Adsterra

কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে আনা দরকার

কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে আনা দরকার, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যে কারণে বাড়ে, ওষুধপত্রের দাম সংগত কারণে বাড়তে পারে। কারণ ওষুধের কাঁচামাল এখনো বাইরে দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কাঁচামালের সঙ্গে ডলারের দামের তারতম্য হলে স্বাভাবিকভাবেই ওষুধের দাম বাড়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার ওষুধের দাম বাড়তে দেবে কি না। কারণ অন্য দশটি জিনিসের মতো ওষুধের বিকল্প হয় না।


ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ওষুধের দাম বেড়ে গেলে যদি মানুষ ওষুধ কিনতে না পারে, নিয়মিত ওষুধ খেতে না পারে, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার পরিবার, সমাজ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য সরকারকে সতর্ক থাকা উচিত। তিনি বলেন, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় হলো কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে দেওয়া। আরেকটা হলো, ওষুধ কম্পানিগুলোর প্রমোশন ও মার্কেটিং খরচ কমিয়ে আনা। বিশেষ করে চিকিৎসকদের কমিশন কমিয়ে দেওয়া। এ কাজটি সব ওষুধ কম্পানিকে এক হয়ে করতে হবে।


গত এক দিন আগে অবসরকালীন ছুটিতে যাওয়া ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক ও আইন কর্মকর্তা নুরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে প্রায় এক হাজার ৭০০ জেনেরিক ওষুধ রয়েছে। এর মধ্যে ১১৭টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার। বাকিগুলো কম্পানি নিজেরাই নির্ধারণ করে ঔষধ প্রশাসন থেকে অনুমোধন নেয়। তারা কাঁচামাল, উৎপাদন খরচ, প্যাকেজিং খরচের বিষয়ে জানিয়ে ভ্যাট প্রদানের নিমিত্তে মূল নির্ধারণের জন্য ঔষধ প্রশাসনে দাখিল করে। ঔষধ প্রশাসন যাচাই-বাছাই শেষে অনুমোদন করে।’


ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মাসে এসব ওষুধের দাম বেড়েছে। কম্পানিগুলো ধাপে ধাপে নিজেদের ওষুধের দাম বাড়ানো অব্যাহত রাখলেও ভোক্তারা বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছে বিক্রেতাদের সঙ্গে।


হাটহাজারীর চৌধুরীহাটের আরাফাত টাওয়ারের পাশে একটি ওষুধের দোকান রয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দোকানের বিক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ৪ মার্চ থেকে সর্বশেষ বর্ধিত দাম অনুযায়ী আমরা ওষুধ বিক্রি করছি। কিন্তু ওষুধ কিনতে আসা বিভিন্ন রোগী ও স্বজনরা দাম বেড়েছে শুনে আমাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছে।’ 


তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিকের ওষুধ খাচ্ছেন এক রোগী। আজ (গতকাল) সকালে ওই রোগী ‘গ্লিপিটা’ ট্যাবলেট খেয়ে এলেও দাম বেড়ে যাওয়ায় (প্রতি বক্সের ৩০ ট্যাবলেট দাম ৪২০ থেকে এখন ৪৮০ টাকা) পরে দাম না বাড়ানো ‘সিগ্লিমেট’ কেনেন। ‘গ্লিপিটা’ প্রতি ট্যাবলেট এখন ১৬ টাকা এবং ‘সিগ্লিমেট’ ১৪ টাকা।


গতকাল চট্টগ্রাম নগরে ওষুধের পাইকারি বাজার হাজারী লেন গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি দোকান বেশির ভাগ বন্ধ। খুচরা কয়েকটি দোকান খোলা। বিকেল পৌনে ৩টার দিকে রশিদ মার্কেটের প্রবেশমুখে এক দোকানের বিক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওষুধ বিক্রি করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আমরা তো দাম বাড়াইনি। কিন্তু দাম বেশি দেখে আমাদের সঙ্গে ক্রেতাদের ঝগড়া হচ্ছে।’

হাজারী লেন থেকে ওষুধ কেনা জমির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, “আগে প্রেশারের ওষুধ ‘বিসোরেন’ ২.৫ এমএল ট্যাবলেট কিনেছি ১৮০ টাকায় (প্রতি বক্সে ৩০টি)। আজ (গতকাল) নিল ২১০ টাকা। ওনারা (বিক্রেতা) বলেছেন, এক সপ্তাহ ধরে নতুন নির্ধারিত দামে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।”

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক আশীষ ভট্টাচার্ষ গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওষুধ কম্পানিগুলো গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ওষুধের দাম বাড়িয়েছে। ভোক্তারা ওষুধ কিনতে এসে দাম বাড়ার বিষয়টি নিয়ে নানা কথা বলছে। তাদের সব প্রশ্নের সদুত্তর আমরা দিতে পারছি না। তবে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে ওষুধের কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে ওষুধের দাম বেড়েছে।’

ঔষধ প্রশাসন চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এস এম সুলতানুল আরেফিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার থেকে অনুমোদন নিয়ে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ার কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, তা ঠিক। কমবেশি সব কম্পানির বিভিন্ন ওষুধের দাম ধাপে ধাপে বাড়ছে। একসঙ্গে নয়।

ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, কোনো ওষুধের দাম বাড়েনি। তবে সব প্রতিষ্ঠান ওষুধের দাম বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে।

তাহলে দোকানে কেন ওষুধের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাতে গোনা দু-তিনটি ওষুধের দাম বাড়লেও বাড়তে পারে। তবে বাজারে যেসব ওষুধের দাম বাড়তি, সেগুলো ছয় মাস আগে বেড়েছে।

শফিউজ্জামান বলেন, মূল্যবৃদ্ধির পর বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে তা কার্যকর হতে দু্ই-তিন মাস বা এরও বেশি সময় লাগতে পারে। ওষুধের সরবরাহ, মজুদের ওপরও এগুলো নির্ভর করে।

No comments

Powered by Blogger.