Adsterra

২০ লাখ টাকায় ডিসি এসি ল্যান্ডকে কিনেছি উচ্ছেদ করবে কে?

২০ লাখ টাকায় ডিসি এসি ল্যান্ডকে কিনেছি উচ্ছেদ করবে কে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla new

২০ লাখ টাকায় ডিসি এসি ল্যান্ডকে কিনেছি উচ্ছেদ করবে কে? কক্সবাজারে সরকারি জমি দখল করে ফরিদের দম্ভোক্তি


‘টাকা দিলে দুর্নীতিবাজ প্রশাসনকে কেনা যায়। আমিও এসিল্যান্ড ও ডিসিকে ২০ লাখ টাকায় কিনেছি। না হলে কি প্রশাসনের চোখের সামনে সরকারি জমি দখল করে ঘর নির্মাণ করা যায়? আদালতের উচ্ছেদ আদেশ থাকার পরও আমাকে উচ্ছেদ করছে না কেন? সব টাকার পাওয়ার বুঝলেন সাংবাদিক ভাইয়েরা।’


কক্সবাজার শহরের বাকখালী ব্রিজের পার্শ্ববর্তী পোনা মার্কেট এলাকায় সরকারি কোটি টাকা মূল্যের খাস জমি দখল করে ঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে গেলে সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে এসব কথা বলেছেন শহরের পেশকার পাড়ার ‘ভূমিদস্যু’খ্যাত ফরিদুল ইসলাম। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, সবকিছুতে নিউজ করে লাভ কী? আমি সবাইকে কিছু খরচ দিয়ে দেই তারপর চলে যান।


সরেজমিন দেখা গেছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় শহরের পোনা মার্কেট নামক স্থানে সরকারি খাস জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন ফরিদুল ইসলাম। এমনকি সড়কের নালা দখল করে ঘর নির্মাণ করছেন তিনি। দখল অব্যাহত রাখতে সম্প্রতি চিহ্নিত অপরাধী ও সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে পিকনিকের আয়োজন করেন তিনি। এ সময় ঘটনাস্থলে কক্সবাজারের কয়েক সাংবাদিক উপস্থিত হলে এসব কথা বলেন ফরিদ।


জনৈক ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের পক্ষে ডেপুটি কালেক্টর (রেভিনিউ) মনজুর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ফরিদের সরকারি খাস জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং পানি চলাচলের নালা বন্ধ করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশনা দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।


স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে একের পর এক জমি দখল করছে ভূমিদস্যু চক্রটি। দ্রুত নালা ও খাস জমি দখলমুক্ত করা না গেলে বেহাত হতে পারে কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি।


তথ্য মতে, ভূমিদস্যু ফরিদের বিরুদ্ধে এর আগেও নদী দখল, অবৈধ বালি উত্তোলন এবং ব্যক্তিগত জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। বারবার দখলদারি করে গেলেও আইনের আওতায় যেতে হয়নি তাকে। ফলে বেপরোয়া হয়ে দখলবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন ফরিদুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা।


সম্প্রতি পোনা মার্কেট এলাকায় প্রায় বিশ গন্ডা খাস জমি দখল করে বসতঘর নির্মাণ করেছেন। জমি দখলে রাখতে মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের ভাড়াটিয়া হিসাবে রেখেছেন।


সম্প্রতি সরকারি জমি দখলের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করতে গিয়ে আলোচনায় আসেন। নালা ও জমি দখল করতে গিয়ে হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে সরকারি খাস জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং পানি চলাচলের নালা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তার বিরুদ্ধে গত ১ এপ্রিল জেলা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দেন অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি।


এরই প্রেক্ষিতে ২৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের পক্ষে ডেপুটি কালেক্টর (রেভিনিউ) মনজুর আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ফরিদের সরকারি খাস জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং পানি চলাচল নালা বন্ধ করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্দেশনা দেন।


স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একবার দলবল নিয়ে এসিল্যান্ড ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও উচ্ছেদ না করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। এ বিষয়ে অভিযোগকারী আব্দুল খালেক চৌধুরী বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে ভূমিদস্যু ফরিদুল আলম সরকারি খাস জমিতে বসতঘর নির্মাণ করে জবরদখলের চেষ্টা করছে। এলজিইডি নির্মিত কালভার্ট সংলগ্ন পানি চলাচলের নালা বন্ধ করে ফেলছে। খাস জমি জবরদখলকারীর হাত থেকে রক্ষা করতে এবং উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসনে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ করতে এসেও রহস্যজনক কারণে করেনি। যার কারণে সরকারি জমি চিরতরে বেহাত হয়ে যাবে এবং পানি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়ে বর্ষা মৌসুমে আমাদের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। তাই সরকারি ও জনস্বার্থে উক্ত জমি দখলদারের হাত থেকে উদ্ধার করা জরুরি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভূমিদস্যু ফরিদ এখানে এসে প্রচার করে জেলা প্রশাসক ও এসিল্যান্ডকে বিপুল টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছি। কেউ উচ্ছেদ করতে আসবে না। এর আগেও জমি দখল করেছি। আমার কিছুই করতে পারেনি কেউ।


স্থানীয়রা জানান, গত ৮ জুন দখলকৃত সরকারি জমিতে সরকারি দলের নেতা ও চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে পিকনিক করেন ফরিদ। সেখানে আনন্দ উল্লাস করেন তারা। মূলত তাদের অবস্থান জানান দিতে এমনটি করেছেন ফরিদ ও তার সহযোগীরা।


জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী ঘুস লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ফরিদ নামে যে ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে তাকে সরকারি খাস জমি ছেড়ে নিজ উদ্যোগে সরে যেতে বলেছিলাম। যদি না গিয়ে থাকে তবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।


বিষয়টি নজরে আনা হলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, আমার নামে কে কী বলল তা নিয়ে আমি মন্তব্য করব না। যদি কেউ সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা করে তবে তা উচ্ছেদ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.