কে এই অঞ্জন দত্তের মালা
তোমার জঙলা পাড়ের ঢাকেশ্বরী শাড়ি/তোমার পিসিচন্দ্রের ঝুমকো কানের দুল/আজ ১২ মে তাই সকাল থেকে/জন্মদিনের তোড়া তোড়া ফুল... আজ মালার জন্মদিন। নিছক একটি গানের চরিত্র ‘মালা’। এ দেশের অনেক তরুণ, বা তারুণ্য পেরিয়ে যাওয়া অনেকেই মালার জন্মদিন পালন করেছেন বা করেন। কিন্তু কে এই মালা? এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি কত কত বছর পেরিয়ে গেলেও।
সেই ১৯৯৩ সালে রিলিজ হয় ‘মালা’ শিরোনামের গানটি। তারপর থেকেই মালা একজন কিংবদন্তি, অধরা। অঞ্জন দত্তের গানের এই চরিত্রকে নিয়ে যে রহস্য তৈরি হয়েছিল, তা এখনো শীতের সকালের মতোই ঝাপসা। অঞ্জনের এই গানের সুর মৌলিক নয়, তা নিজেই জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়। পিটার সারস্টেডের ‘হোয়্যার ডু ইউ গো টু মাই লাভলি’ গান থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘মালা’। মানে পিটারের গানের সুরে ভেসে এসেছিল যে চরিত্র, তাঁর নাম মেরি।
সেই একই সুরের ওপর অঞ্জন দত্ত নির্মাণ করলেন মালাকে। এই মালা হয়তো পুরোটাই কল্পনার আশ্রয়ে তৈরি নয়- অঞ্জনের ভক্তরা নানা সময়ে নিজেদের মত দিয়েছেন। মেরি ক্ল্যার নেপলসের বস্তির এক দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে আলোক ঝলমলে দুনিয়ায় নিজেকে বিস্তৃত করেছিলেন। আবার মালার বাড়িতেও কফি খেতে আসতেন ইমরান খান।
অর্থাৎ মালাও যে একসময় রাস্তার মোড়ে কিংবা বস্তির রাস্তায় হেঁটে চলতেন, বাস স্টপে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে প্রেমিকের কথা শুনতেন- এখন তিনি কত বড় তা সহজেই অনুমেয়- জন্মদিনে গোটা পৃথিবী যেন কুর্নিশ করে তাঁকে। অঞ্জন দত্ত তাঁর গানেই বলেছেন, ‘দমদমে নামলে তোমারই বাড়িতে কফি খায় ইমরান খান।’
অঞ্জন নানাভাবেই মালাকে বর্ণনা করেছেন। তবুও এই মালার চেহারা দেখা যায়নি। হয়তো অঞ্জনভক্তরা ভেবেছিলেন মালার রহস্য উন্মোচন হতে যাচ্ছে সাজ্জাদ হুসাইনের ‘অঞ্জনযাত্রা’ বইয়ে।
কিন্তু গোটা বইয়ে তন্ন তন্ন করে মালাকে পাওয়া যায়নি। এতে ধরে নেওয়া যায়, মালাকে নিয়ে গান বেঁধেছেন, হয়তো ভক্তরা সেটাকে নিয়েছেন পছন্দের তালিকায়। কিন্তু গানে ছড়ানো বিষণ্ণতা কিংবা আক্ষেপ ছিল। সেটা স্পর্শ করতে পারেননি ভক্তরা। ফলে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, মালাকে খুঁজে বের করার।
তোমার সাজানো শরীরের ভেতরে, মালা তুমি কে, তুমি কে? তোমার কথা বলা যেন মধুবালা, তোমার হাঁটাচলা সোফিয়া লরেন; তোমার গন্ধ ফরাসী আনায় আনায়, অভিমান অপর্ণা সেন... এই লাইনগুলোতেও কেউ কেউ মালাকে খুঁজে ফিরেছেন।
অনেকেই হলফ করে বলেছেন, অঞ্জনের মালার পেছনে যে অবয়বটি লুকিয়ে রয়েছে, সেটা মুনমুন সেনের। এখানে দুটি যুক্তি সোজাভাবেই চলে আসে। এক- মায়ার চলাফেরা কিংবা মাকে অনুসরণ করে চলার বিষয়টি চলে আসে। আর দ্বিতীয় যুক্তিটি হলো- ‘দমদমে নামলে তোমারই বাড়িতে কফি খায় ইমরান খান।’
ইমরানের কাছে কলকাতা নাকি খুব পছন্দের শহর ছিল। যার কারণ ছিলেন মুনমুন সেন। তখন পাকিস্তানি ক্রিকেটার ইমরান খানের সঙ্গে অভিনেত্রী মুনমুন সেনের চুটিয়ে প্রেম করার গুঞ্জন রটেছিল, তবে এটি গুঞ্জনই থেকে গেছে।
যার ফলে ইডেন গার্ডেনে খেলা বা দমদম বিমানবন্দরে পা দিলেই ইমরান খান কলকাতা শহরের একজনের বাসায়ই যান- তিনি মুনমুন সেন। এমনই গুঞ্জনকে স্পষ্ট করতে গিয়েও ধোঁয়াশা রেখে দিয়েছেন অঞ্জন। কিন্তু শ্রোতারা শেষ পর্যন্ত নিজেদের মতো করেই মালাকে খুঁজে নেন, জন্মদিন এলে, ১২ মে এলেই।
আর মালা এমনই জীবন্ত কিংবদন্তি, এমনই প্রেম মালার প্রতি প্রেম তাই ২০২৪ সালের ১২ মে ঢাকাতেও কেক কাটতে হলো অঞ্জনকে।
No comments