সন্ত্রাসীদের অনেকেরই আশ্রয়দাতা গোপালদা
ভারতে গিয়ে সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার নিখোঁজের খবর যখন প্রকাশ হয়, তখন প্রথমেই যাঁর নাম সামনে আসে, তিনি হলেন কলকাতার গোপাল বিশ্বাস। পেশায় সোনা ব্যবসায়ী এই ব্যক্তি কলকাতা শহরের মণ্ডলপাড়া লেনের বাসিন্দা। নিখোঁজ হওয়ার আগে এমপি আনার তাঁর বাড়িতেই ছিলেন। শুধু এমপি আনার নন, বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যাওয়া আরও অনেকেই বিভিন্ন সময় গোপালের বাড়িতে উঠেছেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
দুই দেশের গোয়েন্দারা বলছেন, গোপালের যে বাড়িতে এমপি আনার গিয়েছিলেন, সেখানে গোপাল ছাড়া আর কেউ থাকেন না। শুধু বাংলাদেশ থেকে পরিচিত কেউ গেলে সেখানে থাকতে দেন তিনি।
বর্তমানে ও অতীতে ভারতে আত্মগোপনে থাকা বাংলাদেশি দুই সন্ত্রাসীর পরিবারে কলকাতার গোপাল নামের এক ব্যক্তি নিয়ে বেশ চর্চা আছে। ২০১২ সালে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ঢাকার অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী শহিদুল ইসলাম ওরফে ‘ডাকাত শহিদ’। ২০২২ সালের নভেম্বরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে অন্য একটি প্রতিবেদনের জন্য কথা হয় তাঁর বড় ভাই নূরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে। তখন তিনি বলেন, শহিদ দীর্ঘ দিন কলকাতায় পলাতক ছিলেন। তখন সেখানে তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন গোপাল নামে এক ব্যক্তি, যাঁকে শহিদ দাদা বলে ডাকতেন। তবে শহিদের আশ্রয়দাতা গোপাল দাদা এমপি আনারের বন্ধু গোপাল কি না সে তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের অপরাধীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে গোপালের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। ওটা তো ভিন্ন বিষয়। এখন মূল বিষয় হলো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত আছে, তাঁদের খুঁজে বের করা। তবে এখন পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে গোপাল বাবুর কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার নিখোঁজের তথ্য জানিয়ে কলকাতার থানায় সাধারণ ডায়েরিটি করেন গোপাল বিশ্বাস। সেখানে তিনি এমপি তাঁর পারিবারিক বন্ধু বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এমপি আনার খুনের খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে বরানগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাসের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে শহর ছেড়ে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নানা মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি মণ্ডলপাড়া লেনের বাড়িতে নেই। চিকিৎসার জন্য কলকাতার একটি নার্সিং হোমে আছেন। সেই নার্সিং হোমের নাম জানা যায়নি। তবে আনারের পরিবারের সঙ্গে তাঁর সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে।
আনারের ব্যক্তিগত সহকারী রউফ বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আমাদের তরফ থেকে তাঁর প্রতি কোনো সন্দেহ নাই। ওনার সঙ্গে ২০ বছরের পারিবারিক সম্পর্ক। এখনো প্রতিনিয়ত এমপি সাহেবের মেয়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তিনি এখন নার্সিং হোমে আছেন চিকিৎসার জন্য। আমরা যতটুকু জেনেছি, তাঁর করা অভিযোগটি (১৮ মের জিডি) কলকাতা পুলিশ মামলা হিসেবে নিয়েছে।’
গোপালের বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগের বিষয়ে কলকাতার বরানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতীশ চ্যাটার্জি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টিই এখন সিআইডি (ভারতীয়) দেখছে। কোনো কিছু জানার থাকলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
No comments