প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় নির্দেশিকা প্রকাশ
দেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত আর্দ্র মাসগুলোতে এই পরিস্থিতি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী, নবজাতক ও শিশুর ক্ষেত্রে উচ্চ তাপজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় জাতীয় গাইডলাইন বা নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
আজ রোববার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। অন্তঃসত্ত্বা নারী, শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে উচ্চ তাপজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দিতে ইউনিসেফের সহায়তায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশে গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা বাড়ায় জনগণকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। ঢাকার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি হলেও শহরে এর তীব্রতা অনেক বেশি ছিল। কারণ, শহরাঞ্চলে নির্বিচারে গাছপালা কাটা হয়েছে। এদিকে যদি নগরবিদেরা ব্যবস্থা নেন, তাহলে তীব্রতা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কীভাবে এই গরমে মানুষকে সুস্থ রাখা। তাপপ্রবাহ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে তখনই এই নির্দেশিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই কিনুন রকমারি থেকে।
নির্দেশিকাকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে চিকিৎসকদের এই নির্দেশিকার আলোকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
গাইড লাইন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ এমা ব্রিংহাম প্রমুখ।
গাইডলাইনে গরম মোকাবিলায় জনসাধারণেরও সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে ‘বিইএটি দ্য হিট’ কাঠামো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইংরেজি কিছু শব্দে ‘বিইএটি’ লেখা হয়েছে। যেটিকে বাংলায় লিখলে বলা যায়, গরমজনিত চাপ সম্পর্কে সচেতন থাকুন (Be Aware); লক্ষণগুলো সহজে শনাক্ত করুন (Easily Identify); নিজের ও অন্যের সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিন (Act Immediately) এবং কারও গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান (Take)।
গাইডলাইনে বলা হয়েছে, গরম থেকে দূরে থাকতে হবে ও মাঝেমধ্যে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হতে হবে। সারা দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে একবারের বেশি গোসল করতে হবে। ঢিলেঢালা পাতলা কাপড় পরতে হবে ও সম্ভব হলে রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে।
অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে গরমের আগেই করণীয় সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রচণ্ড গরমে প্রয়োজন না হলে বয়স্ক, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিশুদের তরল খাবার খাওয়ানো ও নবজাতকদের নিয়মিত মায়ের দুধ পান করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দিনের প্রথম দিকে অথবা বিকেলে যখন তাপমাত্রা কম থাকে, তখন নির্ধারণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ লক্ষ করা যাচ্ছে। সাধারণত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত গরম বেশি অনুভূত হয়।
No comments