Adsterra

পদ্মমির - ৯ || ইলমা_বেহেরোজ

 

পদ্মমির, ইলমা বেহেরোজ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice,  bangla love story, romantic story, story, storytelling, storywa, storytime, storywakeren, storyofmyli

হামলাকারীকে চিনলে তার থেকে বাঁচার পথ বের করা যায়, কিন্তু যখন হামলাকারী অজ্ঞাত হয় তখন কোনদিক দিয়ে আক্রমণ আসে বোঝা বড় দায়। তখন নিজেকে রক্ষা করার উপায়ও থাকে না। আমার মনে হয়, হুমকিদাতা কে না জানা অবধি কিছুদিন আড়ালে থাকাই সর্বাধিকভাবে উত্তম হবে।'

আমির পদ্মজার দিকে পিঠ করে বসে ছিল। পদ্মজার কথা শুনে ওর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। পরিকল্পনা কাজে লেগেছো পদ্মজার মুখ থেকে এই কথাটা শোনার জন্য এতো এতো দামী জিনিসপত্র ভাঙতে হলো, তারিকুলকে আঘাত করতে হলো। পর পর কাহিনিগুলোতে পদ্মজা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছে। আমির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইন্সপেক্টরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচায়। তার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে ইন্সপেক্টর কথোপকথন শেষ করতে বললেন, 'ম্যাডাম বুদ্ধিমতী। আমার মনে হয় এটাই ঠিক হবে। আপনারা এমনভাবে বেরিয়ে যাবেন যাতে কেউ বাহির থেকে না বুঝে। আমি এখানে ফাঁদ পেতে শয়তানকে ধরব।'

আমির বলল, 'যদি বাড়ি ছেড়ে মঙ্গল হয় তবে তাই

হোক। আপনি দ্রুত হামলাকারীকে খুঁজে বের করার

চেষ্টা করুন। আমার স্ত্রী বেশিদিন বাড়ি ছেড়ে থাকতে

পারে না। ভীষণ ভালোবাসে সংসারটাকে।'

'নিশ্চিন্তে থাকবেন। বাড়ির চাবিটা দিয়ে যাবেন।'

ইন্সপেক্টর চলে যেতেই পদ্মজা আমিরের কাছে এসে বলল, 'এতকিছু হয়ে গেল আর আমাকে বলেননি।

ওর দুই গালে হাত রেখে আমির বলল, 'চিন্তা করতে যে।'

'সে তো এমনি হয়েছে। আপনি চিন্তিত থাকলেই আমার চিন্তা হয়। এখন চলুন, আমরা গোছগাছ করি।'

'তোমার খারাপ লাগবে না বাড়ি ছেড়ে যেতে?'

আমিরের বুকে আলতো করে হাত বুলিয়ে পদ্মজা বলল, 'আমাকে নিয়ে ভাববেন না, আপনি আমার সঙ্গে যেখানে থাকবেন সেটাই আমার সংসার।' আমির সন্তুষ্টচিত্তে পদ্মজাকে আলিঙ্গন করলা এবার কুতুবউদ্দিন আর রফিক মাওলাকে ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করতে হবে। ওদের ধ্বংস করতে হবে। কিন্তু একটা ব্যাপার সে বুঝতে পারছে না, কুতুবউদ্দিন তার কাছে জাহাজ কেন চাইল?

কুতুবউদ্দিন দেশের সবচেয়ে বড় জাহাজ ব্যবসায়ী।

চারটি জাহাজ নিয়ে তার কী ফায়দা? সন্ধ্যা। পুকুরপাড়ে ঝিঁঝির কলতান। আলমগীর অপেক্ষারত অবস্থায় সিগারেট ফুঁকছে। পুকুরটি পরিত্যক্ত, মুজ্জা কলোনির সন্নিহিত স্থানে অবস্থিত; পাশে বাজার। কিছুক্ষণের মধ্যে আমির আসল।

শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প। সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন

শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প। সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন


চারপাশ দেখে বলল, 'জারগাটা নিরাপদ?'

'এই পুকুরে এক মেয়ে জাত্মহত্যা করেছিল। তারপর থেকে কেউ এখানে আসে না। ভয় পায়।' হাসল আলমগীর। সিগারেট এগিয়ে দিল আমিরের দিকে।

আমির দুই ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট রেখে বলল, 'গ্রামে যোগাযোগ করেছ? কী অবস্থা?'

