শুক্রবার মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদ
হাদিসে জুমার দিনকে মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জুমার নামাজ কেন্দ্র করে একত্রিত হয় সব মুসলমান। এই দিনে সবাই সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে সুগন্ধি মেখে মসজিদে আসে। হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে এককাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। একে অন্যের খোঁজ-খবর নেয় এবং মতবিনিময় করে। এতে পরস্পরে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। অনেক আত্মীয়স্বজন ও প্রিয় মানুষদের সঙ্গে দেখা হয়। ভেতর ভেতর এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে। সবার মুখে লেগে থাকে মুচকি হাসি। এভাবে জুমার দিনে মুসলমানদের আনন্দের অনেক উপলক্ষ তৈরি হয়।
এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এ দিনকে মুসলমানদের ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। আর মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য।’ (ইবনে মাজাহ ১০৯৮)
জুমার দিনে যেমন আনন্দের অনেক উপলক্ষ তৈরি হয় তেমনি এই দিনে জুমার নামাজে রয়েছে অসংখ্য ফজিলত ও রহমত। এই দিনে মহান আল্লাহ বান্দার অসংখ্য গুনাহ ক্ষমা করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক জুমা পরবর্তী জুমা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ। যদি না কবিরা গুনাহ করা হয়।’ (ইবনে মাজাহ ১০৮৬)। একদিকে আনন্দ এবং অন্যদিকে আল্লাহর ব্যাপক রহমত ও ক্ষমাপ্রাপ্তি, এ দুইয়ে মিলেই শুক্রবার বান্দার জন্য সাপ্তাহিক ঈদ।
আল্লাহতায়ালা জুমার নামাজে যে ফজিলত ও রহমত দান করেছেন, তা পুরোপুরিভাবে অর্জন করার জন্য আবশ্যক হলো জুমার আজানের সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত মসজিদে চলে আসা। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলদ্ধি করো।’ (সুরা জুমা ০৯)
ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য
জুমার নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিতÑ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে পূর্বে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে, সে ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে ব্যক্তি একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করে। অতঃপর যে ব্যক্তি আসে সে ওই ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভি কোরবানি করে। এরপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর ন্যায়। তারপর আগমনকারী ব্যক্তি একটি ডিম দানকারীর ন্যায়। অতঃপর ইমাম যখন খুতবা দেওয়ার জন্য বের হন তখন ফেরেশতারা তাদের খাতা বন্ধ করে দিয়ে মনোযোগ সহকারে খুতবা শ্রবণ করতে থাকে।’ (সহিহ বোখারি ৯২৯)
আমাদের সমাজে কিছু মুসলমান আছে যারা জুমার নামাজেও অংশগ্রহণ করে না। সাপ্তাহিক ঈদের আনন্দ এবং আল্লাহর অপার রহমত থেকে তারা বঞ্চিত হয়। তাদের জন্য সঞ্চিত আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা ভ্রষ্টতার এতটাই অতল গহ্বরে প্রবেশ করে যে, উপলব্ধি করার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলে। তাদের বিষয়ে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ ছাড়া পরপর তিন জুমা ছেড়ে দেয়, আল্লাহতায়ালা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন।’ (বায়হাকি ৫৭৮৫)
তাই আসুন, আল্লাহতায়ালা আমাদের উপহারস্বরূপ ফজিলতময় সাপ্তাহিক যে ঈদ দান করেছেন তা থেকে আনন্দিত ও উপকৃত হই। যাতে আমাদের জন্য রয়েছে উভয় জগতের সফলতা।
No comments