Adsterra

দুনিয়াতেই দেওয়া হয় জুলুমের শাস্তি

দুনিয়াতেই দেওয়া হয় জুলুমের শাস্তি, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news

যার যা প্রাপ্য অধিকার সেটা থেকে কাউকে বঞ্চিত করাই জুলুম। জুলুম করা অত্যন্ত ভয়াবহ অপরাধ। পরকালে এর পরিণাম হবে অত্যন্ত কঠিন। সাধারণত রাজা-বাদশা বা ক্ষমতাবানরা মানুষের ওপর জুলুম করে, মানুষকে মারধর করে। আপাতদৃষ্টিতে বেশিরভাগ মানুষ এটাকেই জুলুম মনে করে। আসলে এটাই শুধু জুলুম নয়, জুলুম নানাভাবে নানা উপায়ে হতে পারে।


জুলুম ঘরে-বাইরে সর্বত্র হতে পারে। স্বামী তার স্ত্রীর ওপর নানাভাবে জুলুম করে থাকে। যেমন : স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয় না, খোঁজ-খবর রাখে না, সামান্য কারণে মারধর করে। জুলুম শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবেই হতে পারে। যেমন : আকারণে স্ত্রীকে সন্দেহ করা, অন্যের সামনে খোঁচা দিয়ে কথা বলা ইত্যাদি। কেবল গায়ে হাত তুলাই জুলুমের সবটা নয়। এর বাইরে নানা ক্ষেত্রে নানাভাবে জুলুম হতে পারে।


সিন্ডিকেট করে ডিম, আলু, চিনি, পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বাড়ানো হলো। যারা সিন্ডিকেট করল তারা সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম করেছে। কথার দ্বারা মানুষকে হেনস্থা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করাও এক ধরনের জুলুম। এ ছাড়া আরও যারা বিভিন্ন কারণে জুলুমের শিকার হয় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা প্রায় সময়ই প্রতিবাদ করতে পারে না। সবার তো আর আইনের দারস্ত হওয়া, কোর্ট-কাচারি করা সম্ভব হয় না। পারিবারিক ক্ষেত্রে জুলুমের শিকার হয়ে অনেকে মান-সম্মানের ভয়ে চেপে যায়। তাই বলে যে বা যারা জুলুম করল তাদের কিন্তু মুক্তি নেই। পরকালে মহান আল্লাহ তাদের ধরবেন। কারণ আল্লাহর কাছে তার সব সৃষ্টি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। আল্লাহর সৃষ্টির ওপর জুলুম করার ন্যূনতম অধিকার কারও নেই। আল্লাহ সব চাইতে বড় ন্যায় বিচারক। তিনি জুলুম পছন্দ করেন না। কোরআন-হাদিসে অসংখ্য জায়গায় জুলুমকারীর নিকৃষ্ট পরিণামের কথা বলা হয়েছে। সে সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হলো। জুলুম সম্পর্কে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না। তাহলে (জাহান্নামের) আগুন তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সুরা হুদ ১১৩) লক্ষ্য করুন, জুলুম করা তো দূরের কথা, জালেমের সহযোগীও হওয়া যাবে না। আমাদের অনেকের মধ্যে দেখা যায়, নিজে সরাসরি জুলুম না করলেও যে জুলুম করে তাকে সহযোগিতা করে। এ সহযোগিতা বিভিন্নভাবে হতে পারে।


হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। ১. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। ২. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। ৩. মজলুমের দোয়া। মহান আল্লাহ তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি ৩৫৯৮)


অনেক সময় আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, অমুক তো দিনের পর দিন মানুষের ওপর জুলুম করেই যাচ্ছে। তার তো কিছু হচ্ছে না। হজরত রাসুল (সা.)-এর হাদিসেই এ প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপতিরোধ্য।’ (সহিহ বুখারি) বলা হয়ে থাকে, আল্লাহ ছাড় দেন। কিন্তু ছেড়ে দেন না। আর আল্লাহর ছাড় দেওয়াকে অনেকেই ছেড়ে দেওয়া ভেবে চরম ভুল করেন। গ্রামের বাড়িতে আপনার জমি আছে। যখনই বাড়ি যান দেখতে পান পাশের জমির মালিক একটু একটু করে আইল সরাচ্ছে। আপনার জমি দখল করে নিচ্ছে। আবার ভাইয়েরা তাদের বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন। এমন নজির ভুরি ভুরি আছে। এমন অন্যায়ভাবে সম্পত্তি দখলদারদের বিশ্ব নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দুঃসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুলুম করে অন্যের এক বিগত জমিনও আত্মসাৎ করে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিন তার গলায় পরিয়ে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি ৩১৯৮)


পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে মহান আল্লাহ জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালেমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা শুআরা ২২৭) পরকালে জালেমদের শাস্তি তো হবেই, ইহকালেও তাদের জন্য কোনো সুসংবাদ নেই। কারণ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি মহান আল্লাহ দুনিয়াতেও দিয়ে থাকেন এবং আখেরাতেও দেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি ২৫১১)


প্রাত্যহিক জীবনে প্রতিটি কাজকর্মে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। আমার দ্বারা যেন কেউ বিন্দুমাত্র জুলুমের শিকার না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকা। ক্ষমতা থাকলে তা যেন অত্যাচারের মাধ্যম না হয়ে ওঠে। আমরা যেন মানুষের উপকারের মাধ্যম হতে পারি, সেটা মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, আমাদের দ্বারা জুলুম হওযার আশাঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। এরপরও যদি অনাকাক্সিক্ষতভাবে কারও প্রতি জুলুম হয়ে যায়, কারও অধিকার হরণ হয়ে যায় তাহলে আমাদের উচিত হলো সঙ্গে সঙ্গে তার সে অধিকার পূরণ করে দেওয়া বা তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া।


No comments

Powered by Blogger.