'কাজে নেমে পড়েছে। কিছুদিনের মধ্যে রিদওয়ান ঢাকা আসবে।'

'আমার বাড়িতে যেন না যায়।'

'পদ্মজা বাড়িতে একা? কী বলে এসেছিস?'

'বাজারের কথা।'

একা বাড়িতে ভয় পাবে না?'

'সারারাত একা গোরস্থানে থাকতে বললেও থাকতে পারবে।'

দুই ভাই একসঙ্গে হাসলা আলমগীর আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, 'পথ আলাদা হলেও, দুজনের সাহস কিন্তু একইরকম। বাড়ি ভালো লেগেছে?"'

'কার?'

'পদ্মজার।'

'উম, কিছুদিন আনন্দেই থাকবে।'

'কিছু সন্দেহ করেছে?'

'এখনো না।

ওদের আলোচনা চলে দীর্ঘক্ষণ। এক পর্যায়ে আলমগীর বলল, 'শুনলাম, কুতুবউদ্দিনের ছেলে জেল থেকে পালিয়েছে। পুলিশ ধরার চেষ্টা করছে।'

'কোনটা? দুটোই তো জেলে শুনলাম।'

'পিয়াসের বোনকে যে ধর্ষণ করল, হামজা।'

'পিয়াস এখানকার রাজা। ওর থেকে বাঁচবে না হামজা।'

বর্ষা মানে জল, জল মানেই জলজ ফুলের মেলা। তাই বর্ষা আসতে না আসতেই ফুটতে শুরু করেছে শাপলা, পদ্ম। পুকুরে পদ্মফুল দেখে আমিরের ভীষণ ভালোলাগা অনুভূত হয়। মনে হয়, প্রতিটি পদ্ম ফুলই যেন পদ্মজার একেকটা

অবয়ব!

হঠাৎ আলমগীর ভয় পেয়ে সরে যায়। 'কী, কী ওটা?'

আমির টর্চের আলো ফেলে দেখে, একটা ব্যাঙ।

ওটিকে লাথি দিয়ে সরিয়ে বলল, 'ব্যাঙ ওটা।' বলেই সে দাঁত বের করে হাসল। আলমগীর বুকে ফুঁ দিয়ে বলল, 'পুকুরে নাকি মেয়েটার আত্মা ঘুরঘুর করে।'

আমির ঠোঁটে হাসি চেপে রেখে প্রসঙ্গ এড়াল। বলল, 'রফিক মাওলার কোনো খবর পাওয়া গেছে?' তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে রফিকের লোকবল চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। পদ্মজাকে খুঁজছে।'

আমির হাতের সিগারেট ফেলে চোয়াল শক্ত করে বলল, 'ওরা পদ্মজার মুখ দেখার সুযোগও পাবে না।'

তারপর পিছনে তাকিয়ে চারপাশ দেখে বলে, 'যাচ্ছি। সাদিককে বলো আগামীকাল এখানে আসতে।'

বাজারে থাকা টিউবওয়েলের পানি দিয়ে কিছুক্ষণ কুলি করল সে, সিগারেটের গন্ধ দূর করতে। কিন্তু শুধু পানি দিয়ে তো যাবে না। আজ ধরা পড়তেই হবে।

বাজার পেরিয়ে গলির মুখে এসেই দেখে মুজ্জা কলোনি অন্ধকারে তলিয়ে আছে। এখানে বিদ্যুৎ নেই। হারিকেন দিয়ে চলে সবাই। তবে বাজারে বিদ্যুতের লাইন আছে। এখন বর্ষাকাল। তাই পরিবেশে মৃদু শীতল হাওয়া। চারপাশ নিরিবিলি। প্রথম গলিতে ঢুকতেই কেউ একজন নড়েচড়ে উঠে। টর্চ ধরতেই লোকটিকে চেনা মনে হয়। আমির প্রশ্ন করে, 'জাদত?'

জাদত মাথা ঝাঁকায়। বিনীতভাবে জানায়, 'আমরা

আছি।'

ওরা বেশ কয়েকজন মুজ্জা কলোনিতে ঘাপটি মেরে আছে, শুধুমাত্র শুকতারা আর পদ্মজাকে পাহারা দেয়ার জন্যা আমির কিছু না বলে চলে যায়। ভেতরের সরু গলিতে ঢুকতেই ওর মনে খটকা লাগে।

No comments

Powered by Blogger.