Adsterra

‘প্রায়ই টাকা পাঠাইতো যাতে ওর মাকে কিছু মাছ কিনে দেই, এক গুলিতে সব শেষ‘

প্রায়ই টাকা পাঠাইতো যাতে ওর মাকে কিছু মাছ কিনে দেই, এক গুলিতে সব শেষ, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Trending News, Viral News, Top News, Hot News, bangla n

ঘরে খাবার নেই তাই খাবার জোগাতে বাধ্য হয়েই কাজে বের হয়েছিলেন ঠেলা গাড়ি শ্রমিক মিজানুর রহমান। কাজ শেষ করে বাজার নিয়ে বাসায় ফিরতে পারেননি তিনি। ঢাকায় চলমান কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বরগুনার মিজানুর রহমান। কর্মক্ষম স্বামীর মৃত্যুতে দুই অবুঝ ছেলে মেয়ে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছেন মিজানের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন। 


নিহত মিজানুর রহমান (৩০) বরগুনা সদর উপজেলার ৮ নম্বর ইউনিয়নের কালিরতবক গ্রামের মোঃ জাকির হোসেন দুলালের বড় ছেলে। প্রায় ১০ বছর আগে জীবিকার তাগিদে বরগুনা ছেড়ে কাজের উদ্দেশ্যে পিতার সঙ্গে ঢাকায় যান তিনি। বাবা ঠেলা গাড়ি শ্রমিক হওয়ার তার সঙ্গেই ঠেলা ঠেলতেন মিজান। এছাড়াও যখন যে কাজ পেতেন সে কাজই করতেন তিনি।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই প্রতিদিনের মতো মিজান স্ত্রী সন্তানকে বাসায় রেখে সকাল ৮টার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হন। কাজ শেষে বিকালের দিকে বাসায় ফেরার পথে মানিকনগর বিশ্বরোড এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই বরগুনা সদর উপজেলার ৮ নম্বর ইউনিয়নের কালিরতবক গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে এনে দাফন করেন। 


সরেজমিনে বরগুনায় মিজানের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, মিজান ও তার পিতার ভিটেবাড়ি না থাকায় দুই সন্তান নিয়ে মেঝো দেবরের ঘরে উঠেছেন মিজানের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন। পিতার মৃত্যুতে ৮ বছর বয়সি মেয়ে সামিয়া আক্তার পিংকি নির্বাক হয়ে থাকলেও ৩ বয়সি ছেলে সাজিদুল ইসলাম এখনো খুঁজে বেড়ায় তার বাবাকে। বড় ছেলেকে হারিয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন মা শাহিনুর বেগম। বাবা মোঃ জাকির হোসেন দুলাল ক্ষণে ক্ষণে ভেঙে পড়ছেন কান্নায়। এদিকে স্বামী মৃত্যুর শোক ভুলিয়ে দিচ্ছে দুই সন্তানের পেটের ক্ষুধা। তাই দেবরের বাড়িতেও নিজেদের খাবার রান্না করতে হচ্ছে তাকে। 


নিহত মিজানের ছোট চাচা সরোয়ার যুগান্তরকে বলেন, মিজান ছোট বেলা থেকেই খুব কর্মঠ ছিল। সংসারে অভাবে সে তার বাবার সঙ্গে ঢাকায় কাজ করতে গিয়েছিল। পরে বিয়ে হবার পরে স্ত্রীকেও ঢাকায় নিয়ে যায়। ঈদে কোরবানিতে বাড়ি আসলেও বসে থাকত না। ওর সন্তান আর মার জন্যেই সব সময় জীবন দিয়ে দিত। ঢাকায় বইসা আমারে প্রায়ই টাকা পাঠাইতো যাতে ওর মাকে কিছু মাছ কিনে দেই। এক গুলিতে সব শেষ।


নিহত মিজানের পিতা মোঃ জাকির হোসেন দুলাল বলেন, আমার বয়স হইছে তাই এখন আর বেশি কাজ করতে পারিনা। তাই মাঝে মাঝে ওর সঙ্গে কাজে যাই। ঘটনার দিনও আমার ওর সঙ্গে যাবার কথা ছিল। কিন্তু সকালে শরীর খারাপ লাগায় আমি যাই নাই। গেলে হয়তো ওরে বাঁচাইতে পারতাম। এহন আমার ছোট নাতিডা আমার কাছে খালি ওর বাপের কথা জিগায় আমি কি কমু অরে। কিভাবে ওগো মানুষ করমু।


স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন বলেন, মিজানের মৃত্যুতে আমি এখন দুই সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পরেছি। আমার মা মানুষের বাসায় কাজ করে আর বাবা পাগল তাই বাপের বাড়িতেও কোন থাকার জায়গা নেই। আর এখানেও আমাদের কোন জায়গা জমি নেই। এখন দেবরের বাসায় আছি কিন্তু কতক্ষন থাকবো। সরকারের কাছে আমার বিনীত আবেদন আমাকে সরকার যেন একটা থাকার জায়গা আর একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কইরা দেয় যাতে আমি দুই সন্তানকে মানুষ করতে পারি।

No comments

Powered by Blogger.