‘পপসম্রাট’ হয়েই থাকবেন আজম খান
আসল নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। আমরা তাকে চিনি আজম খান নামে। আর দেশের সংগীতপ্রেমীদের কাছে তিনি পপসম্রাট। গুরু হিসেবেও আখ্যায়িত করেন তার ভক্তকুল। নানান পরিচয়ের এ মানুষটি একাধারে একজন মুক্তিযোদ্ধা, সংগীতশিল্পী, অভিনেতা, ক্রিকেটার ও বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল। তাকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ডসংগীতের একজন অগ্রপথিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে তার অনুজ ব্যান্ডতারকা মাকসুদুল হক তাকে বাংলাদেশের রকসংগীতের অগ্রপথিক হিসেবে বিবেচনা করেন। তার গানের বিশেষত্ব ছিল- পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার স্বতন্ত্র রীতি। ওরে সালেকা ওরে মালেকা, রেল লাইনের ওই বস্তিতে, আলাল ও দুলাল, আসি আসি বলে, অভিমানী এবং বাংলাদেশসহ অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা আজম মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে অংশ নেন। সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।
দেশের পপ ও রকসংগীতের কিংবদন্তি আজম খানের আজ ১৩তম মৃত্যবার্ষিকী। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালে এই দিনে (৫ জুন) না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। প্রতি বছরের মতো এবারও পপসম্রাটের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিকভাবে মসজিদে মিলাদ পড়ানো ও কবর জিয়ারত করা হবে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন আজম খান। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে আজম খান ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর হয়ে গণসংগীত গেয়ে দেশের যুবসমাজকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসী গেরিলা যোদ্ধা। ঢাকা থেকে হেঁটে চলে যান আগরতলায়। মেঘালয়ে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। ওই সময় গান গেয়ে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করতেন। প্রশিক্ষণ শেষে যোগ দেন সম্মুখযুদ্ধে। খালেদ মোশাররফের অধীনে ২ নম্বর সেক্টরের একটি সেকশনের কমান্ডার করে আজম খানকে ঢাকা শহরে গেরিলা অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি যাত্রাবাড়ী-গুলশান এলাকায় গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করতে থাকেন একের পর এক। যুদ্ধ শেষে অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন।
স্বাধীন দেশে আজম খান একাই দাঁড় করিয়ে ফেলেন সংগীতের নতুন ধারা। তার গানের দলের নাম ছিল ‘উচ্চারণ’। এমন উচ্চকণ্ঠের গান কখনো ছিল না আগে। সেই সঙ্গে জোরাল বাদন। বাংলা গান পায় নতুন এক প্রাণ স্পন্দন। আজম খান যেমন দেশের পপগানকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছেও পৌঁছে দিয়েছেন নতুন ধারার এই গান। তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছেন দেশের তরুণদের। পপগানকে লালন করেছেন, শ্রোতা তৈরি করেছেন, বাংলা এই পপগানের ধারা যেন সময়ের সঙ্গে প্রবাহমান থাকে, সেই পথও তৈরি করে গেছেন। সশরীরে না থাকলেও তার গানগুলো আজও সমসাময়িক। এই গানগুলোই তাকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখবে।
No comments