২৪ ঘণ্টায় যা ঘটল
সকাল ১০টা
সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মার্চ টু ঢাকা উপলক্ষে ঢাকায় বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শাহবাগ, টিএসসি এবং শহীদ মিনার এলাকায় প্রচুরসংখ্যক পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ২০০-৩০০ শিক্ষার্থী জড়ো হলে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী।
বেলা ১১টা
পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে চারদিকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এর মধ্যেই পূর্বঘোষিত সমাবেশ পালন করতে শহীদ মিনারে গিয়েও ফিরে আসেন। পরে সাড়ে ১১টার দিকে কারফিউ ভেঙে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ করেন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের শিক্ষকরা। এ সময় তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও এক দফার দাবিতে সংহতি সমাবেশ শেষ করেন।
সমাবেশ শেষে শিক্ষকরা মিছিল করতে চাইলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। মিছিল না করা এবং বাসায় ফিরে যাওয়ার শর্তে তাদের যেতে দেওয়া হয়। পুলিশও তাদের পেছন পেছন ছিল।
দুপুর ১২টা
শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত থাকলেও পুলিশের বাধার মুখে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় আটকা পড়েন। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ছিল ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে পুলিশ এবং বিজিবির সদস্যরা তাদের ওপর আক্রমণ করেন, গুলি ছোড়েন বলে জানান কয়েকজন আন্দোলনকারী। পরে ১২টার দিকে ঢামেক নতুন ভবনের ভেতর থেকে আরও শতাধিক ছাত্র-জনতা বেরিয়ে এলো। কেউ একজন চিৎকার দিয়ে বলল, ‘এইমাত্র খবর এলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হলো।’ সবাই তখন হুল্লোড় দিয়ে উঠল। এই জমায়েত, হুল্লোড় পরিণত হলো মিছিলে। ‘এইমাত্র খবর এলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, এইমাত্র খবর এলো, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেল।’ মুহুর্মুহু স্লোগানে পুরো কম্পাউন্ড প্রকম্পিত হলো। মিছিলটি জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে, জরুরি বিভাগের গেট হয়ে চলে গেল শহীদ মিনার পার হয়ে টিএসসির দিকে।
বেলা ১টা
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র-জনতার মিছিল এসে শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে। এ সময় পুলিশ তেমন কোনো বাধা দেয়নি।
বেলা ২টা
বেলা সোয়া ২টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটা মিছিল চানখাঁরপুল থেকে এলে উদ্যানের গেটে থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ হাত তুললেও আরও বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী ইটপাটকেল ছোড়ে। পরে পুলিশ গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ অন্তত ১৫টি গুলি ছোড়ে। আন্দোলনকারী ১৫-২০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে শাহবাগে নিরাপত্তা দিতে দেখা যায় সেনাবাহিনীকে।
বেলা ২টার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সেনা সদর দপ্তরে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বৈঠক করেন।
বিকেল ৩টা
বিকেল ৩টার দিকে খবর আসে সোমবার বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। এ সময় তার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তারা হেলিকপ্টারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা গণভবন থেকে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি সেই সুযোগ পাননি। এরপরই ছাত্র-জনতা বিজয় মিছিল শুরু করেন এবং গণভবনে ঢুকে যান। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর ধানম-িতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়।
বিকেল ৪টা
বিকেল ৪টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীতে ধানমন্ডির ৩/এ-তে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া ঢাকা জেলা কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।
বিকেল ৫টা
বিকেল ৫টার দিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুর চালান বিক্ষোভকারীরা। রাজধানীর ধানমন্ডির সুধা সদনেও আগুন দেয় তারা। পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর গণভবনে ঢুকে পড়েন অসংখ্য মানুষ। গণভবন থেকে নানা পণ্য নিয়ে যেতে দেখা গেছে তাদেরকে। একই চিত্র দেখা যায় সংসদ ভবনেও।
সাড়ে ৫টার দিকে পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবতরণ করে।
No comments