Adsterra

পদ্মমির - ৪ || ইলমা বেহেরোজ

পদ্মমির, ইলমা বেহেরোজ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice,  bangla love story, romantic story, story, storytelling, storywa, storytime, storywakeren, storyofmyli


আমির গোসল সেড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। তার ভেজা চুল লেপ্টে রয়েছে কপালজুড়ে। স্নিগ্ধ সুন্দর একটা মুখ। সতেজ ও চনমনে দেখাচ্ছে আমিরকে।

নারীর ভেজা চুল নিয়ে কবি-লেখকরা অনেক লিখেছে, পুরুষের ভেজা চুল নিয়ে কেন লিখেনি?

পদ্মজা লাজুক চোখে দেখে সৃষ্টির অব্যক্ত রূপ। আমিরের যত বয়স বাড়ছে তত যেন আকর্ষণীয় হচ্ছে।

পদ্মজাকে মিটিমিটি হাসতে দেখে আমির বলল, 'হাসছ কেন?

পদ্মজা মুখ গম্ভীর করার ভান ধরে কড়াইয়ে আরেকটা মাছ ছেড়ে বলল, 'কোথায় হাসলাম?'

'আমি কখনো ভুল দেখি না।'

আমির ইচ্ছে করে পদ্মজার শাড়ির আঁচল দিয়ে চুল মুছল। সুক্ষ্ম চোখে পদ্মজাকে দেখল, পদ্মজা ঠোঁট টিপে হাসছে! আমির দ্রুত নিজের পুরো শরীর পরখ করল, কোথাও সাবানের ফেনা লেগে আছে নাকি।

আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে সাবানের ফেনা কোথায় লেগে আছে খুঁজে বের করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিছুই তো নেই। তাহলে হাসছ কেন?' দ্বিধাভরে প্রশ্ন করল সে। পদ্মজা সশব্দে হেসে উঠল।

আমির জেনে গেছে এরকম একটা ভাব নিয়ে বলল, 'বুঝেছি, মজা নিচ্ছো। ঠিক আছে, আমি মনে কিছু নেইনি।' তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেন সে পদ্মজার অনেক বড় অন্যায় ক্ষমা করে দিল। পদ্মজা ব্যস্ত হয়ে টেবিলে খাবার পরিবেশন করে। দুই রকম মাংস, মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল, মাছ ভাজা, নিরামিষ চচ্চড়ি দেখে আমির সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বলল, 'ঘুম থেকে কখন উঠেছ?"

পদ্মজা বলল, কিছুক্ষণ আগে।'

'এতো দ্রুত এতোকিছু রান্না করা সম্ভব না। তোমাকে বলেছিলাম সকাল সকাল না উঠতে।' তার কণ্ঠে রাগের আঁচ।

পদ্মজা জবাব দিল না। জগে জল তরে ভিন্ন প্রসঙ্গে গেল, 'অর্ডারটি কী পেয়েছেন? রাতে এ নিয়ে প্রশ্ন করার ফুরসত হলো না।'

শেষ বাক্যটি উচ্চারণের সময় তার স্বর খাঁদে নেমে আসে। 

বলাবাহুল্য, আমিরের কুয়েত যেতে বিলম্ব হওয়ার কারণ, হঠাৎ পদ্মজার গা কাঁপিয়ে জ্বর আসা। এমতাবস্থায় পদ্মজাকে রেখে আমির কিছুতেই বাড়ি থেকে বের হতে চায়নি। পুরোপুরি সুস্থ করে তোলে তারপর কুয়েত পাড়ি জমিয়েছে। আমির চেয়ার টেনে বসে হাস্যমুখে বলল, 'অন্য

আরেকজন নিয়েই নিচ্ছিল, কিন্তু তোমার দোয়াতেই

বোধহয় আমরা পেয়ে গেছি।'

'রিযিকে যদি থাকে তাহলে যেভাবে হোক পাওয়া যায়। এখন তো অনেক কাজ। আজ অফিস যাবেন?'

