Adsterra

পদ্মমির - ৬ || ইলমা বেহেরোজ

পদ্মমির, ইলমা বেহেরোজ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice,  bangla love story, romantic story, story, storytelling, storywa, storytime, storywakeren, storyofmyli


আমিরের দ্বিতীয় অফিস অন্য এলাকায়। নারী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিংবা অন্য কোনো অপরাধ জগতের বাসিন্দা প্রত্যেকে ওখানে দেখা করতে যায়।

আমির সেক্রেটারিকে ভারিক্কি গলায় বলল, 'তাকে আসতে দিবেন না।' ইন্টারকমের সুইচ অফ করে দিল ও।

আলমগীরসহ আরো ছয়জন আমিরের অফিসে ঢুকল। দ্বিতীয় অফিসে যাবার সময় হবে না বলে তাদেরকে আমির এখানে ডেকেছে কাজ বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। কে কোন এলাকায় যাবে, কীভাবে কী করবে তার একটা ছক তৈরি করেছে। প্রত্যেকের হাতে তা তুলে দিবে। আলমগীরের পাশে কবির দাঁড়িয়ে আছে; তেইশ বছরের তরুণ। বছর ছয়েক আগে কবিরকে পথ থেকে তুলে এনেছিল আমির।

মাতালের মতো চোখ বুজে আসছে বার বার, ঢলছে সে।

আমির কপাল কুঞ্চন করে বলল, 'ওর কী হলো?'

কবির ধপাৎ করে আলমগীরের গায়ের উপর পড়ে যায়।

আলমগীর দ্রুত ধরে ফেলল, 'বেশি গিলে ফেলছে।'

কবির জড়ানো গলায় বলে, 'আমি শুনতাছি। খালি দাঁড়াইতে পারতাছি না, পা দুইটা কই জানি চইল্লা গেছে। আপনি কন, আমি শুনতাছি, শুনতাছি-'

আমির গর্জে উঠল, 'ঘাড় ধরে ও কে বের করে দাও।' আবার বাজল ইন্টারকম।

সেক্রেটারি বিনীত সুরে বলল, 'আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। রফিক মাওলা বলেছেন তিনি আপনার স্ত্রী সম্পর্কে কিছু বলতে চান।'

তাৎক্ষণিক আমিরের শরীরের স্নায়ুতে টান পড়ল। রগে রগে কিছু একটা ছুটতে শুরু করল। রফিক মাওলা পদ্মজা সম্পর্কে কী বলবে? ভালো কিছু নয় তা নিশ্চিত। আমির বলল, 'ভেতরে পাঠিয়ে দাও।'

তার চোখমুখের রঙ পরিবর্তন হতে দেখে আলমগীর প্রশ্ন করল, 'কী হয়েছে?'

'রফিক মাওলা অফিসে।'

'ও এখানে কী করে?'

'পদ্মজাকে নিয়ে কিছু বলতে চায়।'

শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প। সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন

শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প। সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন


কবির ছাড়া উপস্থিত বাকি ছয়জনের মুখে উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ে। এরা প্রত্যেকে আমিরের বিশ্বস্ত সঙ্গী। একেকজন একেক দলের দলনেতা হয়ে কাজ করে। পদাজা সম্পর্কে সব জানে। পাঁচটি বছর পদ্মজার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখার যে আপ্রাণ চেষ্টা ছিল আমিরের, তাতে এদেরও অবদান রয়েছে।

আমির কোথাও গেলে তারাই পদ্মজাকে আড়াল থেকে রক্ষা

করে। তাদের নাম সাদিক, সুরুজ, আবুল, আসাদসারওয়ার, কবির ও আলমগীর।

রফিক মাওলা অফিসে ঢুকল। প্রশংসার দৃষ্টিতে তাকাল চারিদিকে। চাকচিক্য এবং আভিজাত্যপূর্ণ অফিস!

দাঁত বের করে হেসে বলল, 'বহুদিন পর দেখা মি. হাওলাদার।'

আমিরের সোজাসাপটা প্রশ্ন, 'কী বলতে চান?'

রফিক বাকিদের দেখে বলল, 'এদের সামনেই বলব?'

