Adsterra

যশোরে পাঁচ তারকা হোটেলে আগুন, ১৮ লাশ উদ্ধার

যশোরে পাঁচ তারকা হোটেলে আগুন, ১৮ লাশ উদ্ধার, ঢাকা ভয়েস, Dhaka Voice, Today Trending News, Today Viral News, Top News, Hot News, bangla news

বিজয় মিছিলে বিক্ষুব্ধ জনতার একটি অংশ যশোরে পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর করতে যায়। প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারীরা হোটেলটির বেজমেন্টে ঢুকেই সিঁড়ি বেয়ে ১৪ তলা পর্যন্ত উঠে যায়। একপর্যায়ে নিচে থাকা বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজন যুবক পেট্রল দিয়ে আগুন দিতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে তারা কয়েকটি তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে দাউ দাউ করে পুরো ১৪ তলাই কয়েক মিনিটের মধ্যে জ্বলতে থাকে। 


এতে ওপরে থাকা বেশির ভাগ আন্দোলনকারীরা বের হতে পারেননি। ফলে আগুনের ধোয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আটকে থেকে তারা মারা গেছে। হোটেলের ভেতর প্রবেশ করা আন্দোলনকারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এই অঞ্চলের একমাত্র পাঁচ তারকা হোটেলটির মালিক যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। 


আজ সোমবার বিকেলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিজয়মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। এদিন বিকেল ৪টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে সাড়ে ৯টার দিকে। 


এই ঘটনায় রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন। আহত হয়েছেন অত্যন্ত ৩০ জন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। এখনো কয়েকটি তলা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আহতরে মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে সময় যতই গড়াচেছ মর্গে মৃতদেহের সংখ্যা যতই বাড়ছে।  


ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যশোরের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘কি দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে সেটা তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৮ জন মরদেহ উদ্ধার করেছি। উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। তবে তিনি আর কিছু বলতে চাননি।’ 


তবে নাম না প্রকাশে এক কর্মকর্তা বলেন, হোটেলের ভেতরে অ্যালকোহল পদার্থ বেশি থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। মনে হচ্ছে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়েছে।’ 


হোটেলে কত জন আটকা পড়েছে বা কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানার জন্যে হোটেলের মালিক শাহীন চাকলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।


সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে যেয়ো দেখা যায়, নিহত ও আহতদের স্বজদের আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে হাসপাতাল চত্বর। আন্দোলনে এসে অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। ফলে সেই নিখোঁজদের স্বজনেরা হাসপাতাল ও মর্গের সামনে ভিড় করতে দেখা গেছে। তবে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ বা প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি। আন্দোলনরতকারীদের অনেকেই এখন হাসপাতালে থাকতে দেখা গেছে। 


তারা মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর, হোটেল থেকে মরদেহ হাসপাতালে আনার সড়ক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। সবাই হাতেই বাঁশ, রড ও দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। মরদেহ শনাক্ত হলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন নিহতের স্বজনেরা। 


মর্গের সামনে আহাজারি করতে দেখা যায় খড়িক এলাকার এক নারী (৪৫)। হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে তার ভাইপো রাতুল (১৭)। ওই নারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে আমিও আন্দোলনে এসেছিলাম। পরে বিকেলে বিজয় মিছিলটি জাবির হোটেলের সামনে দিকে যেতেই অনেক ছেলে-মেয়েরা হোটেলের মধ্যে প্রবেশ করে। আন্দোলনকারীদের ওই পোতের মধ্যে দিয়ে আমার মেয়েও ঢুকে যায়। পরে আগুন লাগলে আমার মেয়েরে খুঁজতে আমিও ভেতরে প্রবেশ করি। প্রবেশ করে দেখি হোটেলে কয়েক যুবক পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। তাদের অনুরোধ করলাম এই ক্ষতি করিস নে বাপ! এর পরে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে হোটেল। পরে আহত অবস্থায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করি। পরে শুনি আমার ভাইপো মারা গেছে।’ 


যশোর সিটি কলেজ থেকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও হোটেলে প্রবেশ করা মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে কিছু উগ্র ছেলেরা ছিল। বিজয় মিছিলে তারা জাবির হোটেলে ঢুকে পরে। তাদের সঙ্গে অনেক সাধারণ আন্দোলনকারীরাও ঢুকে পরে। তারা জাবির হোটেলে মূলত দেখতে গিয়েছিল। সিঁড়িতে উঠতে উঠতে তারা হোটেলের বিভিন্ন তলাতে উঠে যায়।’


নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা আজ সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত হাসপাতাল চত্বরে খোঁজাখুঁজি করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ মর্গের সামনে বসে নিজ সন্তান বা স্বজনের খোঁজাখুঁজি করছেন। এমনই একজন শহরতলী সুজলপুরের মফিজুর রহমান। আন্দোলনে এসে তার ভাইপো আল আমিনকে পাচ্ছেন না। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার আল আমিনকে কেউ দেখেছেন। সে রাজ্জাক কলেজে পড়ে। কেন যে সে আন্দোলনে এসেছিলো। বিকেল থেকে তার ফোনে ফোন দিচিছ, রিং যাচ্ছে অথচ ফোন ধরছে না।’ 


সার্বিক বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কেউ কল ধরেননি।

No comments

Powered by Blogger.