Adsterra

ছাগল-কাণ্ডে আলোচিত মতিউরকে এনবিআর থেকে সরানো হলো

ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news, ছাগল-কাণ্ডে আলোচিত মতিউরকে এনবিআর থেকে সরানো হলো


জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মকিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। 


এর আগে কোরবানির জন্য ১২ লাখ টাকার ছাগল কেনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের শোরগোলের কারণে দুটি নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে বহুল আলোচিত—মুশফিকুর রহমান ইফাত ও মতিউর রহমান। ইফাত ও তাঁর মাতৃকূল মতিউর রহমানকে তাঁর বাবা হিসেবে দাবি করলেও কিন্তু ইফাতকে নিজের ছেলে বলে স্বীকার করেননি মতিউর। 


সরকারি এক কর্মকর্তার ছেলে কোরবানির জন্য ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনবেন—এই খবরে শোরগোল পড়ে গেছে চারদিকে। বুকসমান উঁচু সেই ছাগলের সঙ্গে নিজের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন ইফাত। ৬২ ইঞ্চি উচ্চতার ছাগলটির ওজন ১৭৫ কেজি। এত বড় ছাগল সচরাচর দেখা যায় না। সাদিক অ্যাগ্রো ছাগলটির দাম হেঁকেছিল ১৫ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় ১২ লাখ টাকায়। এত দামের পেছনে তাদের ব্যাখ্যা ছিল, উন্নত জাত ও বংশমর্যাদা। তবে এক লাখ বুকিং দিলেও ছাগলটি কেনেননি ইফাত। 


ছাগল ছাড়াও এর আগে ইফাতের ৫২ লাখ টাকা দামের গরু কেনা এবং দামি গাড়ি ব্যবহার নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে। এই ঘটনায় বাবা-ছেলে হিসেবে ইফাত ও মতিউরের যৌথ একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা মতিউর রহমানের সম্পদের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বাবা-ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করছেন মতিউর রহমান। 


দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতেই মতিউর সম্পর্ক অস্বীকার করছেন বলে মানুষ মনে করছে। তাঁর বিরুদ্ধে সেই প্রশ্ন তোলার সুযোগও আছে। কারণ, এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে চারবার মতিউরের সম্পদের উৎসের অনুসন্ধানে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কোনোবারই কোনো প্রমাণ পায়নি দুদক। কিন্তু ছাগল-কাণ্ডের পর পঞ্চমবারের মতো অনুসন্ধানে নামছে দুদক। 


মতিউরের বিরুদ্ধে দুদকে যত অভিযোগ


দুদকের সূত্র বলছে, এনবিআরের সদস্য ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, দেশে একটি গ্রুপ অব কোম্পানিতে দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং কানাডায় বাড়ি, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ রয়েছে। 


দুদক বলছে, অভিযোগ অনুসন্ধান করে এ পর্যন্ত মতিউর রহমান, তাঁর দুই স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীতে অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাট ও তিনটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোর মধ্যে ধানমন্ডিতে একটি, সেগুনবাগিচায় দুটি, শান্তিনগর টুইন টাওয়ারে একটি, লালমাটিয়ায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি-ব্লকে একটি সাততলা বাড়ি, আই-ব্লকে তাঁর যৌথ মালিকানাধীন ডেভেলপার কোম্পানি জেসিক্সের তত্ত্বাবধানে একটি বহুতল ভবনে অংশ আছে। 

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই  আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য    বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই  আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য

  বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন


দুদকের অনুসন্ধানে মতিউর রহমানের মালিকানায় ময়মনসিংহের ভালুকার সিডস্টোর এলাকার পাশে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিতে গ্লোবাল ম্যাক্স নামের জুতার কারখানা, রাজধানীর নিকেতনের ৮ নম্বর সড়কে গ্লোবাল ম্যাক্সের প্রধান কার্যালয় এবং চাঁদপুরে একটি গরুর খামার পাওয়া গেছে। 


নরসিংদীর রায়পুরার মরজালে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্টের পরিচালক মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রীর ঘরের দুই সন্তান ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা ও আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব। ফারজানা ও আহমেদ তৌফিকুরের নামে গাজীপুরের পুবাইলের খিলগাঁওয়ে রয়েছে আপন ভুবন পিকনিক ও শুটিং স্পট। সোনাগাজীর সোনাপুরে শ্বশুরবাড়িতে রয়েছে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। 


