Adsterra

অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে অপকর্ম করেন ইজি ফ্যাশনের কর্ণধারেরা

 

অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে অপকর্ম করেন ইজি ফ্যাশনের কর্ণধারেরা, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News

উত্তরাধিকার সনদ জালিয়াতি করে জমি লিখে নেওয়া, অর্থ-আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ইজি ফ্যাশনের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের বিরুদ্ধে।


নরসিংদীর পলাশ উপজেলার সান্তানপাড়া গ্রামসহ আশপাশের প্রায় সব গ্রামেই তাদের জালিয়াতির থাবায় অনেক পরিবার আজ নিঃস্ব। কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তুললেই বিভিন্ন মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। যার কারণে কেউই তাদের বিরুদ্ধে এখন কিছু বলতে সাহস পায় না।


জানা গেছে, ইজি ফ্যাশন ব্র্যান্ডের চেয়ারম্যান আসাদ চৌধুরী, তার দুই ভাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইছাদ চৌধুরী ও পরিচালক তৌহিদ চৌধুরী পলাশ উপজেলার সান্তানপাড়া গ্রামের আব্দুল করিম চৌধুরীর ছেলে।


তারা তিন ভাই অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করেছে। ২০১৮ সালে উত্তরাধিকার সনদ জালিয়াতি করে নিজেদের লোককে ক্রেতা সাজিয়ে ৪টি জাল দলিল তৈরি করে প্রায় ৪ বিঘা জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ আছে বিরুদ্ধে।


এ ঘটনায় তৎকালীন ডাঙ্গা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল একটি মামলা করেন। মামলায় আসাদ চৌধুরী, ইছাদ চৌধুরী ও তৌহিদ চৌধুরীকে আসামি করা হয়। সে মামলায় একই বছরের ১৯ জুন তিন ভাই নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। কিছুদিন জেল খেটে পরে জামিনে বের হন তারা।


মামলার বিবরণ ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, জালাল উদ্দিনের সই নকল করে জমির প্রকৃত মালিকদের উত্তরাধিকার সনদ তৈরি করে জমি কেনাবেচার নথিপত্র তৈরি করা হয়। এক পক্ষকে বিক্রেতা দেখিয়ে ৪টি জাল দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করার পর তিন ভাই আসাদ চৌধুরী, ইছাদ চৌধুরী ও তৌহিদ চৌধুরী ক্রয়সূত্রে ওই জমির মালিক বলে দাবি করেন।


ডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাবের উল হাই এর অনুপস্থিতিতে ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য জালাল উদ্দিন ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সুযোগে তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেখিয়ে তার সই জাল করে আসাদ চৌধুরীরা উত্তরাধিকার সনদ তৈরি করে জাল দলিলের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি করে। এরপর ঢাকায় গিয়ে কমিশনের মাধ্যমে চারটি এসব ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে জাল দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে মোট চার বিঘা জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। জমির মূল মালিক এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলেও জানান জালাল উদ্দিন।


জালাল উদ্দিন আরও জানান, ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল একটি সূত্র থেকে এই চার দলিলে জমি হাতিয়ে নেওয়ার খবর পান। এরপর আরও অনুসন্ধান করে জানা গেছে ওই চক্রটি এর আগে এভাবে বহু মানুষের জমি হাতিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষের জমি এই তিন ভাইয়ের দখলে চলে গেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই বসতভিটা। রয়েছে অনেক ফসলি জমিও।


একটি জালিয়াতির ঘটনা অনুসন্ধান করে জানা গেছে, সুরেন্দ্র চন্দ্র মিশ্রের সন্তান ললনা মিশ্রকে দাতা দেখিয়ে ভিরিন্দা মৌজার সাড়ে ১৬ শতক জমি হাতিয়ে নিয়েছেন আসাদ চৌধুরী। একই মৌজার ১৮ শতক রেজিস্ট্রি করেছেন, যেখানে বিক্রেতা হিসেবে দেখানো হয়েছে চিত্ত রঞ্জন দাসের ছেলে নয়ন কুমার দাসকে। এই দলিলে ক্রেতা হিসেবে আসাদ চৌধুরীর পাশাপাশি তার অন্য দুই ভাইকেও দেখানো হয়।


একই মৌজার স্বর্দীপ চন্দ্র মিত্র থেকে ২২ শতক এবং মৃণাল কান্তি মিশ্র, গৌতম চন্দ্র মিত্র, নব কৃষ্ণ মিত্র, সুমন মিত্র, সৌরভ চন্দ্র মিত্র, কমল চন্দ্র মিত্র ও অমল চন্দ্র মিত্রকে বিক্রেতা দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয় ৫৬ শতক জমি। এই চারটি দলিলে ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেখিয়ে তার সই জাল করা হয়েছে।


শনিবার (১১ মে) ডাঙ্গা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার সই জাল করছে এটা সত্য। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও টাকার জোরের কাছে আমি হেরে যাই। অনেক টাকা পয়সা দিয়ে আমার মামলাটা খালাস করছে। টাকার ওপর সব চলে তাদের। মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার পর চেয়েছিলাম আপিল করতে, কিন্তু নানা কারণে পারিনি। তাদের সঙ্গে আমি পারব না, তাদের টাকার অভাব নেই। তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু আমি তো আর তাদের সঙ্গে পারছি না। শুধু ডাঙ্গা ইউনিয়ন নয়, বিভিন্ন এলাকায় তাদের তিন ভাইয়ের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ।


অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে লিখে কী লাভ। তাদের অনেক টাকা, টাকা দিয়ে তারা সব করে ফেলবে। অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে যত অপকর্ম আছে সবকিছুই করে তারা।


এ ব্যাপারে ইজি ফ্যাশন ব্র্যান্ড -এর চেয়ারম্যান আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘জাল দলিল কিনা এটা সরকার দেখবে। মুখে বললেতো হবে না, নথিপত্র দেখাতে হবে। তাছাড়া আমাদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা হয়েছে। যে মামলা করেছে সে হচ্ছে বাটপার। আপনাকে এগুলো কে বলছে, কোন বাটপারে বলছে, তাকে বেধে আমাকে খবর দেন। তারপর আমি আইসা দেখেন তাকে কি করি! বাটপারির একটা সীমা আছে। যে লোকে খবর দিছে, যে লেভেলের লোকই হোক মনে করেন সে- চেয়ারম্যান, মেম্বার, এলাকার লোক বা যেই লোক বলছে সে লোকেরে ভদ্রভাবে বলবেন, আচ্ছা ভাইয়া আপনার সাথে একটু কথা বলব, ইজির মালিকরাতো মানুষের অনেক জমিজমা দখল করছে আপনি একটু আমার সাথে আসেন। পরে আমাকেও বলবেন আমি যাবো। তারপর আমি ওরে দেইখেন উল্টা করে নিচের দিকে মাথা দিয়া আর পা উপরের দিকে দিয়া...’।


এ ব্যাপারে ইজি ফ্যাশন ব্র্যান্ড -এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইছাদ চৌধুরী ও ডিরেক্টর তৌহিদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ হয়নি।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশ থানার ওসি মো. ইকতিয়ার উদ্দিন বলেন, আমার এখানে ২০১৮ সালের কোনো মামলা পেনডিং নেই। আপনি চাইলে কোর্টে খোঁজ নিতে পারেন।


No comments

Powered by Blogger.