'দ্রুত বলুন, আমার কাজ আছে।' তাড়া দিল আমির।

পদ্মজার নাম উঠায় অস্থিরবোধ করছে সে।

আগে তো বসতে দিন।'

আমির ও রফিকের কাছাকাছি বয়স। এক সময় দুজনের মধ্যে মহব্বত ছিল। একে অপরকে তুই বলে সম্বোধন করত। সেই সম্পর্ক আর নেই।

এখন দুজন দুজনের প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু।

আমিরের মুখোমুখি একটি চেয়ার দখল করে বসল রফিক। বলল, 'ভাবি কেমন আছে? শরীর ভালো আছে তো?'

রফিকের মুখে পদ্মজার সম্পর্কে কিছু শুনতে চাচ্ছে নাআমির।

এতোটাই অস্থির হয়ে পড়েছে যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।

রফিক পুনরায় বলল, 'ভাবির নাকি জ্বর এসেছিল, এখন ঠিক আছে?'

আমির কটমট করে তাকিয়ে আছে। তার হয়ে আলমগীর বলল, 'হেঁয়ালি ছাড়ুন। কী বলতে চান? কাজের কথায় আসুন।'

রফিক কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, 'ভাবির সম্পর্কেই বলতেচাই।'

রফিক পদ্মজা সম্পর্কে কিছু বলতে চায় শোনার পর থেকেই আমিরের রক্ত টগবগ করছে। আতঙ্কে বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। সে গর্জে উঠার আগে রফিক বলল, 'ভাবিকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে শুনলাম, ভাবি নাকি...' রফিক থামল।

আমিরের দিকে তাকিয়ে ফিচলে হাসল। আমির মনে মনে ভাবছে, 'রফিক যেন এটা না বলে, ও জেনে গেছে পদ্মজা আমার ব্যবসা সম্পর্কে কিছু জানে না। তাহলে শত্রুপক্ষরা আমাকে ধ্বংস করার মোক্ষম হাতিয়ার পেয়ে যাবে। এটা যেন না হয়, না হয়!'

কিন্তু তাই হলো। রফিক নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল, 'ভাবির থেকে আড়াল করা কি ঠিক, হচ্ছে? অর্ধাঙ্গিনীর তো সব জানা উচিত। সে জানবে না তো কে জানবে? ভাবির সাথে অবিচার হচ্ছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'

বুঝেও না বুঝার ভান ধরে আমির বলল, 'কী জানার কথা বলছেন?'

রফিক নিষ্পাপ গলায় বলল, 'অতীতের ফষ্টিনষ্টি,

দুইটা বউ, নারী ব্যবসা, এতো বড় একটা চক্র -'

আমির কথায় মাঝে উত্তেজিত হয়ে পূর্বের সম্বোধনে  আমির কথায় মাঝে উত্তেজিত হয়ে পূর্বের সম্বোধনে চলে আসল, 'বেরিয়ে যা কুত্তার বাচ্চা। এখুনি বেরিয়ে যা।'

আলমগীর, সাদিক দুজন মিলে রফিককে বগল থাবা দিয়ে ধরে বের করে দেয়ার জন্য। রফিক ঠোঁটে বাঁকা হাসি এঁটে বলল, 'আশা করি ভাবি তার স্বামীর গল্পটা খুব আগ্রহ নিয়ে শুনবে।'

আমিরের চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে। বুকের ভেতর ধিকধিক করে জ্বলছে আগুন। রফিক মাওলা জানে মানে কুতুবউদ্দিনও জানে। সে ফেঁসে গেছে। পাথর হয়ে গেছে আমির। দ্রুত আলমগীরকে থামিয়ে দিয়ে দূর্বল ও কর্কশ গলায় বলল, 'কী চাস?'

রফিক বিজয়ের হাসি হাসল। দুই হাত ঝেড়ে আবার চেয়ারে বসে পেশাগত ভঙ্গিতে বলল, 'স্যার বলেছেন, ইয়াকিসাফির সঙ্গে যে চুক্তিপত্র করেছেন সেটি যেন আপনি বাতিল করেন। আপনার পশ্চিমের জায়গাটাও চান, যেখানে আপনি আরেকটা ফ্যাক্টরি করতে চাচ্ছেন। স্যার সেখানে শপিংমল করবেন আর চারটি জাহাজ চাই। এতটুকুই।'

No comments

Powered by Blogger.