Adsterra

সরকারি কলেজ ভবনে দলীয় কার্যালয় করার অভিযোগ সাবেক এমপি নাসিরের বিরুদ্ধে

সরকারি কলেজ ভবনে দলীয় কার্যালয় করার অভিযোগ সাবেক এমপি নাসিরের বিরুদ্ধে, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot

যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দীনের বিরুদ্ধে সরকারি শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজের একটি দ্বিতল ভবন দখল করে দলীয় কার্যালয় করার অভিযোগ উঠেছে। সংসদ সদস্য থাকাকালীন নাসির গত পাঁচ বছর ধরে ভবনটি সংসদ সদস্যের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করে আসছিলেন। বর্তমানে তিনি এটি তাঁর অনুসারীদের রাজনীতিক দলীয় কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করছেন।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক এই সংসদ সদস্যের ভায়রা এই ভবনটি পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নিলেও মূলত ব্যবহার করতেন নাসির উদ্দিন। ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে চুক্তিনামা লঙ্ঘন করে পুরো পাঁচ বছরের একটি টাকাও পরিশোধ করেননি তাঁরা। ভবনটি উদ্ধারে বারবার বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও ভবনটি বুঝে পায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলছেন, ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভবনটি বেদখল থাকাতে সেটি করতে পারছেন না। যে কারণে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নাসির উদ্দিন যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের একাদশ সংসদের সংসদ সদস্য ছিলেন।


আজ রোববার দুপুরে যশোরের ঝিকরগাছা পৌর শহরের মিতালি হল সড়ক সংলগ্ন ভবনটিতে দেখা যায় ভবনটির মেইন গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তিতরে বড় ব্যানারে লেখা ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঝিকরগাছা উপজেলা শাখা, অস্থায়ী কার্যালয়’। পাশাপাশি আরেকটি সাইনবোর্ডে লেখা ‘কমিউনিটি পুলিশিং বুথ (কার্যালয়) ঝিকরগাছা থানা, যশোর’। ভবনটির দ্বিতলাতে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ঝাপসাভাবে লেখা শহীদ মশিয়ুর রহমান কলেজের বিজ্ঞান ভবন। ভবনের দেয়ালে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা–কর্মীদের ছবি সম্মিলিত বিভিন্ন দিবসের ব্যানার। প্রতিটি ব্যানারেই সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিনের ছবিও রয়েছে।


দলীয় নেতা-কর্মী সূত্রে জানা যায়, এ ভবনের নিচতলায় তিনটি রুম রয়েছে। একটি ব্যবহার করেন সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন, অন্যটি ব্যবহার করেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা। অন্য আরেকটি রুমের সামনে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাইনবোর্ড থাকলেও সেটি সর্বদা বন্ধ পাওয়া যায়। ভবন ছাড়াও এখানে অনেক বড় খোলা জায়গা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সময়ে সভা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি কলেজের ভবন দখল করে নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্যের রাজনীতিক দলীয় কার্যালয় বানানোতে ক্ষুব্ধ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মী, স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষা অনুরাগীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবন উদ্ধারে এত দিন কোনো পদক্ষেপ না নিলেও বর্তমানে সরব হয়েছেন। চলতি বছরে তারা কয়েক দফা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় থানাতে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।


কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিকরগাছা মিতালি হল রোডের এই দ্বিতল ভবনটি ১৯৬৮ সালে নির্মাণ হয়। সেখানে ভবনসহ ক্যাম্পাস রয়েছে। সেটি এক সময় বিজ্ঞান ভবন ও ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীতে শহরের অন্যপ্রান্তে সরকারি এম এল মডেল হাই স্কুলের পাশে নতুন ভবন নির্মাণ হলে এই ভবনটি অকেজো হয়ে পড়ে। তবে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতারা এটি তাদের দখলে রাখে। পরে সেটি উদ্ধার হলেও পাঁচ বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভায়রা ব্যবসায়ী নুরুল আমিন দুদু পাঁচ বছরের জন্য মাসিক পাঁচ হাজার টাকার ভাড়ার চুক্তি করেন কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।


ভবনটি ব্যবহার সংক্রান্ত একটি চুক্তিনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে অন্য কাউকে ঘর হস্তান্তর করতে পারবে না বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ নিয়ম না মেনেই সাবেক সংসদ সদস্য ভবনটি দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।


চুক্তিনামাতে উল্লেখ করা হয়, ভাড়াটিয়া পরপর ৬ মাসের ভাড়া দিতে ব্যর্থ হলে ভাড়া প্রদান করেই তাকে ভবনটি ছেড়ে দিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী মোট ভাড়া তিন লক্ষ টাকা হলেও এখনো পর্যন্ত এমপি নাসির কোনো ভাড়া পরিশোধ করেননি।


ঝিকরগাছা সরকারি শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আলতাফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভবনটি লিখিত চুক্তির মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল আমিন দুদুর কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। তবে তিনি চুক্তি ভঙ্গ করে তার ভায়রার কাছে ব্যবহার করতে দেন। তিনি ভবনটি রাজনীতিক কার্যালয় করেছে। ভাড়া নেওয়া থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোনো ভাড়ার টাকা পরিশোধ করেনি। দখলকারীরা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। ভবনটিতে আমরা আইসিটি ট্রেনিং সেন্টার করতে চাই। কিন্তু করতে পারছি না ভবন বুঝে না পাওয়ার কারণে। ভবনটিতে অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা হয়। উদ্ধারে স্থানীয় ইউএনও ও থানাতে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পায়নি।’


ভবনটির ভাড়া নেওয়া নুরুল আমিন দুদু বলেন, ‘ভবনটি আমি ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাছ থেকে আমরা ভায়রা সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন তার কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করত। কিন্তু তিনি এবার নমিনেশন না পাওয়াতে বেশির ভাগ সময় ঢাকাতে থাকে। তার অফিস এখন তার অনুসারী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা দখলে রেখেছে। তারা ব্যবহার করেছে, ফলে তারাই ভাড়া দেবে; কিন্তু দেয়নি। সর্বশেষ চলতি মাসে কলেজ পক্ষকে জানিয়েছি ওই ভবন ব্যবহার করব না। কিন্তু সেলিম রেজা জোর করে দখলে রেখেছে। উদ্ধারের জন্য আমি স্থানীয় থানা ও ইউএনওকেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’


এ বিষয়ে জানতে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভবনটি কলেজের পরিত্যক্ত সম্পদ ছিল। মাদকের আখড়া ছিল। আমরা পরিষ্কার ও ২৫ লাখ টাকা খরচ করে ব্যবহার উপযোগী করেছি।’


তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমরা ভাড়া নিয়েছি। ভাড়া না দেওয়ার কোনো কারণ নেই। যেহেতু ২৫ লাখ টাকা খরচ করেছি। ভাড়া থেকে সেই টাকা কাটবে, এটাই চুক্তিতেই লেখা। তারা যদি না লেখে আমাদের তো কিছু করার নেই।’


তিনি অভিযোগ করেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষ এটা নিয়ে রাজনীতি করছেন একটি পক্ষের হয়ে। কলেজের অনেক সম্পত্তি বেদখল রয়েছে। সেগুলো আগে উদ্ধার করতে বলেন।’


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ণ চন্দ্র পাল বলেন, ‘ভবনটি উদ্ধারে কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মূল ভাড়াটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা এসিল্যান্ডকে তদন্ত করার নির্দেশনা দিয়েছি। তদন্ত শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.