মুমিনের জীবন সুন্দর হয় যেসব গুণে
জীবন চলার পথে মুমিনকে বেশ কিছু বিষয় ও বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হয়। যে বিষয় ও বৈশিষ্ট্যে তার জীবন হয় সুন্দর। আর এসব গুণের কারণে একজন সাধারণ মুমিন প্রকৃত ইমানদার এবং আল্লাহর প্রিয় হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। হাদিসের আলোকে মুমিনের এমনই কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো।
পারস্পরিক আন্তরিকতা : শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর ভালোবাসা ও আন্তরিকতার সম্পর্ক তৈরি করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন সবার আপন হয়, আন্তরিক হয়। যে আন্তরিক হয় না এবং যার সঙ্গে আন্তরিক হওয়া যায় না, তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ)
সৌজন্যমূলক আচরণ : মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে নানারকম মানুষের সঙ্গে চলতে হয়। মানুষের সঙ্গে চলতে গিয়ে অনেক সময় ন্যক্কারজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। কেননা অনেক মানুষ হয় উগ্র স্বভাবের। তাদের আচরণ হয় রুক্ষ প্রকৃতির। তারা প্রায় সময় অন্যের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে ফেলে। মুমিন তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে? হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে মুসলিম মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্য ধারণ করে, সে এমন মুসলিমের চেয়ে উত্তম যে, মানুষের সঙ্গে মেলামেশাও করে না এবং তাদের দেওয়া যন্ত্রণায় ধৈর্যও ধরে না।’ (তিরমিজি)
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই কিনুন রকমারি থেকে।
মানসিক শক্তি : মুমিন ব্যক্তি কখনো মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে না। মুমিন ব্যক্তি মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিধর ইমানদার দুর্বল ইমানদারের তুলনায় আল্লাহর কাছে উত্তম ও অধিক পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ নিহিত আছে। যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করো। তুমি অক্ষম হয়ে যেও না।’ ( সহিহ মুসলিম)
সরলতা ও ভদ্রতা : সরলতা মুমিনের বিশেষ গুণ। মানুষের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে মুমিন হয় অত্যন্ত সরল এবং কথাবার্তা ও কাজকর্মে হয় অত্যন্ত চিন্তাশীল। এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি চিন্তাশীল, গম্ভীর ও ভদ্র হয়ে থাকে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি প্রতারক, ধোঁকাবাজ, কৃপণ, নীচ ও অসভ্য হয়ে থাকে।’ (তিরমিজি)
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা : পৃথিবীর জীবনে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সবার জীবনেই আসে। কিন্তু এই দুঃখ-সুখের মাধ্যমেও আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকরগুজার করে আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হলে ধৈর্য ধারণ করে। প্রত্যেকটাই তার জন্য কল্যাণকর।’ ( সহিহ মুসলিম)
অন্যায়ের প্রতিবাদকারী : মুমিনরা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করে না। অন্যায় হতে দেখলে মুমিন প্রতিবাদ করে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় হতে দেখে, সে যেন সম্ভব হলে তা হাত দ্বারা রুখে দেয়। আর এটা সম্ভব না হলে প্রতিবাদী ভাষা দিয়ে তা প্রতিহত করে। আর তাও না পারলে সে যেন ওই অপকর্মকে হৃদয় দ্বারা বন্ধ করার পরিকল্পনা করে অর্থাৎ মনে মনে ঘৃণা করে, এটি দুর্বল ইমানের পরিচায়ক।’ (তিরমিজি)
No comments