Adsterra

মানসিক রোগ থেকে দ্রুত মুক্তির ৯ টি উপায়

 

মানসিক রোগ থেকে দ্রুত মুক্তির ৯ টি উপায় , ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News

আপনি কি ঠিকমত ঘুমাতে পারছেন না ! জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে ! স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কে মনের ভিতরে না পুষে একে ঝেড়ে ফেলতে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপই পারে আপনার জীবনকে সহজ করতে।


অফিসে সমস্যা, বাসায় ঝামেলা—সব মিলিয়ে প্রাত্যহিক জীবনে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভুগছেন? এত স্ট্রেস আর নিতে পারছেন না, তাই স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছেন? অল্প কয়েকটি উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে স্ট্রেস থেকে আপনার চিরতরে মুক্তি মিলতে পারে। সেই উপায়গুলো কি? আসুন জেনে নেয়া যাক!  


আমাদের মনোজগতের উপর দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া হাজারো ঘটনার প্রভাব প্রত্যক্ষ ভাবে বিদ্যমান। আর এই মনোজগৎ ও দৈনন্দিনের জীবনের দ্বৈরথের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশের নাম হল “স্ট্রেস”। তবে এই স্ট্রেসের প্রভাব শুধু আপনার মনোজগতেই কিন্তু সীমাবদ্ধ থাকেনা বরং আপনার শরীরের উপরেও বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। আর এই প্রভাবের কারণে আপনি বিভিন্ন ধরণের রোগেও দীর্ঘ সময় ধরে ভুগতে পারেন। আর তাই শুধু মানসিক ভাবে নয় বরং শারীরিক ভাবেও সুস্থ থাকার জন্য সঠিক সময়ে নিজের স্ট্রেসকে কমিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা খুবই জরুরী। 


বিভিন্ন ভাবেই আপনি নিজের মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন, তার জন্য কেবল একটু সদিচ্ছা প্রয়োজন। আপনার এই ছোট্ট পদক্ষেপটি জীবনকে অনেক বেশী সুন্দর ও স্বাভাবিক করে তুলতে পারে। আজকে আমরা এমনই কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলব, যেগুলোর মাধ্যমে নিজের স্ট্রেসকে আপনি খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করে ফেলতে পারবেন। 

 


১। স্বাভাবিক ভাবে প্রত্যেকটি দিন শুরু করুন 

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই  আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য    বই সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

ডা. আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্যপরামর্শ বিষয়ক বই  আসুন সুস্থ থাকি, মানসিক স্বাস্থ্য


প্রত্যেকটি দিনের শুরুতেই নিজেকে সবসময় শান্ত রাখুন। অফিস সহ নানা রকম ঝামেলা নিয়ে দিনের শুরুতেই চিন্তা করবেন না বরং নিজের পরিবারকে সময় দিন, পারলে নাশতা তৈরি করুন ও ঘরের টুকিটাকি কাজে নিজেকে কিছুটা ব্যস্ত রাখুন। সহজ ভাবে প্রত্যেকটি দিন শুরু করতে পারলে দেখবেন কর্মক্ষেত্রের কাজের প্রেশারও খুব চমৎকার ভাবে সামলে নিতে পারছেন। কিন্তু কীভাবে নিজেকে শান্ত রাখবেন? 

প্রয়োজনে নিজের সাথে কথা বলুন 

নিজেকে বুঝানো শুরু করুন 

যে কোন ধরণের পরিস্থিতির জন্যই নিজেকে তৈরি করে নিন 



২। অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন 

প্রতিদিন আমাদের নানা রকম সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়, আর সেই সমস্যাগুলো কখনই আমাদের কাম্য নয়। সামান্য কয়েকটি অভ্যাস আপনাকে উটকো সমস্যা বা বাড়তি ঝামেলা থেকে দূরে রাখতে পারে। 

না বলতে শিখুন—কেউ কোন অযাচিত অনুরোধ করলে তাকে না করে দিন। মনে রাখবেন, ছোট্ট ও সুন্দর করে না বলে দিলে কখনই সম্পর্ক খারাপ হয় না বরং অযাচিত অনুরোধ পালন করতে গিয়ে স্ট্রেসে পড়লে তখন এমনিতেই সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। 

যারা আপনাকে অকারণে স্ট্রেস দিচ্ছে, মানসিক চাপে রাখছে তাদের থেকে দূরে থাকুন। 

নিজের সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিজেই নিন। নিজের পারিপার্শ্বিক ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে অন্যকে সিদ্ধান্ত নিতে না দিয়ে বরং সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখুন। 