পদ্মজাকে টেনে কোলে বসিয়ে ওর রক্তজবা ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে আমির বলল, 'আজ কোথাও যাব না, শুধু তোমার সঙ্গে থাকব।'


শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প। সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন

শাহরিয়ার সোহাগ এর নতুন উপন্যাস "মানুষ" - ভিন্ন চোখে মানুষের গল্প। সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন



পদ্মজা শিথিল হয়ে আসল। এতদিন আমির ছিল না তাই তার হৃদয়ও চাইছে, মানুষটা আজ সারাদিন তার সাথে থাকুক। ও প্রশ্রয় দিল। পরক্ষণে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে দ্রুত দূরে সরে গিয়ে বলল, 'খাবার ঠান্ডা হচ্ছে। আমার ক্ষুধা লেগেছে।'

আমির হো হো করে হেসে ফেলল। দুজন একসঙ্গে

দুপুরের খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন

হল থেকে রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি ঘুরে আহসান

মঞ্জিলে পৌঁছায়। ঘুরতে বের হবার সিদ্ধান্ত পদ্মজার

তার হঠাৎ করে আমিরের সঙ্গে ঘুরতে ইচ্ছে করছিল। আজকের আবহাওয়া সুন্দর। রোদ নেই, মৃদুমন্দ বাতাস বইছে সর্বক্ষণ। এমন আবহাওয়ায় বের হতে কার না ভালো লাগে।

'বলুন তো, এই প্রাসাদের নাম আহসান মঞ্জিল কেন?' হঠাৎ প্রশ্ন করল পদ্মজা।

আমির দার্শনিকের মতো প্রাসাদটি দেখে বলল, 'কেন?'

আমির ইতিহাসে কাঁচা। সে তুখোড় ফারসি, উর্দু, আরবি, ইংরেজি আর হিন্দি ভাষায়। এছাড়া হিসাবনিকাশ খুব ভালো জানে। কিন্তু ইতিহাস - পদ্মজা বলল, 'এই প্রাসাদের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেছেন।' থামল, শ্বাস নিল। পরক্ষনে আমিরকে খোঁচা মারতে বলল, 'মুক্তিযুদ্ধ কত সালে হয়েছে সেটা জানেন তো?"

আত্মসম্মানে প্রবল খাবা পড়েছে এমনভাবে হইহই

করে উঠল আমির, 'মুক্তিযুদ্ধ স্বচক্ষে দেখেছি। তুমি

জানো, মুক্তিযুদ্ধে আমার কত বড় অবদান আছে?

পদ্মজা হেসে আসিরের সাদা পাঞ্জাবির উপর

থেকে শুকনো পাতা ঝেড়ে দিয়ে বলল, 'জানি। 

পাকিস্তানি মিলিটারি আপনাদের বাড়িতে এসেছিল, একজন পানি খেতে চেয়েছিল তার পানিতে আপনি ইদুর মারার বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে মিলিটারির লোকের কিছু হয়নি। অনেক বড় অবদান রেখেছেন।' পদ্মজা গর্বে হাতের তালি দিল।

আমির থমকে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল, 'মশকরা হচ্ছে?"

তাদের খুনসুটি চলে বাড়ি ফেরা অবধি। বাড়িতে প্রবেশের সময় গেইটের বাইরে সন্দেহভাজন একজনকে আবিষ্কার করে আমির। যাবার সময়ও লোকটাকে দেখেছিল।

পদ্মজাকে দরজা অবধি এগিয়ে দিয়ে বলল, 'তুমি যাও, আমি আসছি।'

'অসময়ে কোথায় যাচ্ছেন?'

এখানেই আছি। তুমি হাতমুখ ধুয়ে নাও, ধুলোবালি লেগেছে।'

আমিরকে দ্রুতপদে আসতে দেখে আগন্তুক বিজলির গতিতে স্থান ত্যাগ করে। তীব্র বাতাস বইছে। চারপাশে বৃষ্টির আগমনী বার্তা।

আমির দারোয়ান তারিকুলকে প্রশ্ন করে, 'সবুজ শার্ট 

পরা একটা লোক ওখানে ছিল, খেয়াল করেছ?'

দারোয়ান বলল, 'জি স্যার।'

'কতক্ষন ধরে ছিল?'

'সকাল থেকে। আমি কয়েকবার ডেকেছি, শুনল না।'

সন্ধ্যার নাস্তার পর টেলিভিশন চালু করতেই পর্দায় ভেসে উঠে লিখন শাহের মুখ। এটা সেই সিনেমা, যে সিনেমার অভিনয় অলন্দপুরকে ঘিরে পদ্মজাদের বাড়িতে হয়েছিল। 

No comments

Powered by Blogger.