ইস্পাহান : ইরানের যে শহরে ইসরায়েলি হামলা হয়েছে
জাগ্রোস পর্বতমালার কাছাকাছি ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইস্পাহানের ডাকনাম হলো—নেসফ-ই-জাহান, যার অর্থ অর্ধেক পৃথিবী। টালিযুক্ত মসজিদ, বাড়ি-ঘর এবং মিনারের জন্য বিখ্যাত এই শহর এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলগুলোই ইরানের ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঁতুড়ঘর।
শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুলনামূলকভাবে ইস্পাহান শহরের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আছে নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনা। ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এটি।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার সঙ্গে ইস্পাহানের নামটি যেমন জড়িয়ে আছে, তেমনি এই শহরটিকেই হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নেওয়ার একটি প্রতীকী তাৎপর্যও রয়েছে। যদি ইসরায়েল সেখানে হামলা চালিয়ে থাকে তবে দেশটির নেতানিয়াহু সরকার ইরানকে এটাই জানান দিতে চেয়েছে যে, তাদের স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে আঘাত করার ক্ষমতা দেশটির আছে। আর প্রয়োজন হলে এই আঘাত করা থেকে তারা বিরত থাকবে না।
হামলার পরই ইরানি কর্মকর্তারা দ্রুত ঘোষণা করেন, ইস্পাহান প্রদেশে তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ সুরক্ষিত আছে। বরাবরই ইরান দাবি করে আসছে, তাদের কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি ব্যবহার করে পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রে পরিণত হতে চাওয়ার অভিযোগ তারা অস্বীকার করে আসছে।
যা হোক, শহরটিতে বৃহস্পতিবার রাতের হামলা নিয়ে দেশটিতে পরস্পরবিরোধী প্রতিবেদন রয়েছে। ইরানের মহাকাশ সংস্থার মুখপাত্র হোসেইন দালিরিয়ান বলেছেন—হামলাকারী বেশ কয়েকটি ড্রোন সফলভাবে গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। আর একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে—এমন খবর তিনি অস্বীকার করেছেন।
ইরানের কিছু সংবাদমাধ্যম ইস্পাহান বিমানবন্দর এবং একটি সামরিক বিমান ঘাঁটির কাছে তিনটি বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে। তবে ইরান নিশ্চিত করেনি যে, হামলাটি ইসরায়েলই করেছে। দেশটির সেনা কমান্ডার-ইন-চিফ আবদোলরহিম মুসাভি ওই বিস্ফোরণের জন্য একটি সন্দেহজনক বস্তুর ওপর বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুলিবর্ষণের কথা বলেছেন।
ইরানি গণমাধ্যম এবং কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ঘটনায় তিনটি ড্রোন জড়িত ছিল এবং দেশের ভেতর থেকেই কোনো ‘অনুপ্রবেশকারী’ এগুলোকে উৎক্ষেপণ করেছে। ইস্পাহান বিমানবন্দরে ইরানের বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটি রয়েছে। এই ঘাঁটিতে দেশটির কিছু পুরোনো এফ-১৪ যুদ্ধবিমান রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে দেশটির শাহ সরকারের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই বিমানগুলো কেনা হয়েছিল। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানেও এই যুদ্ধবিমানগুলো এখনো সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।
ইস্পাহান এর আগেও সন্দেহভাজন ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শহরের মধ্যাঞ্চলে একটি গোলাবারুদ কারখানায় ড্রোন হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে ইরান। চারটি প্রপেলার সহ ছোট ড্রোনের সাহায্যে ওই হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের ড্রোন হামলার খবর পাওয়া গেছে। ইরান অভিযোগ করলেও ইসরায়েল নিশ্চিত করেনি যে, তারাই ওই হামলাগুলোর নেপথ্যে ছিল।
শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প। সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন
সর্বশেষ হামলার ঘটনায় যুক্তরাজ্য ও ন্যাটো পারমাণবিক বাহিনীর সাবেক প্রধান হামিশ ডি ব্রেটন-গর্ডন বিবিসিকে বলেছেন—ইস্পাহানকে লক্ষ্যবস্তু করা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর আশপাশে বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
তিনি জানান, যে ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার কথা বিভিন্ন মহল দাবি করছে, তা ইরান যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হয় তাঁর কাছাকাছি এলাকাতেই আঘাত হেনেছে। হামিশ বলেন, ‘ইসরায়েলের হামলাটি ছিল খুব সম্ভবত সক্ষমতা এবং অভিপ্রায়ের একটি প্রদর্শন।’
তাঁর মতে, ইরানি কর্মকর্তারা হামলাটিকে অনেক কমিয়ে দেখিয়েছে। কারণ তারা নিজেদের দুর্বলতা আর ইসরায়েলের সাফল্য প্রচার করতে চাননি। ইসরায়েল সামরিকভাবে ইরানকে ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে গেছে বলেও মনে করেন তিনি। তাই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধের বদলে ইরান বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাহায্যে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
No comments