১২ বছরে পাপনের যত উদ্ভট মন্তব্য
আজ থেকে ঠিক ১২ বছর আগে, দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দায়িত্বভার হাতে পেয়েছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। তখন তিনি ছিলেন মনোনীত। পরের বছর ২০১৩ সালে মনোনীত থেকে নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে বিসিবিতে আসীন হন পাপন। চার বছরমেয়াদি এই পদে পরে ২০১৭ ও সবশেষ ২০২১ সালেও টানা তৃতীয়বারের মতো বসেন তিনি। যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী বছরের অক্টোবরে। তবে অভ্যুথানে বিগত সরকারের পতনের পর থেকে চলমান বদলের ধারায় দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে বিসিবি সভাপতি পাপনের সম্পর্কচ্ছেদ হলো।
আজ বুধবার বিসিবির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। ১২ বছরের শাসনামলে নানা উদ্ভট মন্তব্য করে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছিলেন পাপন। তৃতীয়বার সভাপতি হওয়ার আগে ২০২১ সালের আগস্টে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার একটা খারাপ দিক হলো বাংলাদেশ হারলে আমি নিতে পারি না। হারলে আমার মেজাজ খারাপ হয়। আমার বউ-বাচ্চারা কেউ আমার সামনে আসে না। আমার মতো আরও অনেকেই আছে যারা হার মেনে নিতে পারে না। এতটা খারাপ লাগে।’
২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাসখানেক আগে মিরপুরে বিসিবি কার্যালয়ে পাপন টি-টোয়েন্টি দল নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি বলে বসেন ‘সব সময় এটা আপনাদের বুঝতে হবে যে আমাদের লক্ষ্য পরের বিশ্বকাপ।’ ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবির পর অবশ্য সে বক্তব্য অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘নেক্সট বিশ্বকাপ, এটা কোথায় পেলেন? আমি বলিই নাই, বানান ক্যামনে?’
দেশের ক্রিকেট মহলে এমনকি মাশরাফী-সাকিব-তামিমদের কাছেও তিনি ‘ক্রিকেটপ্রেমী’ হিসেবে পরিচিত হলেও তার অধীনে ১২ বছরে কম বিতর্কের জন্ম হয়নি। এই বছর ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ার পর বিসিবির দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘ইচ্ছে করলেই বিসিবির পদ ছেড়ে দেওয়া যায় না’।
আরও পড়ুন - বন্যায় স্বাস্থ্য সমস্যা : করনীয়
এর আগে গত বছরের ২৭ নভেম্বর চলতি মেয়াদ শেষে বিসিবি সভাপতির দায়িত্বে আর থাকবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়ে নাজমুল হাসান বলেছিলেন, ‘আমি আর বেশি দিন নাই’!
জাতীয় দলের একাদশ পছন্দ না হওয়ায় তিনি একাধিকবার বলেছিলেন, ‘আমি তো কিছুই বুঝলাম না’ কিংবা ‘মানে কী আর বলবো’!
বিপিএল নিয়ে বেজায় গর্ব করতেন পাপন। ২০২২ সালের মার্চে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের কথাই শুনেছি, আইপিএল, বিগ ব্যাশ ও বিপিএল। অন্য লিগগুলোর কথা লোকে বলে না।’
অথচ বিপিএলের মাঠের ক্রিকেট, পেশাদারি, সম্প্রচার ইত্যাদি নিয়ে খোদ দেশের শীর্ষ ক্রিকেটার ও কোচরাই দিনের পর দিন নিন্দা করে যেতে বাধ্য হয়েছেন। পিচ ও মানের দিক থেকে প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট এ ক্রিকেটের শুনে আসা দুয়োধ্বনিও ১২ বছরে ঘোচাতে পারেননি সভাপতি পাপন।
উল্টো আম্পায়ারদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব ও ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে কলঙ্কিত হতে হয়েছে ঢাকার ক্রিকেটকে। ঘটেছে সাকিবের স্টাম্পে লাথি মারার মতো ঘটনা। মেয়াদ পূর্ণ না করে চলে যাওয়া কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে দ্বিতীয় দফায় দেশের কোচ করে নিয়ে আসার ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে ধরা হয় কিছু পরিচালকের কমিশন বাণিজ্যকে। একাদশ গঠন থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ব্যাপারেও অযাচিত অতিকথনের ব্যাপক দৃষ্টান্ত গড়েছেন তিনি।
No comments