ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সমরশক্তিতে কে এগিয়ে
ইসরায়েলে সরাসরি আক্রমণ করেছে ইরান। এই অবস্থায় অনেকের মনেই কৌতূহল জেগেছে, যুদ্ধ শুরু হলে কোন দেশ এগিয়ে থাকবে। একটি যুদ্ধে কেবল কোনো একটি দেশের অস্ত্র-গোলাবারুদই নিয়ামক ফ্যাক্টর নয়। দেশটির ভূপ্রকৃতি, রাজনৈতিক অবস্থা, অর্থনীতিসহ নানা কিছুই যুদ্ধ জয় বা হারের পেছনে ভূমিকা রাখে। তবে সম্মুখ সমরের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয় অস্ত্র-গোলাবারুদের পরিমাণ দিয়েই।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে ইরান। গ্লোবাল ফায়ার আর্মস ইনডেক্সের সর্বশেষ হিসাব বলছে, বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তিগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান যেখানে ১৪তম, সেখানে ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম। লোকবল, অর্থনীতি, ভৌগোলিক অবস্থান, সামরিক যান, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি বিবেচনায় ইরান ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে আছে।
গ্লোবাল ফায়ার আর্মসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, ইরানের সামরিক বাহিনীতে সক্রিয় সেনা আছে ৬ লাখ ১০ হাজার, যা বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ লোকবল। বিপরীতে ইসরায়েলের আছে মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজার সেনা। তবে ইরানের রিজার্ভ বাহিনীতে সেনাসংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার হলেও ইসরায়েলের এই সংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার।
আরো পড়ুন ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের জেরে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়াতে পারে যুদ্ধ
ইরানের আধাসামরিক বাহিনীর আকার যথেষ্ট বড়। দেশটির আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা যেখানে ২ লাখ ২০ হাজার, সেখানে ইসরায়েলের মাত্র ৩৫ হাজার আধাসামরিক সেনা আছে। সেনাসংখ্যা বেশি হলেও ইসরায়েলের চেয়ে ইরানের সামরিক বাজেট কম। ইরান যেখানে সর্বশেষ প্রতিরক্ষা খাতে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে, সেখানে ইসরায়েল দিয়েছে ২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
ইরানের যেখানে মোট ৫৫১টি বিমান আছে, সেখানে ইসরায়েলের আছে মোট ৬১২টি বিমান। এ ছাড়া, ইরানের যুদ্ধবিমান আছে ১৮৬ এবং ইসরায়েলের আছে ২৪৬টি। তবে সেনা ও রসদ পরিবহন সক্ষমতায় ইরান এগিয়ে। তেহরান যেখানে ৮৬টি ট্রান্সপোর্ট বিমানের মালিক সেখানে ইসরায়েলের আছে মাত্র ১২টি।
আকাশ সক্ষমতায় ইরানের চেয়ে ইসরায়েল যে এগিয়ে তার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যায় দুই দেশের হেলিকপ্টারের সংখ্যার তুলনা থেকে। ইরানের ১২৯টি সাধারণ হেলিকপ্টার ও ১৩টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার আছে। বিপরীতে ইসরায়েলের ১৪৬টি সাধারণ হেলিকপ্টার ও ৪৮টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার আছে।
স্থল আক্রমণের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের চেয়ে ইরান তুলনামূলক এগিয়ে। ইরানের ট্যাংক আছে ১ হাজার ৯৯৬টি এবং ইসরায়েলের আছে ১ হাজার ৩৭০টি। ইরানের সাঁজোয়া যান যেখানে ৬৫ হাজার ৭৬৫টি, সেখানে ইসরায়েলে এ ধরনের যান আছে ৪৩ হাজার ৪০৭টি।
গোলন্দাজ বা আর্টিলারি ইউনিটের ক্ষেত্রে ইসরায়েল-ইরানের শক্তিমত্তা প্রায় কাছাকাছি। ইরানের সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি ইউনিট আছে ৫৮০টি এবং ইসরায়েলের আছে ৬৫০টি। ইরানের টোয়েড আর্টিলারি আছে ২০৫০টি এবং ইসরায়েলের আছে মাত্র ৩০০টি। আবার ইরানের মোবাইল রকেট প্রজেক্টর আছে ৭৭৫টি, বিপরীতে ইসরায়েলের আছে মাত্র ১৫০টি। সার্বিক বিবেচনায় এই খাতে ইরান এগিয়ে আছে।
নৌশক্তির দিক থেকেও ইরান ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে। ইরানের সামগ্রিকভাবে যুদ্ধসংক্রান্ত নৌযান আছে ১০১টি, বিপরীতে ইসরায়েলের আছে মাত্র ৬৭টি। দুই দেশের কারওরই বিমানবাহী রণতরি নেই। তবে সাবমেরিনের ক্ষেত্রে ইরান এগিয়ে। দেশটির ১৯ সাবমেরিনের বিপরীতে ইসরায়েলের আছে মাত্র ৫টি।
ইরান বা ইসরায়েল কোনো দেশরই ডেস্ট্রয়ার নেই। তবে ইরানের ফ্রিগেট ৭টি, ইসরায়েলের নেই একটিও। তবে ইরানের করভেট যেখানে মাত্র ৩টি, সেখানে ইসরায়েলের আছে ৭টি। পেট্রল ভেসেলের ক্ষেত্রেও এগিয়ে ইসরায়েল। দেশটির ৪৫ নৌযানের বিপরীতে ইরানের আছে মাত্র ২১টি। তবে ইসরায়েলের কোনো মাইন ওয়ারফেয়ার শিপ না থাকলেও ইরানের আছে একটি।
No comments