প্রিয় নীলা, যেদিন প্রথম আমি তোমার দেখা পেলাম
প্রিয় নীলা,
যেদিন প্রথম আমি তোমার দেখা পেলাম;
সেদিন মনে হলো আমি হয়তোবা এমন কোনো এক নারীমূর্তি দেখছি,যা আগে কখনো দেখিনি।
তোমার কাছে আমি কিচ্ছুটি লুকোবো না নীলা।
তোমার আগেও আমার জীবনে অনেক নারী এসেছিলো।তাদের কেউ আমায় হাসিয়েছে,কেউ আমায় কাঁদিয়েছে,কেউ দাগা দিয়েছে,কেউ বাস্তবতা শিখিয়েছে।
এদের কাউকে যে আমি অস্বীকার করে তোমার কাছে ভালো সাজবো,সে ধৃষ্টতা আমি করবো না।এরা সবাই আমার ভেতরেরই অধিবাসী;হয়তোবা পাশে কেউ নেই।এরা যে আমার ভেতরে বসবাস করে তা আমি সবসময় টের পাইনে।
যখন কোনো নারী আমায় মুগ্ধ করে,তখন এদের কেউ আমার ভেতর থেকে হেসে ওঠে,কেউ ডুকরে কেঁদে ওঠে,কেউ মন খারাপ করে।এদের কেউই নিজেদের ভাগ কাউকে দিতে রাজি নয়।
তবে?
"নীলা,পৃথিবীতে একমাত্র সুন্দরী রমনী তুমি।"এরকম মিথ্যে কথা বলে তোমায় ক্ষণকালের জন্য খুশি করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।তবে তুমি ভয়ংকর রকমের সুন্দরী;ভয়ংকর রকমের সুন্দরী না হলে কিভাবে একজন চিরকুমারকে নিজের প্রেমে ফেললে বলো?যার জীবনের লক্ষ্য ছিলো আর কোনো নারীর মোহে পড়বেনা;নারীতে বিষ,নারীতে ক্ষতি।সেরকম একজন পুরুষকে তুমি একাধিকবারই নিজের প্রেমে ফেলেছো।
শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প। সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন
প্রেমকে অনেকে তুচ্ছজ্ঞান করে নীলা।তার সবই অজ্ঞতাবশত।প্রেম কোনোক্রমেই তুচ্ছ বস্তু না।"মানুষ নিজের প্রেমে পড়ার জন্যে আরেকজনের প্রেমে পড়ে।"আমার জীবনের এই বড় শিক্ষাটা তোমার প্রেমে পড়েই শিখেছি।
তোমার-আমার বয়সের পার্থক্য কত?সে হিসেবে আমি যাবোনা।বয়স কেবল একটা সংখ্যাই আমার কাছে।আমার যদি পঞ্চাশোর্ধ বয়সও হয়;তবেও আমি এই বিশ বছরের শান্তর ন্যায় দুরন্ত থাকবো।
তুমি যখন শ্রাবণের মেঘ হয়ে আমার আকাশে উঁকি দিলে,তখন আমার শহরের ঘাটে,মাঠে ছিলো তীব্র খরা।একটা তরু যে জন্মাবে,তার জন্যেও জল ছিলোনা।অথচ দেখো তুমি আজ কি করেছো আমার শহরের!মনে হচ্ছে এ শহর বোধহয় কখনো কান্নার বানে ভাসেনি;অথচ গত কিছুদিন আগেও আমার শহরে কান্নার বান ছুটেছিলো।
তুমি আসলেই একজন সাধারণ নারী।তোমার এই সাধারণ থাকার ব্যাপারটাই আমায় অধিক মুগ্ধ করে।
তুমি যখন এসেই গেছো,তাহলে থেকে যাও।
