শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৬ হত্যা মামলা
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারা দেশে হত্যা মামলা করা অব্যাহত রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় গত রোববার রাত থেকে গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত রাজধানীসহ চার জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আলোচিত সাবেক মেয়র তাহসীন বাহার, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়াও হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে চার জেলায়।
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয় ৫ আগস্ট। এর আট দিন পর ১৩ আগস্ট প্রথম তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়। এরপর গতকাল পর্যন্ত ১৯টি হত্যা মামলার খবর পাওয়া গেল। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলাও করা হয়েছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় দুটি আবেদন করা হয়েছে। পুলিশ ও আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে আমাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকায় তিন মামলা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গতকাল ঢাকায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। মিরপুরে লিটন হাসান লালু ওরফে হাসান নামের একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান; সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান (নিখিল), ইলিয়াস মোল্লা, কামাল আহমেদ মজুমদার; আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমারসহ ১৪৮ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় কাঠমিস্ত্রি তারিক হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সালমান এফ রহমানকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ডা আবিদা সুলতানার স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক বই আসুন সুস্থ থাকি ও মানসিক স্বাস্থ্য
মিরপুর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল্লাহ কবির খান নিহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। মিরপুরের তিন সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, ইলিয়াস হোসেন মোল্লা, মাইনুল হোসেন খান (নিখিল) ছাড়াও ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খানকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ঢাকার বাইরে তিন মামলা
চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম নিহত হওয়ার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম, সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ ১০৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মাছ ব্যবসায়ী মো. মিলন হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আসাদুজ্জামান খান, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। জয়পুরহাটে কলেজছাত্র নজিবুল সরকার নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরও যত হত্যা মামলা
কুষ্টিয়া শহরে ইউসুফ শেখ নামের এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফসহ ৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই শহরে গামছা-লুঙ্গি বিক্রেতা বাবলু ফারাজি হত্যার ঘটনায় আসাদুজ্জামান খানসহ ১২৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
কুমিল্লার কোটবাড়ী নন্দনপুরে মাসুম মিয়া নামের একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তাঁর মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসীন বাহারসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। দাউদকান্দিতে শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন ও দিনমজুর বাবু নিহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের ৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দিনাজপুর শহরে কলেজশিক্ষার্থী রাহুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে হামলা ও এলোপাতাড়ি গুলিতে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম ও একরামুল করিম চৌধুরীসহ ৩৯ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজারজনকে।
দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি এ টি এম তুরাব হত্যার ঘটনায় আসাদুজ্জামান খান, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. সাদেক দস্তগীর কাউছার, উপকমিশনার অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সেন নিহতের ঘটনায় আসাদুজ্জামান খান, সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সুনামগঞ্জ-১ আসনের রঞ্জিত সরকার, মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
টাঙ্গাইলে স্কুলছাত্র মারুফ হত্যার ঘটনায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকসহ ৫৬ আওয়ামী লীগের নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ঢাকার সাভারে শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন (২৯) নিহত হওয়ার ঘটনায় সাভার থানায় সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের ৩২১ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।
হামলা-ভাঙচুরের মামলা
চট্টগ্রামে মিছিলে গুলি করে হত্যাচেষ্টা, ভাঙচুর ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীসহ ৭৩ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগের ৯৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ঝিনাইদহে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় ঝিনাইদহ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নায়েব আলী জোয়ারদার, ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপুসহ ৪৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে। নীলফামারীতে হামলা, ভাঙচুর, লুট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগে আওয়ামী লীগের ৪১ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
No comments