দুদকের সূত্র বলছে, এনবিআরের এই কর্মকর্তার স্ত্রী-সন্তান ছাড়াও শ্যালক, শ্যালিকা, ভাই ও আত্মীয়স্বজনের নামে-বেনামে সম্পদের তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মতিউর রহমানের দুই পরিবার সাতটি গাড়ি ব্যবহার করে। গাড়িগুলো মতিউর রহমানের স্ত্রী, সন্তান ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিংয়ের নামে। গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিংয়ের নামে নিবন্ধিত গাড়িটি ব্যবহার করেন শাম্মী আখতার। 


পঞ্চম দফায় অনুসন্ধানের উদ্যোগ দুদক


৪ জুন দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মইনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে কমিশন সভায় এনবিআর সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানায়, দুদকের মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হক অভিযোগ তুললে অনুসন্ধানে একটি দল গঠন করতে বলা হয়। 


এর আগে ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে মোট চারবার মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে দুদক। কিন্তু নথিভুক্তির মাধ্যমে এসব অনুসন্ধানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করে দুদক। এর অর্থ হলো—অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে মতিউর রহমানকে নিয়ে কমিশন থেমে যায়। 


ইফাতের পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুসন্ধানে নামে আজকের পত্রিকা। অনুসন্ধানে হাতে আসা ইফাতের মাধ্যমিকের মার্কশিট ও উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির কাগজপত্রে দেখা যায়, তাঁর বাবার নাম মো. মতিউর রহমান, মা শাম্মী আখতার শিভলী। 


অনুসন্ধানে জানা যায়, শাম্মী আখতার শিভলী মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সোনাপুরে। তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে ইফাত দ্বিতীয়। তাঁর বড় বোন ইফতিমা রহমান মাধবী রাজধানীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তৃতীয়জন ছেলে ইরফানের বয়স সাত বছর। 


ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো বোন শাম্মী আখতার শিভলী। বিষয়টি নিশ্চিত করে নিজাম হাজারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিবুর (শাম্মী) ছেলের নাম আমি জানি না। তাঁর স্বামী মতিউর রহমান এনবিআরের একজন সদস্য।’ 


শাম্মী আখতার শিভলী নিজ গ্রামে শিবু নামে পরিচিত। ইফাতের সঙ্গে থাকা শাম্মীর ছবি দেখালে ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ওই নারী নিজাম উদ্দিন হাজারীর আপন মামাতো বোন শিবু, সঙ্গের ছেলেটি (ইফাত) তাঁর সন্তান। শিবু এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী।’ 


মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী কানিজ লায়লা (লাকি)। তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। কানিজের গ্রামের বাড়ি রায়পুরার মরজালে। মতিউর রহমানের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী। 


ইফাতের বিষয়ে খোঁজ নিতে শাম্মী আখতার শিভলীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কের ৪১ /২-এর ইম্পেরিয়াল সুলতানায় গেলে এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, শাম্মী পরিবার নিয়ে পঞ্চম তলায় বসবাস করেন। তবে ইফাতের বিষয়ে তিনি কিছু বলতে অপারগতা জানান। 


ওই ভবনের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাগল কেনার বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতরা ঈদের আগেই এখান থেকে চলে গেছেন। জানা গেছে, ওই ফ্ল্যাট শাম্মীর নামে। 


পরে জানা যায়, শাম্মী অবস্থান করছেন কাকরাইলের ৪৮-৪৯ স্কাই ভিউ মমতা সেন্টারের বাসায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে গেলে কেয়ারটেকার রবিউল রেজওয়ান বলেন, ‘ইফাতরা এই বাসায় ঈদ করতে এসেছিলেন, ভোররাতে চলে গেছেন।’ 


রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছবি দেখিয়ে সেখানে যান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার মাঝেমধ্যে আসেন। কিছু সময় থেকে চলে যান। সর্বশেষ ১০ দিন আগে এসেছিলেন।’

No comments

Powered by Blogger.