প্রতিদিন আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। এতে কোন কিছু ভুলে গেলেন কি না সেটা পরবর্তীতে চেক করতে পারবেন।



৩। যে কোন পরিস্থিতি নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন 

অনেক সময় স্ট্রেস হবে জেনেও আপনাকে বিভিন্ন ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। যেহেতু আপনি এই পরিস্থিতি চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারছেন না, তাই পরিস্থিতিগুলোকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন। 


আপনার অপছন্দের কথা নিজের মধ্যে চেপে না রেখে বরং আপনি সামনের মানুষটিকে নিজের অনুভূতির কথা জানিয়ে দিন। তবে খেয়াল রাখবেন, সামনের মানুষটিকে যেন কোন ধরণের অসম্মান করা না হয়। যে কোন কথা নিজের মধ্যে চেপে রেখে দিলে সেটা পরবর্তীতে মানসিক চাপ  তৈরি করে। 

কাউকে কোন আচরণ করতে নিষেধ করলে, নিজেও সেই আচরণ করা থেকে বিরত থাকুন। 

অফিসের কাজের ফাঁকে পারিবারিক জীবনে ও বন্ধুদেরকেও যথেষ্ট পরিমাণ সময় দিন। 



৪। হাল ছেড়ে দিতে শিখুন 

অবাক হচ্ছেন হাল ছেড়ে দিতে বলা হচ্ছে দেখে? অথচ সবসময় তো শুনে এসেছেন, কখনই হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না! হ্যাঁ! ঠিক এই কাজটিই করতে হবে আপনাকে, যদি নিজের স্ট্রেস বাড়াতে না চান। কেননা আমাদের জীবনের সবকিছু নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সবকিছুকে নিজের মত করে পেতে হবে, নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী সবকিছু চলতে হবে এমন নয়। 


বরং আপনি যে বিষয়টিকে পরিবর্তন করতে পারছেন না, যেটা আপনার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নেই সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা বন্ধ করে দিন। বিষয়টি মেনে নিন যে, এটাকে আপনি নিজের মত করে নিতে পারবেন না। তখন দেখবেন কিছুটা ভালো লাগছে। 



৫। যে কোন পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবেন না

অফিস থেকে শুরু করে আমাদের পারিবারিক সম্পর্কগুলো—সব কিছুর মধ্যেই জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কেননা আমাদের মনের চিন্তাগুলো শুধুই কেবল শাখা প্রশাখা বিস্তার করে বিভিন্ন রকমের দুশ্চিন্তা করা শুরু করে। আর তাই নিজের স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে যে কোন পরিস্থিতিকেই সহজ ভাবে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। 


সব ধরণের পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখার জন্য সবচাইতে সহজ উপায়টি হল শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম। আসুন জেনে নেই যেভাবে করতে পারবেন একদমই সহজ এই ব্যায়ামটিঃ 

  • সহজ ও স্থির হয়ে এক জায়গায় হয়ে বসুন অথবা চাইলে শুয়েও থাকতে পারেন
  • মাথার পেছনে একটি বালিশ রাখুন। চেয়ারে বসা থাকলে হেলান দিয়ে নিন
  • নাক দিয়ে পূর্ণ শ্বাস নিয়ে পুরো পেট ভর্তি করে ফেলুন
  • এক হাত পেটের উপর এবং অপর হাত বুকের উপর রাখুন
  • ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে দিন 
  • এভাবে দশ পনের মিনিট শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলেই দেখবেন নিজেকে আগের চেয়ে বেশ খানিকটা স্থিতিশীল ও শান্ত মনে হচ্ছে। 


৬। ক্ষমা করতে শিখুন

মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমিয়ে রাখবেন না। একটা সময় পর এই সমস্যাটি আপনাকে মানসিক চাপে ফেলতে পারে। মনে রাখবেন, যে কেউ ভুল করতে পারে—এমনকি আপনিও প্রায় সময় ভুল করেন। ভুল করা আমাদের জীবনের একটি অংশ! আর তাই সেই ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন এবং কেউ ভুল করলে তাকে ক্ষমা করে দিন। অযথা বিষয়টি মনের মধ্যে পুষে রাখবেন না!