আর আমার ভেতরে থাকা সেই নারীদের কথা ভাবছো?তোমার প্রেমে যেদিন প্রথম পড়েছিলাম সেদিনই আমি আমার ভেতর থেকে তাদের মুক্তি দেয়ার জন্য উঠে-পরে লেগে যাই।বিশ্বাস করো নীলা,একেকটা সময় মনে হয়েছে নিজের পাজরে আঘাত হানছি;হৃদয় আমার খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু আমি দমে যাওয়ার পাত্র নই।আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি,সফলও হয়েছি।
নীলা,আমার জীবনে তুমি এক নতুন গতিবেগের সঞ্চার ঘটিয়েছো।এর আগেও আমি যে প্রেমে পড়িনি,ব্যাপারটা এমন না।অনেক নারীই আমায় মুগ্ধ করেছে।কিন্তু নীলা,তুমি আমায় যেভাবে নেশায় আচ্ছন্ন করে রেখেছো তা যে কখনো কেউ পারেনি;তা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।তোমার নেশা আমায় বারবার ঠেলে দেয় এমন এক তুমিময় শহরে,যেখানে চারপাশে শুধু তুমি আর তুমি।
নীলা,তুমি আমার জীবনকে রাহুর মতো গ্রাস করেছো বা করে যাচ্ছো তাও আমি বলবোনা।কোনো এক সূত্রে জেনেছিলাম কোনো এক দেবতাদের প্রধান এই রাহুর পেট কেটে দিয়েছিলেন;আর তখন থেকেই রাহু কোনো কিছু গলাধঃকরণ করার পর তা বের হয়ে যায়।রাহু আবারো সেই বস্তুকেই গ্রাস করে।এই গ্রাসের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যবধান থাকে।তুমি আমায় সে ফুরসত টুকুও দিচ্ছোনা নীলা।আমায় তুমি এমন ভাবে গ্রাস করে আছো যেনো আমি তোমায় ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারছিনে।
ইদানীং কেমন যেনো উন্মাদ হয়ে যাচ্ছি তোমার জন্যে।তোমায় ইদানীং খুব ভাবতে হয়।না ভাবলে,মনে হয় কেউ আমার ভেতরের অনন্ত স্বত্তাকে এতো সজোরে আঘাত করছে যেনো আমি মারা যাবো।
নীলা,মাঝে মাঝে নিজেকে দাগী আসামীও মনে হয়।তুমি যেন আমার বিচারক;আমার বিচার করতে বসছো।তোমার প্রেমে আমায় ডুবিয়ে মারবে নাকি প্রেমের ফাঁসিতে ঝোলাবে সে রায় দেয়ার জন্য ছক কষাকষি করছো।আর আমিও যেনো বদ্ধ উন্মাদের ন্যায় সে রায় শোনার জন্যেই উদগ্রীব হয়ে আছি।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যদি মহাবীর একিলিস হতাম,তা বেশ হতো।তুমি হতে ট্রয় নগরীর হেলেন।আমি আমার সমস্ত সৈন্য সহ ট্রয় নগরী ভেঙে-চুড়ে ধ্বংস করে দিতাম প্রিয়তমা শুধু তোমায় পাওয়ার জন্যে।
তোমায় পাওয়ার এ সাধ,
হবে কি পূরণ?না যাবে বাদ?
তোমার শহরে ঘুরে বেড়াই তোমায় দেখার মোহে।
ঘাসেরা গান গায়,
পাখিরাও নাচে হায়।
বসন্তেরই বাতাস বইছে এ কবির সর্বগাহে।
পাছে আছে কতো শালিক-চড়ুই,আমি ঘুঘুটি পুরুষ।
তোমায় ঘিরে মগজে মাজার প্রতিদিন হয় উরুস।
তোমায় নিয়ে লিখতে বসেছি তা কি হবে শেষ?
চলোনা হারাই কোনো দূর অজানায়;হয়ে নিরুদ্দেশ।
ইতি,
তোমার প্রিয় অসুখ
লেখা : সায়হাম শান্ত
No comments