমাংসিত’ চলচ্চিত্রটি জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শন উপযোগী নয়।”
ফলে ‘দি বাংলাদেশ সেন্সরশিপ অব ফিল্মস রুলস, ১৯৭৭’ এর বিধি ১৬ (৫) অনুযায়ী চলচ্চিত্রটির সেন্সরপত্রের আবেদন বাতিল বা সেন্সরপত্র দিতে অস্বীকারের কথা জানায় সেন্সরবোর্ড।
তবে সিনেমাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চাইলে আপিল করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সেন্সর বোর্ডের উপপরিচালক মো. মঈনুদ্দীন।
গ্লিটজকে তিনি বলেন, “এ পত্র প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে সরকার বরাবর আপিল আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সিনেমা সংশ্লিষ্টরা চাইলে আপিল করতে পারবেন।”
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে ‘অমীমাংসিত’ মুক্তির ঘোষণা ছিল। কিন্তু সেন্সর বোর্ডের আপত্তির কারণে পেছানো হয় তারিখ। এরপর ঈদের বিশেষ চমক হিসেবে মুক্তির কথা জানানো হয়। সেটিও পরে হয়নি।
সেন্সর বোর্ডের আপত্তির বিষয়ে আইস্ক্রিনের প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ আহমেদ গ্লিটজকে বলেন, “তারা কেন এ সিনেমা নিয়ে আপত্তি করেছে, আমাদের বোধগম্য নয়, আমরা এখন আপিল করব।”
এর আগে নির্মাতা রায়হান রাফী গ্লিটজকে বলেছিলেন, “যে কোনো ধরনের গল্প নিয়েই তো সিনেমা হতে পারে। এই সিনেমায় আপত্তি করার মত কী আছে, ঠিক বুঝতে পারছি না।”
কী আছে সিনেমায় ?
কারা খুন করল অর্ণব আর নীরুকে? মুখোশধারী লোকগুলো কারা? এই অমীমাংসিত রহস্যের আদৌ কী জট খুলবে? গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ফেইসবুকে এই পোস্ট লিখেছিলেন নির্মাতা রায়হান রাফী, প্রকাশ করেছিলেন ‘অমীমাংসিত’ সিনেমার টিজার এবং পোস্টার।
টিজার প্রকাশের পর সোশাল মিডিয়ায় কিছু মন্তব্য থেকে আঁচ করা যায়, তারা আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করছেন। একযুগ পেরিয়ে গেলেও যে ঘটনার রহস্যের জট এখনো খোলেনি। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
৪০ সেকেন্ডের টিজারে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখিত সংলাপ আকারে তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলো এরকম- ‘খুনগুলো হয়েছে আনুমানিক রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে। ধারণা করছি, এটা কোনো চুরি ডাকাতি কেস..’; ‘সাংবাদিক, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবাই ক্রাইম জোনের আলামত নষ্ট করেছে। আমার করার কী ছিল’; ‘ওদের কেউ মারেনি। ওরা নিজেরাই নিজেদের খুন করেছে’; ‘এটা নিশ্চিত পরকীয়া কেস! নইলে সেদিন..’।
সিনেমার পোস্টারে দেখা যায়, মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও তানজিকা আমিন। তাদের পেছনে কয়েকজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে; যাদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা। তবে তারা কারা, এর উত্তর মিলবে মূল ছবিতে।
সিনেমাটি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিনা- এমন প্রশ্নে নির্মাতা রায়হান রাফী গ্লিটজকে বলেছিলেন, “সাংবাদিকের গল্প বলেই কেউ কেউ ধারণা থেকে বলছে, এটি সাগর-রুনির ঘটনা নিয়ে। এজন্যই সেন্সর বোর্ড থেকে সিনেমাটি দেখতে চেয়েছে। এখন কেন আটকে রেখেছে, জানি না।”
আইস্ক্রিনের প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, “এটি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা নিয়ে সিনেমা না। যদি আংশিক মিলেও যায়, তাহলে কি এটা বন্ধ করে দিতে হবে, আমি জানি না।”
সিনেমার গল্প প্রসঙ্গে রিয়াজ বলেন, “২০১৮ সালের এক দম্পতি খুনের ঘটনা নিয়ে এই সিনেমাটি। ঘটনাক্রমে সেই দম্পতি ছিলেন সাংবাদিক। এর জন্য হয়ত কেউ কেউ মনে করছেন, এটা সাগর-রুনির খুনের ঘটনা নিয়ে। আমরা কিন্তু তা বলছি না।”
No comments