 

৭। সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন

ছোট বেলায় আমরা সমাজ বইতে পড়েছি যে, মানুষ সামাজিক জীব আর মানুষ কখনো একা বসবাস করতে পারে না। বিষয়টি আবারও মনের মধ্যে গেঁথে নিন আর সেই মূলমন্ত্রটি নিজের জীবনের মধ্যে প্রতিফলিত করা শুরু করুন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব সবার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলে কখনই আপনি নিজেকে একা ভাববেন না। 


মনে রাখবেন একাকীত্ব আমাদের সবসময় মানসিক চাপের মধ্যে রাখে। সদা হাস্য-জ্বল সুন্দর একটি জীবন যাপন আমাদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখতে পারে। আসুন জেনে নেই যেভাবে আপনি সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনঃ 


  • অফিসে কলিগদের সাথে অবসর সময়ে কথা বলুন 
  • যে কেউ কোন সমস্যায় পড়লে নিজ থেকে তাকে সাহায্য করুন 
  • মাঝেমধ্যেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন 
  • প্রিয় মানুষটির নিয়মিত খোঁজ খবর রাখুন 
  • অনেক পুরোনো বন্ধুকেও মাঝেমধ্যে কল করুন বা মেসেজ করুন 
  • মাঝেমধ্যেই ভ্রমণে যেতে পারেন    


৮। নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান 

শারীরিক ভাবে আপনি যদি সুস্থ না হয়ে থাকেন তাহলে দেখা যাবে সামান্য একটু মানসিক চাপের কারণেই আপনি রীতিমত অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন। এজন্য একটি সুস্থ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা খুবই জরুরী। আপনার শরীর সব ধরণের পুষ্টি পাচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরণের খাবারই পরিমিত ভাবে গ্রহণ করুন। 


রিফাইন সুগার অর্থাৎ চিনি যতটা সম্ভব পরিহার করুন

কেননা চিনি শরীরের মধ্যে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হতে সাহায্য করে। চিনি ও চিনি দিয়ে তৈরি খাবার পরিহার করলে দেখবেন আপনি বেশ সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত ঘুমাতে পারছেন। মনে রাখবেন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিক সময়ে পরিমিত ঘুম খুবই জরুরী। 


নিয়মিত ব্যায়াম করুন

সু-স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল—প্রচলিত এই কথাটি একদমই সত্য। আর শারীরিক ভাবে ভালো ও ফিট থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন। হতে পারে সেটা প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি অথবা কোন জিমে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ব্যায়াম। 



৯। মদ্যপান, ধূমপান এবং মাদক থেকে দূরে থাকুন 

এই তিনটি জিনসই শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অনেকেই মানসিক চাপ অনুভব করলে ধূমপান করে থাকেন, তবে এই অভ্যাসটি আপনার ভালো তো করেই না বরং অনেক বেশী ক্ষতি করে ফেলে। 


মনে রাখবেন আপনার জীবনের সমস্যাগুলো কখনো মদ, সিগারেট অথবা মাদক সমাধান করে দিতে পারবে না। সাময়িক ভাবে আপনার মধ্যে হয়ত ভালো লাগার একটা অনুভূতি তৈরি হলেও এগুলোর ক্ষতিকারক দিকটিই অনেক বেশী। 


পরিশেষে যে কথাটি না বললেই নয়, সেটা হল স্ট্রেস অর্থাৎ ‘মানসিক চাপ’ শব্দটি অনেক সহজ মনে হলেও আমাদের জীবনে এই শব্দটির প্রভাব অনেক গুরুতর। শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ করে এটা আমাদের জীবনকে রীতিমত দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। মনে রাখবেন, আপনি কিন্তু চাইলেই মানসিক চাপ কমিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। 


উপরে বর্ণীত এই সামান্য কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমেই নিজের স্ট্রেসকে জীবন থেকে চিরতরে দূরে সরিয়ে দিতে পারেন এবং জীবনকে করে তুলতে পারেন অনেক সুন্দর ও সহজ। তবে হ্যাঁ! দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা আমাদের সবসময়েই থাকবে, তবে সেগুলো থেকে পালিয়ে নয় বরং সামনাসামনি হয়ে সমাধান করাই বুদ্ধিমানের কাজ।



ডা. আবিদা সুলতানা, (এমবিবিএস)
জেনারেল প্রাকটিসার, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিঃ এন্ড সিটি হাসপাতাল লিঃ
মেডিসিন, চর্মরোগ, বাত-ব্যাথা, শিশু ও গাইনী রোগ বিশেষজ্ঞ।
জেড এইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল, ঢাকা।


No comments

Powered by Blogger.