Adsterra

শেখ সেলিম-নিপুণ কীসের এত সখ্য?

শেখ সেলিম-নিপুণ কীসের এত সখ্য, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news

তাদের নিয়ে আগেই শোনা যেত নানান কেচ্ছা। সবই হতো আড়ালে-আবডালে। গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুরের কমতি ছিল না। তবে এখন বেরিয়ে আসছে থলের বেড়াল। জানা যাচ্ছে, বর্ষীয়ান রাজনীতিক শেখ সেলিমের সঙ্গে নায়িকা নিপুণ আক্তারের রহস্যে মোড়া সম্পর্কের বিষয়। প্রশ্ন উঠেছে, তাদের মধ্যে কীসের এত সখ্য?


এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে ফিরে যেতে হবে এক যুগ পেছনে। ২০১২ সালে রাজধানীর অন্যতম অভিজাত এলাকা বনানীতে ‘টিউলিপ’ নামে একটি পার্লার খোলেন নিপুণ। স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সেটির উদ্বোধন করেন শেখ সেলিম! অনেকটা সময় ব্যয়ও করেন সেখানে।


রাজনীতিবিদদের সাধারণত পার্লারের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানের ফিতা কাটতে দেখা যায় না। সেখানে শেখ সেলিমের মতো একজন প্রভাবশালী রাজনীতিক কোন টানে নিপুণের পার্লার উদ্বোধনে গেলেন, এই প্রশ্ন ছিল তখন থেকেই। এরপরই ধীরে ধীরে শেখ সেলিম ও নিপুণের সখ্যতার বিষয়টি মানুষের মুখে মুখে চলে আসে।


ঢালিউডে কানাঘুষা, চিত্রনায়িকা নিপুণের পেছনে বড় কোনো শক্তি আছে। সেই বলে বলীয়ান হয়েই ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে জায়েদ খানের কাছে ভোটে হেরেও সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার দখলে নিয়েছিলেন এই নায়িকা। দায়িত্ব পালন করেন পুরো মেয়াদই।



ওই নির্বাচনে ১৩ ভোট কম পেয়ে হেরে যান নিপুণ। সেই হারকে চ্যালেঞ্জ করে বিজয়ী প্রার্থী জায়েদ খানের বিরুদ্ধে তিনি নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ এবং টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ তুলে নির্বাচনি আপিল বোর্ডে লিখিত অভিযোগ জানান। তার প্রেক্ষিতে এক অদৃশ্য শক্তির বলে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণা করে আপিল বোর্ড।


এই ঘটনা হাইকোর্ট হয়ে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। কিন্তু ওই যে অদৃশ্য শক্তি, তা বলেই উচ্চ আদালত থেকেও নিজের পক্ষে রায় নিয়ে আসেন নিপুণ। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনিই দায়িত্ব সামলান। পরে কানাঘুষা শোনা যায়, শেখ সেলিমের ইশারাতেই ভোটে হেরেও ক্ষমতা দখলে নিতে পেরেছিলেন নিপুণ। তাকে বিজয়ী করতে নাকি নির্বাচন কমিশনারকে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম।


এরপর চলতি বছরে অনুষ্ঠিত শিল্পী সমিতির নির্বাচনেও সাধারণ সম্পাদক পদে হেরেছেন নিপুণ আক্তার। এবার তিনি প্রাথমিক অবস্থায় বিজয়ী প্রার্থী অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজলকে ফুলের মালা পরিয়ে শুভকামনা জানালেও এক মাস পরেই নানা অভিযোগ তুলে রিট করেন হাইকোর্টে।


এবারও সেই অদৃশ্য ক্ষমতার বলে হাইকোর্ট ডিপজলের প্রার্থিতা বাতিল করেন। তার পদের উপর স্থগিতাদেশ দেন। তবে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন ডিপজলও। তিনি আপিল করেন উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে। এবার আর নিপুণের অদৃশ্য শক্তি কাজ করেনি। আপিল বোর্ডের রায় যায় ডিপজলের পক্ষে।


সে সময় একসময়ের ভয়ানক খল-অভিনেতা ডিপজলও গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, নিপুণের পেছনে বড় কোনো শক্তি আছে। সেই শক্তি যে শেখ সেলিম, তা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই সম্প্রতি মুখ খুলেছেন নিপুণের সঙ্গে এই রাজনীতিকের রহস্যময় সম্পর্ক নিয়ে।


নাম প্রকাশ না করে ২০২২ সালে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কমিশনার বলেন, ‘জীবনের হুমকি ছিল। যেকোনো সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে, এমন শঙ্কা ছিল।’


তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের একের পর এক ভয়ভীতি দেখিয়ে গালিগালাজ করা হয়। বলা হয় যে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। এমন লেভেল থেকে ফোন আসবে, ভাবতেই পারিনি। আমাদের একজনকে সেই সময় নিপুণকে জয়ী করাতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম সাহেব, তার মতো লোক। এটা আমাদের অবাক করেছিল।’


সে সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন পিরজাদা হারুন। তিনি জানান, ২০২২ সালের নির্বাচনে তার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, যা তাকে মানসিকভাবে এখনো আতঙ্কিত করে। নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী দেখাতে অনেক ওপর থেকে এক ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ একের পর এক ফোন করতে থাকেন।


হারুনের অভিযোগ, নিপুণ সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে সরাসরি প্রভাব খাটাতেন, নিয়ন্ত্রণ করতেন বলা যায়। কিন্তু আমি সরাসরি ‘না’ বলে দিই। পরবর্তী সময় মোবাইল ফোনে ভয়ও দেখানো হয়, এমনকি বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখানো হয়।’ উল্লেখ করে হারুন।



তিনি বলেন, ‘তখন একের পর এক ফোনে আমাকে ভয় দেখানো হয় যে তুলে নিয়ে যাবে। পরে একটা জায়গায় যেতে বলেন, যেখানে বড় অঙ্কের টাকা রাখা ছিল। যখন রাজি হলাম না, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হলো। সেটা চলে গেল কোর্টে। তখন নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমাকে বানিয়ে দেওয়া হলো অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। নানা কাণ্ডে আমাকে ছোট করা হলো, এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হলো।’


এদিকে, নায়িকার প্রাক্তন স্বামী সাজ্জাদ হোসেন অপু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শেখ সেলিমের সঙ্গে নিপুণের বিশেষ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেন। পাশাপাশি দাবি করেন, শেখ সেলিমের প্রভাব খাটিয়েই ডিভোর্সের সময় নিপুণ তার কাছ থেকে বিপুল স্বর্ণাংকারসহ কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেন।


এখানেই শেষ নয়, ১৯৭৫-এর প্রেক্ষাপট নিয়ে শেখ সেলিম সিনেমার গল্প লিখছিলেন বলে এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন নিপুণ। সেই সিনেমায় তার অভিনয় করার কথা ছিল। নায়িকা এও জানান, নাম ঠিক না হওয়া সেই সিনেমাতে নাকি শেখ সেলিমেরও অভিনয় করার কথা ছিল।


তবে সেই সিনেমার আর নির্মিত হবে কি না- তা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। কারণ, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অন্যান্য মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের মতো আত্মগোপনে শেখ সেলিমও। অন্তরালে চলে গেছেন তার অতি ঘনিষ্ঠ নিপুণ আক্তারও।


No comments

Powered by Blogger.