Adsterra

আমাদের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ কী

আমাদের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ কী, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News

সমুদ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেল-গ্যাস পাওয়া গেলেও বর্তমান পর্যায় থেকে উত্তোলন পর্যায়ে যেতে কম-বেশি এক দশক সময় লাগতে পারে। সুতরাং দেশের জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় প্রথম নির্ভরতা স্থলভাগের ওপর।


ধরা যাক, যুদ্ধক্ষেত্রে কামান-বন্দুক সবই আপনার আছে। কিন্তু গোলা-গুলি নেই। ফল কী হবে তা সবাই বোঝে। জ্বালানি হচ্ছে ওই গোলা-গুলির মতো। আপনার যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। শিল্প, কলকারখানা আছে। মেট্রোরেল আছে। এসবই আরও করছেন। কিন্তু আপনার জ্বালানি নেই। তাহলে এর কোনোটিই চলবে না।


আবার চিত্রটি যদি বিপরীত হয়? অর্থাৎ আপনার প্রচুর জ্বালানি আছে। আর কোনো কিছু প্রয়োজনমতো নেই। তাহলে কী হবে? তাহলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে বিনিয়োগ করার জন্য। এই ত্রিপক্ষীয় বিনিয়োগে সবকিছুই দ্রুত হয়ে যাবে।


এই উপলব্ধি সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার। জ্বালানি খাতের টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে তাঁর এই উপলব্ধি। এর আগে এই পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার এমন উপলব্ধির কথা কখনো শুনিনি। হয়তো কারও কারও মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রকাশ করেননি। তিনি প্রকাশ করছেন এবং জ্বালানি খাতের ভিত শক্তিশালী করার জন্য সক্রিয় আছেন।


ইদানীং সরকারের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জ্বালানি খাতের উন্নয়ন নিয়ে, বিশেষ করে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন। কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তাঁদের অন্যতম। একটানা প্রায় ১৫ বছর ধরে তাঁরাই এ খাতের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেখানে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের উন্নয়নের বিষয়টি ছিল একপ্রকার উপেক্ষিত।


এখন বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েন, যুদ্ধবিগ্রহ এবং সেই কারণে জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিতিশীলতার চাপে পিষ্ট হয়ে দেশীয় জ্বালানি সম্পদের আহরণ বাড়ানোর প্রতি নজর পড়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসার প্রায় এক দশক পরে এবার দেশের সমুদ্র অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।


ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই কিনুন রকমারি থেকে।   বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই কিনুন রকমারি থেকে। 

বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন 

দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানোর জন্যও নতুন করে পিএসসি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর বাইরে দেশের বিদ্যমান ক্ষেত্রগুলো এবং চিহ্নিত এলাকায় নতুন কূপ খনন করে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো, দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ, পরিত্যক্ত কূপগুলো থেকে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন প্রভৃতি কাজ শুরু করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে দেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আমরা দৃষ্টিপাত করতে পারি।


নতুন কূপ খনন: এ বিষয়ে ২০২২-২৩ সালে গৃহীত যে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে তা হলো, নতুন এবং ওয়ার্কওভার (পুরোনো কূপের সংস্কার) মিলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এর মাধ্যমে দৈনিক মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১টি কূপ খনন সম্পন্ন হয়েছে। তাতে দৈনিক মোট ১২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে; যার মধ্যে ৩৩ মিলিয়ন জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন শুরু হয়েছে। আরও ৩টি কূপ খননের কাজ চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না যে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।


আরও বড় পরিকল্পনা: ইতিমধ্যে কূপ খননের আরও বড় একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে মোট ৬৯টি নতুন কূপ খনন এবং ৩১টি কূপে ওয়ার্কওভার (সর্বমোট ১০০টি কূপ) করার কথা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধির কথা দৈনিক ১ হাজার ৪৮৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ১০০ কূপের এই পরিকল্পনাটি আগের ৪৮টির তুলনায় অনেক বেশি সুসংহত। কেননা, সরকারি খাতের ৩টি উত্তোলন কোম্পানি-বাপেক্স, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফএল) শনাক্ত করা সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় স্থান যাচাই-বাছাই করে পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজও ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, এই ১০০ কূপের মধ্যে নতুন যে ৬৯টি করা হবে, এর ৫২টি করবে বাপেক্স। বিজিএফসিএল করবে ৯টি এবং এসজিএফএল করবে বাকি ৮টি। ওয়ার্কওভার করার জন্য নির্ধারিত ৩১টি কূপ ওই ৩টি কোম্পানি নির্ধারণ করেছে এবং যার যার অংশ সেই সব কোম্পানি বাস্তবায়ন করবে।


১০০টি কূপের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার অনুদান হিসেবে দেবে ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা (৬৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ) এবং ৩টি কোম্পানির গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও নিজস্ব অনুদান হবে ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা (৩০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ)। এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা বাড়ানোর সাফল্য। তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক, পেট্রোবাংলা এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।


পরিত্যক্ত কূপে পুনরুৎপাদন: পেট্রোবাংলার গঠিত একটি কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে মোট ৯৮টি পরিত্যক্ত (বিভিন্ন কারণে সাময়িক বন্ধ) কূপ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৭টি কূপ ওয়ার্কওভার করে পুনরায় গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন বাড়তে পারে দৈনিক ২২০ থেকে ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য, এক দশকের বেশিকাল আগে একটি বিদেশি কোম্পানির সহায়তায় পেট্রোবাংলা পরিত্যক্ত কূপগুলোতে পুনরুৎপাদন শুরুর বিষয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে ‘সীমিত ব্যয়ে এবং স্বল্পতম সময়ে’ প্রায় একই পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু দেশে গ্যাসের সংকট থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে তখন সেই কাজে হাত দেওয়া হয়নি।


ভূকম্পন জরিপ: সবারই জানা আছে যে আজ পর্যন্ত দেশের জ্বালানি সম্পদের কোনো পূর্ণাঙ্গ ঠিকুজি (রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট) করা হয়নি। এটি করার জন্য দরকার দেশব্যাপী ভূকম্পন জরিপ (সাইসমিক সার্ভে) চালানো। প্রথমে দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) এবং তারপর সম্ভাবনাময় এলাকগুলোয় ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি)। এবার সেই কাজও প্রায় সম্পন্ন করার একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, দেশের যেসব অঞ্চলে আগে কোনো ভূকম্পন জরিপ চালানো হয়নি তার প্রায় পুরোটাই প্রথমে দ্বিমাত্রিক এবং পরে ক্ষেত্রবিশেষে ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানো হবে।


এর বাইরে রয়েছে সমুদ্র অঞ্চল—যে বিষয় আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও যে কথাটি বলে রাখা দরকার তা হলো, সমুদ্র অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তেল-গ্যাস পাওয়া গেলেও বর্তমান পর্যায় থেকে উত্তোলন পর্যায়ে যেতে কম-বেশি এক দশক সময় লাগতে পারে। সুতরাং দেশের জ্বালানি ঘাটতি মোকাবিলায় প্রথম নির্ভরতা স্থলভাগের ওপর। আর পেট্রোবাংলা যে হিসাব-নিকাশ করেছে সেই অনুযায়ী, ২০২৯-৩০ সালে দেশে গ্যাসের চাহিদা হবে দৈনিক ৫ হাজার ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট। আর আমদানি করা এলএনজিসহ মোট সরবরাহ দাঁড়াবে ৪ হাজার ৩৫২ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলা অবশ্য ২০৪০-৪১ সাল পর্যন্ত হিসাব-নিকাশ করেছে। তখনো যে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি পূরণ হবে—এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।

No comments

Powered by Blogger.