Adsterra

নামের মিলে গ্রেপ্তার অন্য নারী, পুলিশের ভুলে ভাঙছে সংসার

নামের মিলে গ্রেপ্তার অন্য নারী, পুলিশের ভুলে ভাঙছে সংসার, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla n

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের শিবু বাগবাড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মমতাজ বেগম (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৮৫১৭৩২৮৩৫১১০৫)। একই ইউনিয়নের পূর্ব চান্দঘাট গ্রামের আজিজুল ইসলামের মেয়ে শারমীন আক্তার ওরফে মমতাজ (৪০) (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৯১৪৮৬৯৭৬১)। শারমীনের স্বামীর নাম সেকেন্দার আলী। 


ঋণখেলাপের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে বাগবাড়ীর মমতাজের বিরুদ্ধে। অথচ পুলিশ পূর্ব চান্দঘাটের মমতাজ ডাকনামের শারমীনকে গ্রেপ্তার করে সন্তানসহ রাতভর থানায় আটকে রাখে। এমনকি অন্য একজনকে তাঁর স্বামী বলেও দাবি করে পুলিশ। পরদিন আদালতে চালান দেওয়া হয়। বিচারক অবশ্য তাঁকে জামিন দিয়েছেন।


এদিকে এ ঘটনায় শারমীনের সংসারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্বামী সেকেন্দার আলী এখন তাঁকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। খরচ দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। পুলিশের ভুলে শারমীনের সংসার এখন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। 


পুলিশ, মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী নারীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএস অন্নদানগর শাখা থেকে শিবু বাগবাড়ী গ্রামের মমতাজ বেগম ২০২১ সালে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় ২০২২ সালের এপ্রিলে মমতাজের বিরুদ্ধে রংপুরের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পীরগাছা আমলি আদালতে মামলা করে টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ। মমতাজ হাজির না হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। 


পরোয়ানার ভিত্তিতে কাউনিয়া থানার এসআই রবিউল ইসলাম গত শনিবার কাউনিয়ার বেইলি ব্রিজ বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব চান্দঘাট গ্রামের শারমীন আক্তারকে (ডাকনাম মমতাজ) স্বামী সেকেন্দার আলীর সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দেয়।


এ ঘটনায় আইনজীবীর মাধ্যমে এসআই রবিউলের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানিয়েছেন শারমীন। আইনজীবী পলাশ কান্তি নাগ বলেন, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুনিবারণ আইন ২০১৩-এ হয়রানিমূলক গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ আছে। এই আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রেডি করা আছে। বিধি মোতাবেক তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।


বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর কোর্ট চত্বরে শারমীন আক্তার ওরফে মমতাজের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার। তিনি বলেন, ‘আমি কিংবা আমার স্বামী কোনো দিন কোনো এনজিও কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ করিনি। আমার স্বামী ঢাকায় চাকরি করে। তাকে গাড়িতে তুলে দিতে এলে পুলিশ আমাদের ঘিরে ধরে। আমার নাম জিজ্ঞাসা করলে নাম বলি, তখন পুলিশ বলে আমার নামে ওয়ারেন্ট আছে।’ 


শারমীন আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী জানতে চায় কিসের ওয়ারেন্ট, তখন পুলিশ বলে আপনার নাম কী? সেকেন্দার আলী বললে পুলিশ বলে উনার স্বামীর নাম রফিকুল আপনি জানেন না এবং স্বামীর সামনে আমাকে গালাগাল শুরু করে। তখন আমি অবাক হয়ে যাই। আমার স্বামী উপস্থিত থাকাকালে রফিকুল নামের একজনকে আমার স্বামী দাবি করে পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং আমাকে থানায় নিয়ে যায়। রাতভর শিশুসন্তানসহ আমাকে থানাহাজতে আটকে রাখা হয়। স্বামীর নাম রফিকুল স্বীকার করলে জামিন পাব বলে পুলিশ কোর্টে চালান দেয়।’ 


শারমীন আক্তার ওরফে মমতাজ বলেন, ‘পুলিশ আমার কোনো কথা শোনেনি। এমনকি আমার ভোটার আইডি কার্ড পর্যন্ত দেখতে চায়নি। সিআই নম্বর দিয়ে বলে, কোর্টে গিয়ে বের করেন আপনার তথ্য। আর বারবার শিখিয়ে দেয়, স্বামীর নাম রফিকুল বললে আমার জামিন হবে।’ 


বিচার দাবি করে শারমীন আক্তার মমতাজ বলেন, ‘নির্দোষ ব্যক্তিকে পুলিশ জেলে দিল। আমার স্বামীর সামনে অন্যজনকে আমার স্বামী বলে দাবি করল। এখন আমার স্বামী আমাকে নিতে চায় না, খরচাপাতি দেয় না। আমি এখন ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব?’ 


পরে শারমীনদের বাড়িতে গেলে তাঁর মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘পুলিশকে বেইলি ব্রিজ ও থানা—দুই জায়গা বলেছি, আমার মেয়ে নির্দোষ, তাঁর দুইটা বাচ্চা আছে। ছেড়ে দেন। তারপরও তাঁরা ছেড়ে দেয় নাই।’ 


মর্জিনা বলেন, ‘এখন আমার মেয়েকে তার জামাই নিচ্ছে না। মেয়ের সংসারের কী হবে। মানুষ যদি অন্যায় করে পুলিশ ধরি নিয়া যায়। এখন পুলিশ ধরি নিয়া যায়া মেয়ের সংসারটা ভাঙি দিল, তার বিচার কে করবে, কার কাছে চাব? পুলিশের বিচার কায় করবে?’ 


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই রবিউল ইসলাম  বলেন, ‘মমতাজের নামে ওয়ারেন্ট ছিল। বিভিন্নভাবে ফোনের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে যখন উনি জানান, তাঁর নামে কোনো ঋণ নেই। তখন আমরা তাঁর ভোটার আইডি কার্ড চাইলে তিনি তা দেখাননি।’ 


এক প্রশ্নের জবাবে এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ব্যক্তি চিনি না। সোর্সের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে আসামি ধরি। আমার কাছে ওয়ারেন্ট ছিল, তা দেখিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করি। এটা আমার কতটুকু ভুল তা জানি না।’ 


তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজার রহমান। 


এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘কাউনিয়া থানা মমতাজ নামের আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয় যে বিভ্রান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে সেটি আমরা অনুসন্ধান করে দেখব। এখানে পেশাদারত্বের অভাব থাকলে আইন অনুযায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’ 


মামলার প্রকৃত আসামি মমতাজ বেগম ও তাঁর স্বামী রফিকুল ইসলাম ঢাকায় থাকেন। তাঁদের মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

No comments

Powered by Blogger.