এমপি আনোয়ারুল হত্যাকাণ্ড: সাত মাস আগেই পরিকল্পনার শুরু
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে। তবে বাংলাদেশে নিরাপদ জায়গা না পেয়ে খুনিরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জায়গা খুঁজতে ভারতমুখী হয়। নেপথ্যে ছিলেন ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের নেতারা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেছে নেওয়া হয় নিষিদ্ধঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) সদস্যদের। তাঁদের সঙ্গে দুই কোটি টাকার চুক্তি করেছিলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছেন চরমপন্থী সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ।
ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন ৫ জুন শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমপি আনারকে হত্যার পর সাইদুল করিম মিন্টু চরমপন্থী সংগঠনটির আজীবন দাতা হওয়ারও আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে শিমুল ভূঁইয়া জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, মিন্টু লেনদেন করেছিলেন বাবু নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে।
সূত্রমতে, সাইদুল করিম মিন্টু যে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়েন, তা উঠে আসে শিমুল ভূঁইয়ার দেওয়া জবানবন্দিতে। শিমুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহীন তাঁকে জানিয়েছিলেন, আনোয়ারুলকে হত্যার জন্য মিন্টু তাঁকে ২ কোটি টাকা দেবেন। তার মধ্যে ২০ লাখ টাকা দেশে এলে দেবেন, আর বাকি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেবেন
মে মাসের ২৬ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে। প্রথম দফা ২০ লাখ টাকা মিন্টুর ঘনিষ্ঠ বাবু নামের একজনের কাছ থেকে নিতে হবে। তবে তার আগে এমপি আনারকে হত্যার ছবি দেখাতে হবে মিন্টুকে। এরপর বাবু জানিয়ে দেবেন, বাকি টাকা কোথায় এবং কীভাবে পৌঁছানো হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শিমুলের জবানবন্দিতে উল্লেখ আছে, ১৯৯৮ সাল থেকেই আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করতে চাইছিলেন চরমপন্থী পার্টির ঝিনাইদহ জেলার কর্মীরা। কিন্তু পার্টির অক্ষমতা এবং বিভিন্ন উত্থান-পতনের কারণে ঝিনাইদহ শাখা সেই কাজ করতে ব্যর্থ হয়। শিমুল জবানবন্দিতে জানান, আখতারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর নতুন করে তাঁর যোগাযোগ হয়। এমপি আনোয়ারুলকে হত্যার বিষয় নিয়ে গত বছরের নভেম্বরে শাহীনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দি থেকে জানা যায়, এমপি আনোয়ারুলের সঙ্গে শাহীনের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থাকলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁদের সম্পর্ক ভালো ছিল। আর একে কাজে লাগিয়ে সময় ও সুযোগমতো কাজটা করার জন্য শিমুলরা জায়গা খুঁজতে থাকেন। প্রায় দেড় মাস পর শাহীন তাঁকে জানান, কলকাতার নিউটাউন এলাকায় সুন্দর একটা বাসা ভাড়া নিয়েছেন।
এদিকে আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কলকাতার সিআইডি আনোয়ারুলের মরদেহের অংশবিশেষ উদ্ধার করলেও এখনো ফরেনসিক পরীক্ষা হয়নি। ভারতের সিআইডি গত বৃহস্পতিবার আনোয়ারুল আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের জন্য নমুনা দিতে ডেকেছে।
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য
এমপি আনোয়ারুলের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিবির দুজন কর্মকর্তার আমাদের সঙ্গে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাঁদের জিওর জন্য অপেক্ষা করছি। সেটা হলেই চলতি সপ্তাহের যেকোনো একদিন চলে যাব।’
ভারতের সিআইডি ঘটনার পর টানা তিন-চার দিন আনোয়ারুলের মরদেহ খুঁজলেও এখন আর খুঁজছে না। ডিবির একটি সূত্রে জানা যায়, তারা মরদেহের অংশবিশেষ ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে।
ভারতে গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেনকে গতকাল শনিবার বারাসাত জেলার স্পেশাল কোর্ট ১৩ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এমপি আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে ভারতে যাওয়ার পর নিখোঁজ হন। পরদিন কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে এ পর্যন্ত ১২ জনের নাম এসেছে। তাঁদের মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে দুই দেশের পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সিলাস্তি রহমান, বাবু ও মিন্টুকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে বাবু ও মিন্টু ছাড়া অন্যরা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন সিয়াম ও কসাই জাহিদ। আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান।
No comments